ঈদে ভাঙ্গনে সর্বহারা মানুষের পাশে কেউ নেই

279

নিউজ৩৯ঃসাত রাত সাত দিন বসে ছিলাম বড় সড়কের পাড়ে।ওই সড়ক শেষ হতো গিয়ে বাড়ির দখিন ধারে,ওই নদী শুরু হতো আরো সাতটি গ্রাম পরে,আমরা বসেছিলাম সাত রাত সাত দিন ধরে,সাত রাত সাত দিন বড় সড়কের পাড়ে,…সাত রাত সাত দিন ক্ষুধা পেটে অনাহারে,…ভাঙ্গা ঘর, দক্ষিন দাওয়া ডাকেনি আমারেআমরা শহরে এলাম পাকা রাস্তা ধরে ধরে,…..বানের পানি নিয়ে গেছে ধুয়ে মুছে,….নদীর ভাঙ্গন মুছে দিয়েছে অভিধানদুঃস্বপ্নের মতো জীবন মরণের ব্যাবধান সবদেখতে দেখতে বিলীন হয়ে গেছে আমাদের বৈভব,…আজ নিঃস্ব হয়ে এভাবেই রাস্তার পাশে দিন কাটাচ্ছে দোহার নবাবগঞ্জবাসী। দেশ আজ ভূলে গেছে তাদের কথা। আল্লাহ ছাড়া তাদের যেন আজ আর কেউ নেই। অথচ মানুষ মানুষের জন্য। আর্থসামাজিক অবস্থায় গোটা দোহারই বেশ উন্নত, এমন ধারণা অনেকের। কিন্তু ভালোর মাঝেও যে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে কিছু মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়, এটাও সত্যি। দোহারের নয়াবাড়ী, মাহমুদপুর ও নারিশা ইউনিয়নের প্রায় পাঁচ হাজার পরিবারের মাঝে ঈদের আনন্দ নেই। সম্প্রতি পদ্মার ভাঙনে বসতভিটে হারিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে তারা। ঈদের আনন্দ তাদের স্পর্শ করছে না। অনেকেরই দিন কাটছে কান্না আর হাহাকারে।

অন্য খবর  নবাবগঞ্জে তাঁত বস্ত্র ও কুটির শিল্প মেলার উদ্ভোদন

সরেজমিন দেখা যায়, পদ্মাপারের কয়েক শ পরিবারের ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে নদীতে। তাদের কেউ রাস্তায়, আবার কেউ অন্যের জমি ভাড়ায়, কেউবা অস্থায়ীভাবে টিনের চালা তুলে বাস করছে। কাল সোমবারে ঈদ, কিন্তু তাদের ঘরবাড়ি, ফসলি জমি কিছুই নেই। চোখে মুখে শুধুই হতাশা।নদীভাঙনে সব হারিয়ে অনেক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে খোলা মাঠে।এবার বর্ষা মৌসুমে দোহারের নারিশা ইউনিয়নের রানীপুর, বেলতলা, মধুর চর ও পশ্চিম চর এলাকার প্রায় তিন হাজার পরিবার ভাঙনের কবলে পড়ে। এ ছাড়া মাহমুদপুর, বিলাশপুর ও নয়াবাড়ী ইউনিয়নের দুই হাজার পরিবার ভিটেমাটি হারিয়েছে। বাহ্রাঘাট, ধোয়াইর, নয়াডাঙ্গী, দেওয়ান গ্রাম, চর বিলাশপুর, কুলছুরি, রাধানগর গ্রামে বেশির ভাগ পরিবারই ছিল দিনমজুর। রানীপুর এলাকার সামসু মিয়া (৬০) বলেন, ‘বাবা, আমাগো আর ঈদ নাই। সব আনন্দো দুয়ে মুছে পদ্মায় নিয়ে গেছে। গায়ে খাইডা আর জানডা চলে না। কেউ আমাগো খবরও নিল না।’ পশ্চিম চরের রওশনারা বেগম বলেন, ‘প্রতিবছর ঈদে বাচ্চাগো নিয়ে কত আনন্দ করতাম। নদীর বাঙ্গন সব মাটি করে দিছে। আল্লায় যুদি কোনো দিন বালোবাবে ঈদ করতে দেয় সেদিন করুম।’ সরকারি কোনো সাহায্য-সহযোগিতাও পায়নি বলে জানান তিনি।তবে এ ব্যাপারে নিয়মিত আন্দোলন করে আসছে – দোহার নবাবগঞ্জ সোস্যাল মুভমেন্ট। সামনে আরো কিছু কর্মসূচী আসছে। নিউজ৩৯ কে এ ব্যাপারে এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত তারেক রাজীব বলেন, আমরা সরকারের সুদৃষ্টি চাই। বাঁধ নির্মান করতে হবে। তবে তারও আগে আক্রান্ত জনগণের মুখে হাসি ফোটাতে তাদের পূনর্বাসন সহ নগদ অর্থ সহায়তা দিয়ে স্বচ্ছল করতে হবে। আমাদের এই আন্দোলন আজ দেশের বাইরেও  সম্প্রসারিত হচ্ছে। আর এই ঈদে আমরা তরুণেরা দোহার নবাবগঞ্জ সীস্যাল মুভমেণ্ট যার যার স্ব-উদ্যোগে ঈদ আনন্দ এদের সাথে ভাগ করে নিব। দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল করিম ভূঁইয়া বলেন, সরকারি কোনো বরাদ্দ না থাকায় ঈদের আগে পদ্মার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে কোনো সহায়তা করা যায়নি। তবে সরকার শিগগির তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেবে।  

আপনার মতামত দিন