শিপন মোল্লাঃ
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী, বিএনপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য এবং পরবর্তীতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ -সভাপতি ও ঢাকা জেলার বিএনপির সভাপতি, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা নিঃসন্দেহে একজন বড় মাপের দেশ বরেণ্য ব্যাক্তিত্ব। দেশ পরিচালনায় জনপ্রতিনিধি হিসাবে তার অভিজ্ঞতা ব্যাপক। আপাদ্মস্তক সম্ভ্রান্ত, প্রভাবশালী একজন রাজনৈতিক নেতা হুদা ভাই। তাকে নিয়ে কোন মূল্যায়ন করার সামর্থ্য আমার নেই, সেইটা শোভাও পায়না। হয়তো রাজনীতিতে অনেক হিসাব নিকাশ থাকে। তাই কোন প্ল্যানে কোন রাজনীতির গেম তিনি খেলছেন সেইটা হুদা ভাই-ই ভাল জানেন আর আল্লাহ ভালো জানেন তার মনে কি আছে। বর্তমানে তিনি বিএনপির রাজনীতি থেকে দূরে আছেন এবং নিজের দল তৃণমুল বিএনপি এবং রাজনৈতিক জোট বিএনএফ নিয়ে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। আমি তার দীর্ঘ আয়ু ও সুস্থতা কামনা করি।
শনিবার তার মেয়ের বিয়েতে ঢাকা জেলার বিএনপির সিনিয়র নেত্রীবৃন্দ ও দোহারের সর্ব স্তরের বিএনপির নেতা কর্মী উপস্থিত ছিলেন। এই বিষয়টা নিয়ে এলাকায় বেশ আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে, যার ব্যাপ্তি হয়েছে ফেসবুকেও। অভিযোগ আছে হুদা ভাই বিএনপিকে থেকে চলে যাওয়ার পর দোহারের বিএনপির নেতা কর্মীরা এখনো তাদের সঠিক একজন রাজনৈতিক অভিভাবক খুজে পায়নি ।
এমন অবস্থায় দলের মধ্যে বিভিন্ন কোন্দল, দলাদলি আর গ্রুপিং হয়ে জাতীয়তাবাদী দল চরম এলোমেলো হয়ে আছে। কর্মীদের মাঝেও বিশ্বাস আর অবিশ্বাস থাকাতে; দোহারের বিএনপির রাজনীতির কোন কর্মকাণ্ডই নেই বললেই চলে। দোহারে বিএনপির বর্তমানে অনেক ইউনিটি এর কমিটিও নেই। যেসব কমিটি আছে তারাও মুখ থুবড়ে পরে আছে । দলের পক্ষে কার্যকারী কোন কর্মকাণ্ড চালাতে পারতেছে না। সবচেয়ে অবাক করার ব্যাপার হয়ছে দোহার বিএনপির বর্তমানে একটা পার্টি অফিস বা দলীয় কার্যালয় নেই। এই ব্যাপারে মনে হয় পার্টির কোন নেতার কোন গর্জও নেই, প্রয়োজনও আছে বলেও মনে হয় মনে করে না।
কিন্ত হুদা ভাইয়ের মেয়ের বিয়েতে বিএনপির সকল স্তরের নেতা কর্মীদের উপস্থিতিতে এইটা প্রমাণ হয়ে গেছে যে হুদা ভাই এখনো দোহার বিএনপির উপর প্রভাব রাখেন। এখনো দলের উপর তার প্রচ্ছন্ন প্রভাব রয়েছে; সে দলে থাক বা না থাক।
ভাবতে অবাক লাগে, কি স্যালুকাস! যেখানে বিএনপির দোহার নবাবগঞ্জের পাঁচজন নেতা কর্মী কোন সভা-সমাবেশে একত্রিত হতে পারে না তারাই কিনা গত শনিবার সবাই এক সাথে হয়েছে হুদা ভাইয়ের এক ডাকে। আমি মনে করি এতে গতকালই দোহারে বিএনপির বড় পরাজয় হয়েছে। যতোই তার বিরুদ্ধে কেউ কেউ হুম্বি-তম্বী করুক না কেন আদতে আসলে সবাই এখনো হুদা ভাইর লোকই হয়ে আছে। হয়তো এখনো শতভাগ বিএনপি হতে পারেনি। হয়তো এর মধ্যে কেউ কেউ আছেন আলাদা কিন্ত তাদের সংখ্যা খুব সামান্য।
আওয়ামীলীগের কোন দায়িত্বশীল নেতার কাছ থেকে আমার নেত্রী ও দলের বিরুদ্ধে মন্দ শুনবো সেইটাই স্বাভাবিক কিন্ত একসময় যার কাছ থেকে যেই দলের আদর্শের দীক্ষা নিয়েছি , সেই আদর্শের ব্যাপারে বিশ্বাস বড় করে মনে গেঁথে নিয়েছি সেই তার কাছ থেকে নিজ দল ও নেত্রীর সমালোচনা মন্দ শুনতে ভাললাগেনি ,কষ্ট পেয়েছি। সেই কষ্ট কি এই নেতাদের একটুও লাগেনি ?
