হাত বাড়ালেই ইয়াবা, আছে হোম ডেলিভারির ব্যবস্থা

1611
ইয়াবা

ভয়ানক মাদক ইয়াবার ভ্রাম্যমাণ ব্যবসা কেন্দ্র হয়ে উঠেছে ঢাকার অনতিদূরের এলাকা দোহার-নবাবগঞ্জ। ফেরিওয়ালার মতো এখানে প্রকাশ্যে ফেরি করে বেচাকেনা হচ্ছে ইয়াবা ও অন্যান্য মাদক। এ ছাড়াও রয়েছে হোম ডেলিভারি সিস্টেম। মাদক ব্যবসা প্রতিরোধে প্রশাসনের তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাস্তার মোড়ে, টঙ দোকানে, হাটবাজারে প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে ইয়াবা। তার ওপর যোগ হয়েছে নতুন ফর্মুলা অর্থাৎ হোম ডেলিভারি সার্ভিস। চাইলে ঘরেই সরবরাহ করা হয় ইয়াবা। শুধু মোবাইলে অর্ডার দিলেই আধ ঘণ্টার মধ্যে মোটরবাইক বাহিনী হাজির হয়ে যাবে অর্ডার সাপ্লাই দিতে। এ ছাড়াও ইজিবাইকে রয়েছে ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতার দল। তারা ঘুরে ঘুরে ইয়াবা বিক্রি করে।

সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় এখানে প্রায় প্রতিটি ঘরেই ইয়াবাসেবী রয়েছে। শুধু উঠতি তরুণ-তরুণী নয়, গ্রামের মহিলা ও বয়স্ক পুরুষরাও যারা আগে বিড়ি, সিগারেট, তামাক বা হুঁকায় অভ্যস্ত ছিলেন এখন তারাও ইয়াবায় আসক্ত হয়ে পড়েছেন।

প্রতিদিন দুপুরের পর থেকেই প্রতিটি বাজারে বসে তাস খেলার আসর। মধ্য রাত পর্যন্ত তাস খেলার পাশাপাশি চলে চা, ইয়াবা ও গাঁজা সেবন। কাজেই উঠতি বয়সের সন্তানদের মাদকের হাত থেকে বাঁচাতে বেশির ভাগ অভিভাবক এখন অল্প বয়সেই লেখাপড়া বাদ দিয়ে সন্তানকে বিদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। কোনো মতে এসএসসি পাস করলেই ছেলে বিদেশ পাঠাতে মরিয়া হয়ে উঠছেন অভিভাবকেরা। ফলে এ অঞ্চলে দিন দিন শিক্ষার হার কমে যাচ্ছে।

জানা গেছে, দেশের অন্যতম ধনাঢ্য অঞ্চল দোহার-নবাবগঞ্জ। এলাকার ৮০ শতাংশ পুরুষ বিদেশে থাকেন। শুধু উঠতি তরুণ ও বৃদ্ধরাই এলাকায় থাকেন। প্রবাসীরা যে টাকা পাঠান তার একটি বড় অংশই চলে যায় এসব বেকার তরুণ ও বৃদ্ধের আরাম আয়েশ ও মাদক সেবনে। পকেটে টাকা থাকায় সহজেই এদের হাতে চলে যাচ্ছে মাদক।

অন্য খবর  নবাবগঞ্জে ঈদ বাজারে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান

সূত্র জানিয়েছে, দোহার ও নবাবগঞ্জকে মাদকের রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। দোহারের মৈনটঘাট দিয়ে পদ্মা পার হয়ে ভারত থেকে মাদক আসছে। এই পথ দিয়েই মাদক চলে যাচ্ছে ঢাকা ও আশপাশের এলাকায়। মৈনটঘাটে প্রতিদিন ভোরে যে পদ্মার মাছের আড়ত বসে, সেখান থেকে মাছের পাইকারেরা সিএনজি, পিকআপ বোঝাই করে মাছ নিয়ে আসে ঢাকায়। এসব মাছের ভেতরেই মাদকের চালান পাঠানো হয় বলে জানা গেছে।

