মহা আতংকে দোহার পৌরবাসী

187

নিউজ৩৯♦ রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ৪০ কি.মি. দূরে দোহার পৌরসভা। এর জনসংখ্যা এক লাখের মতো। পৌরসভার আয়তন ২১.১২ বর্গ কি.মি.। সবুজ শ্যামলের সমারোহে ঘেরা এক শান্তির নীড়। প্রবাসী অর্থের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যেও বেশ স্বচ্ছল পৌর এলাকার বাসিন্দারা। সম্প্রতি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে ইউটিআইডিপি প্রকল্পের আওতায় দোহার পৌরসভা এলাকার বসতবাড়ি ও ফসলী জমিকে গ্রাস করে মহাপরিকল্পনা (মাস্টার প্ল্যান) বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ পরিকল্পনার আওতায় বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের লক্ষ্যে গণ জরিপ পরিচালনা করা হচ্ছে। আর সরকারের এ মহাপরিকল্পনার কারণে পৌরবাসীর মধ্যে মহাআতংক নেমে এসেছে। পৌরবাসীর দাবি, এ পরিকল্পনা বন্ধ না করলে শত শত পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পথে নামবে অনেকে।

এ বিষয়ে জনগণের মতামত গ্রহণে দোহার পৌরসভায় চলতি বছরের ১৫ মার্চ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত মানচিত্র প্রদর্শন করা হয়। যা দেখে পৌরবাসীর মাঝে আতংক ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দোহার পৌর এলাকার ভেতর কোনো পরিত্যক্ত বিল বা সরকারি খাসজমি নেই বললেই চলে। ঘনবসতিপূর্ণ এ এলাকার মানুষের অর্জিত বা পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তিতে কয়েকশ বছরের পুরনো বাসিন্দারা বসবাস করে আসছে। ভিটেবাড়ির পাশাপাশি কিছু ফসলী জমি থাকলেও তা খুব কম। মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের নামে যদি এসব জমি অধিগ্রহণ করা হয় তাহলে পৌরবাসীর শেষ সম্বলটুকুও হারিয়ে যাবে। তাই এ মহাপরিকল্পনা বাতিলের দাবিতে পৌর এলাকার বসিন্দারা আন্দোলন শুরু করেছে। নাগরিক সমাজের ব্যানারে বেশ কিছুদিন ধরে চলছে এ আন্দোলন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় দোহার পৌর এলাকায় শত শত একর জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে স্টেডিয়াম, শিশু পার্ক, মেডিকেল কলেজ, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরু কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ার ঘোষণা দিয়েছে; যা এলাকার মানুষের রুটি-রুজি ও বসবাসের ওপর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের গত পাঁচ বছরের শেষের দিকে সাবেক এক প্রতিমন্ত্রী এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ক্রীড়ানক হিসেবে কাজ করেছেন বলে এলাকাবাসী জানান। তাই এ মহাপরিকল্পনা প্রতিহত করতে ফুঁসে উঠেছে এলাকার সাধারণ মানুষ।

অন্য খবর  শিক্ষার মান উন্নয়নে শিক্ষকদের এগিয়ে আসতে হবেঃ সালমা ইসলাম

দোহার পৌরসভায় ঘুরে দেখা যায়, পৌর এলাকার ঘোনা, কাটাখালি, দোহারপুরী, বানাঘাটা, নুরপুর, মাঝিবাড়ি, বটিয়া, ইউসুফপুর, রসুলপুর ও লস্করকান্দাসহ বেশির ভাগ এলাকার বসতবাড়ি ও ফসলী জমি মহাপরিকল্পনার আওতায় পড়েছে। যেখানে কয়েকশ বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য লালন করে গড়ে উঠেছে বসতি, কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ি ও দালানকোঠা। দোহারবাসীর চাহিদা পূরণে নানা শাকসবজি ও ফসলের উৎপাদন হয়ে থাকে পৌর এলাকার ফসলী জমিতে। সবজিভাণ্ডার বলে খ্যাত দোহার পৌর এলাকার বেগুন, কাঁচামরিচ, শসা, লাউ, শিম, কপি ঢাকার বাজারেও বিক্রি হয়। এ থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে সংসার চলে আবদুল আলীম, শফি মিয়া ও নুরু বেপারির মতো শত শত কৃষকের। তাদের দাবি, সরকার যেন কোনোমতেই আমাগো সর্বনাশ না করে। বাপ-দাদার ভিটেমাটি এ সম্বলটুকু ছাড়া আর কিছুই নেই তাদের।

পদ্মা নদী ভাঙনের শিকার পৌর এলাকার ইউসুফপুরের বাসিন্দা জলিল বেপারি বলেন, পদ্মায় আমাগো সব নিয়ে গেছে। ঠাঁই নিয়েছিলাম এহানে। তাও হুনতাছি সরকার কি না করবে।

দোহারপুরীর মিজানুর রহমান বলেন, আমাগো ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করে কোনো মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে দেয়া হবে না। পৌরবাসীকে নিয়ে এটা প্রতিহত করব ইনশাআল্লাহ। পৌর মেয়র আবদুর রহিম মিয়া বলেন, পৌরসভা এলাকায় কোনো খাস সম্পত্তি বা পরিত্যক্ত নাল জমি নাই। তাই পৌর নাগরিকের সর্বস্ব ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে দেয়া হবে না। সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলে এ বিষয়ে পৌরসভার পক্ষ থেকে জনগণের দাবির কথা উল্লেখ করে মহাপরিকল্পনা বাতিলের দাবিতে আবেদন পাঠানো হয়েছে।

অন্য খবর  জয়পাড়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৩ প্রতিষ্ঠানের অর্থদণ্ড

মহাপরিকল্পনা বাতিলের দাবিতে গঠিত সংগ্রাম কমিটির নেতা হারুনুর রশিদ বলেন, সাধারণ মানুষের ভিটেমাটি রক্ষায় তারা আন্দোলন করে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়, ঢাকা-১ আসনের সংসদ সদস্য সালমা ইসলাম, বিভাগীয় কমশিনার, ঢাকা জেলা প্রশাসকসহ সরকারের বিভিন্ন দফতরে মহাপরিকল্পনা বাতিলের দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন তারা। সংগ্রাম কমিটির আরেক নেতা কামরুল খান বলেন, সরকার এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে না যাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

আপনার মতামত দিন