পাহাড়ে মিশ্র ফলের বাগান করে তাক লাগিয়েছেন নীলকান্ত চাকমা

10
পাহাড়ে মিশ্র ফলের বাগান করে তাক লাগিয়েছেন নীলকান্ত চাকমা

যত দূর চোখ যাবে উঁচু উঁচু পাহাড়। এসব পাহাড়ে রয়েছে সেগুন বাগান। এর মধ্যে ১৬ একর জায়গায় রোপণ করা হয়েছে আম, লিচু, বারোমাসি কাঁঠাল, ড্রাগন, মাল্টা, কমলা, কাজু বাদাম, কফিসহ নানান গাছ। পাহাড়ে এমন মিশ্র ফল গাছ রোপণ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন নীলকান্ত চাকমা। 

রাঙামাটি সদর উপজেলার বালুখালী ইউনিয়নে বসন্ত মোন পাড়ার পাহাড়ে এসব ফল গাছ রোপণ করেছেন নীলকান্ত চাকমা। বিভিন্ন মৌসুমে ফল বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন তিনি। চলতি মৌসুমে শুধু বরই বিক্রি করে পেয়েছেন ৫ লাখ টাকা।

রাঙামাটি শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে বসন্ত মোন পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, বড় পাহাড়ের মাঝে খামার ঘর নির্মাণ করে সেখান থেকে মিশ্র ফল বাগানের পরিচর্যার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন নীলকান্ত। তাঁর এ কাজে সহায়তা করছেন উচ্চ শিক্ষিত দুই ছেলে। বড় ছেলে শুভাশীষ চাকমা কৃষি ডিপ্লোমা শেষ করে বাবাকে সহায়তা করছেন। পাহাড়ের প্রায় ১ হাজার ফুট নিচ থেকে জেনারেটরের মাধ্যমে বাগানে পানি সেচের ব্যবস্থা করেছেন। বাদুড় তাড়ানোর জন্য সোলারের মাধ্যমে রাতে করেছেন আলোর ব্যবস্থা।

অন্য খবর  অবৈধ মজুত রুখতে নতুন আইন পাস, না মানলে যাবজ্জীবন

মিশ্র ফল বাগানে প্রায় ৬ একর পাহাড়ে করেছেন বল সুন্দরী, বাউকুল, কাশ্মীরি কুল, ভারত সুন্দরী, আপেল কুলসহ কয়েক প্রজাতির বরই চাষ। প্রত্যকটি গাছে বরই ধরেছে। বরইয়ে ভারে নুয়ে পড়েছে গাছের ডালপালা। এগুলো আকারে যেমন বড় হয়েছে তেমনি স্বাদেও বেশ অতুলনীয়।

নীলকান্ত চাকমা বলেন, ‘এ বছর শুধু বরই বিক্রি করে ৫ লাখ টাকা পেয়েছি। অবশিষ্টগুলো বিক্রি করলে আরও লাখ দেড় লাখ টাকা পাব।’

নীলকান্ত চাকমা বলেন, ‘প্রায় ১০-১২ বছর আগে আমি জুমচাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতাম। নিজ পাহাড়ে সেগুন বাগানও করেছি। কিন্তু জুমচাষ ও সেগুন বাগান থেকে লাভবান না হওয়ায় জীবিকা পরিবর্তন করে তার ১৬ একর পাহাড়ের জমিতে লিচু, আম, কাঁঠাল, কপি, বরই, মাল্টা, ড্রাগনসহ মিশ্র ফল বাগান চাষ শুরু করি। তিন চার বছরের মাথায় ফলন পেতে শুরু করি। গত বছর আম ও লিচু বিক্রি করে প্রায় ১০ লাখ টাকা আয় করেছি।’

‘আমার এ কাজে দুই ছেলে সহায়তা করছে। দুজনই লেখাপড়া শেষ করেছেন কিন্তু চাকরি পায়নি। চাকরি না পাওয়ায় তারা বাগানে মনোযোগী হয়েছে।’ যুক্ত করেন নীলকান্ত চাকমা।

অন্য খবর  দোহারের মো. আবদুল মান্নান জনতা ব্যাংকের নতুন মহাব্যবস্থাপক

নীলকন্ত চাকমার ছেলে শুভাশীষ চাকমা বলেন, ‘রাঙামাটি কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট থেকে ৪ বছরের ডিপ্লোমা পাস করেছি। পরে কিছুদিন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা চাকরি করেছি। বেতন কম হওয়াতে সে চাকরি ছেড়ে দিই। সরকারি চাকরিতে চেষ্টা করেছি, কিন্তু পাইনি। চাকরির আশায় না থেকে বাবাকে কৃষি কাজে সাহায্য করছি।’ বালুখালী ইউনিয়নে দায়িত্বরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা দেবাশীষ দেওয়ান বলেন, ‘নীলকান্ত চাকমা কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণ পেয়েছে। তার ছেলেও একজন কৃষিবিদ। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সার, বীজ, প্রশিক্ষণ দিয়ে যতটুকু পেরেছি সহায়তা করেছি। তার এমন সফলতায় এলাকায় পরিচিতি পেয়েছেন আদর্শ বাগানী হিসেবে।’

রাঙামাটি সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘কৃষি উদ্যোক্তা পেলে আমরা সহায়তা করে যাচ্ছি। নীলকান্ত একজন আদর্শ কৃষক। তার মতো কৃষি উদ্যোক্তাদের উপজেলা কৃষি অফিস সব সময় সহায়তা করে যাচ্ছে।

আপনার মতামত দিন