এ অঞ্চলে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে মাদক আসক্তের সংখ্যা। ফলে ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন অপরাধ। উঠতি বয়সের কিশোর-কিশোরী যাদের বয়স ১৬ থেকে ১৮, তারাই এর প্রতি বেশি আসক্ত হচ্ছে। একসময় ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক সেবন উচ্চবিত্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত যুবকদের মধ্যেও এর বিস্তার ঘটছে। শিশু, কিশোর, তরুণ, যুবক থেকে বৃদ্ধ বয়সী নারী-পুরুষ কেউ বাদ যাচ্ছেন না। হাত বাড়ালেই ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিল, বাংলা মদ পাওয়া যায়। মোটরসাইকেল, ইজিবাইক ও রিকশায় চলন্ত অবস্থায়ও মাদকের বেচাকেনা হয় বলে জানা যায়।

নবাবগঞ্জের পাড়াগ্রাম বাজারের এক ব্যবসায়ী অভিযোগের সুরে জানান, মাদকের ভয়াবহতায় ছেলেমেয়ে নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

দোহারের মঞ্জুর খান জানান, নবাবগঞ্জ ও দোহারে মাদকে ছড়াছড়ি হলেও প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কেন এত হিমশিম খাচ্ছে বুঝে উঠতে পারছি না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ দুই উপজেলায় মাদকের বেচাকেনা হয়। বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন কৌশলে। এর মধ্যে কাশিয়াখালী বেড়িবাঁধ, বান্দুরা, বাহ্রা, গালিমপুর, চুড়াইন, আগলা, জয়কৃষ্ণপুর, কৈলাইল ইউনিয়নে এ মাদকের কেনাবেচা হয় মোটরসাইকেল, ইজিবাইক ও রিকশায় চলন্ত অবস্থায়। আরো জানা যায়, ভারতীয় সীমান্ত থেকে পাচার হয়ে বাংলাদেশের ভেতরে যেসব মাদক রাজধানী ঢাকায় ঢোকে তার মধ্যে দোহারের মৈনট ট্রলার ঘাট, বাহ্রা ট্রলার ঘাট, নারিশা ট্রলার ঘাট উল্লেখযোগ্য।

অন্য খবর  মালিকান্দা স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের মতবিনিময় সভা

অন্য দিকে নবাবগঞ্জের কৈলাইল ইউনিয়নের পাড়াগ্রাম বাজারসংলগ্ন চর আটিপাড়া, চর পল্টন, বাহ্রার বলমন্তচর, গালিমপুরের মুসলেমহাটি, টিকরপুর, আগলার ছাতিয়া মোহনপুর, দোহারের মুকসুদপুর, গোরাবন, মৈতপাড়া, ধীৎপুর, মৌড়া, দুবলী, নারিশা, চৈতাবাতর, রুইথা, নারিশা পশ্চিম চর, তালপট্টি, মধুরখোলা, মালিকান্দা বটতলা, সুতারপাড়া, আল-আমীন বাজার, ডায়ারকুম, কাজীর চর, দোহার পুরী, কাটাখালী, নিকড়া, ইউসুফপুর, গাজীকান্দা, উত্তর জয়পাড়া তিন দোকান, রাইপাড়া, রাইপাড়া বিলের পাড়, লটাখোলা বাঁশতলা, ইকরাশি, কাচারিঘাট, চর কুশাই, বাস্তা, কুসুমহাটি, আনতা, ধোয়াইর, চর মোহাম্মদপুর, হরিচন্ডি, বিলাসপুর মৈনট আবাসন প্রকল্প, দক্ষিণ শিমুলিয়া, অরঙ্গবাদসহ আরো বেশ কয়েকটি স্থানে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মাদক সরবরাহ ও বিক্রয় করে থাকে।

নবাবগঞ্জের বলমন্তচর গ্রামে মাদকের হাট বসে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে। ওই এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে পুলিশের কয়েক সদস্যের সখ্যতা রয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।

দোহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: সিরাজুল ইসলাম শেখ বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। নবাবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সায়েদুর রহমান বলেন, মাদকের সাথে কোনো আপস নয়, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে। প্রয়োজনে অভিযান আরো জোরদার করা হবে।

আপনার মতামত দিন