২০১৫ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারি ব্যাঃ নাজমুল হুদা প্রেসক্লাবে বলেন, খালেদা আত্মাহুতি দিলেও আলোচনার দরকার নেই ।
২০১৫ সালের ৮ই জুন নাজমুল হুদা বলেন, “বিএনপি যে নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে তার দলের শীর্ষ নেতাদের আচরণেই তা স্পষ্ট।”
২০১৫ সালের ১২ই ডিসেম্বর নাজমুল হুদা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার নেতাকর্মীকে সাক্ষী রেখে বলতে চাই- সংলাপের কোনো প্রয়োজন নাই। আলোচনার কোনো প্রয়োজন নাই। আপনি একাই দিতে পারেন, এই দেশের সকল সমস্যার সফল সমাধান। আপনি একক সিদ্ধান্ত দেবেন এবং আপনিই একক কৃতিত্ব নেবেন। এই কৃতিত্ব শেয়ার করার মতো দ্বিতীয় কোনো যোগ্য ব্যক্তি নাই।”
২০১৬ সালের ১৩ই জুন নাজমুল হুদা বলেন, “আজ তারা (বিএনপি) বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়। ইসরায়েল ও মোসাদের সঙ্গে বৈঠক করে সরকার পতনের চক্রান্ত করছে। এজন্য যদি আমরা ১৪ দলীয় জোটকে শক্তিশালী করি, তবে প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করা হবে।”
২০১৬ সালের ২৩ই নভেম্বর নাজমুল হুদা বলেন, প্রস্তাব মেনে নির্বাচন হলে শেখ হাসিনা ফের প্রধানমন্ত্রী।
আমাদের সাথে কি ব্যাক্তি নাজমুল হুদার পরিচয় আগে, না রাজনৈতিক হুদার পরিচয় আগে? আমি নিশ্চিত, হুদা ভাইয়ের সাথে আন্তরিকতার এই কারণ ছিল, তিনি জাতীয়তাবাদী রাজনীতির অন্যতম পুরোধা । আর এই কারণেই তার সাথে দোহারবাসীর যোগাযোগ বা সম্পর্ক। এখন বলতে ইচ্ছ্বে হয়, গতকাল যদি হুদা ভাইয়ের মেয়ের বিয়ের দাওয়াতে একজনও বিএনপির নেতা কর্মীরা না যেতেন তাহলে কি হতো? অবশ্যই এই ব্যাপারটা হুদা ভাইকে ভাবিত করতো। তিনিও কষ্ট পেতেন যে তার রাজনীতির সহ কর্মীরা তার আদরের মেয়ের বিয়েতে একজনও নেই। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে বলে হয়তো এ কারনে তার পূর্বের রাজনৈতিক দল এবং দলের ব্যাপারে মন্তব্য করতে তিনি সতর্ক থাকতেন। তারও অনুধাবন হয়ে যেতো যে, দোহারের মাটি আসলে জিয়ার ঘাঁটি। বিএনপির ক্ষতি করে বিএনপির মানুষকে পাশে পাওয়া যাবে না।
এই সব নেতারা হুদা ভাইকে এই ব্যাপারটা উপলুদ্ধি করার সুযোগ হাত ছাড়া করে বরং তারাই হুদা ভাইর কাছে ধরা দিলেন। আর হুদা ভাইও প্রমান করে দিলেন তিনিই দোহারের কিং । আবার যখন সে তুড়ি দিবে, সবাই তার কাছে গিয়ে – জি জাঁহাপনা করে লুটিয়ে পড়বে। এতে এটাই প্রমান হলো আমাদের নেতাদের দলের প্রতি কমিটম্যান শতভাগ মজবুত না।
তবে হুদা ভাইর তারিফ করতেই হয় সে শুধু দোহারের বিএনপিকে একই সুতায় গেঁথে ছিলেন। স্থানীয় ভাবে দোহার-নবাবগঞ্জে তিনি তার যোগ্য উত্তরসূরী না তৈরি করলেও, বিএনপির জন্যে ছিলেন তিনি কারিগর আজকের মীর্জা আব্বাস, আমানউল্লাহ্ আমান ভাই, তৈমুর আলম খন্দকার এরকম অনেক নেতার উঠে আসার পিছনে এই নেতার অবদান।
(শিপন মোল্লা; সাবেক সভাপতি জয়পাড়া ইউনিয়ন ছাত্রদল। বর্তমানে বিদেশে প্রবাসী )
![](https://news39.net/wp-content/uploads/2024/06/rashed-chokder-adha24-min.jpg)
![](https://news39.net/wp-content/uploads/2023/08/protiva-coaching-ad-primary-teacher-2023-min.jpg)