শিশুকে নেশা খাওয়ানোর প্রতিবাদ করায় কুপিয়ে জখম: ১৪ দিনেও গ্রেফতার হয় নি কোন আসামি

203

নবাবগঞ্জ উপজেলার খানেপুর গ্রামে দুই শিশুকে নেশা খাওয়ানোর প্রতিবাদ করায় মো.সোহরাব হোসেন নামে এক ব্যাক্তিকে রামদা দিয়ে কুপিয়ে জখম করেছে সন্ত্রাসীরা। গত ১৪ জুলাই আহত সোহরাব নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর উৎপেতে থাকা সন্ত্রাসীরা অতর্কিত হামলা চালায় তার ওপরে। পরে গ্রামবাসী তাকে উদ্ধার করে নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় আহত সোহরাবের স্ত্রী শাহিদা আক্তার বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছে।মামলার অভিযোগে বলা হয়, মাদক ব্যবসায়ী টুইন্ডা ছাত্তার, ইফটিজিং মামলার আসামি রবিউল ও জমির দালাল আইনুদ্দিনসহ আরো ৪/৫জন সন্ত্রাসী মাদকের প্রতিবাদ করায় তার ওপর হামলা করে।

আহতের স্ত্রী শাহিদা আক্তার ফেসবুকে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেন, আমার স্বামী যুবলীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক।

তিনি সবসময়ই অন্যায়ের ও মাদকের বিরুদ্ধে। সরকার চেষ্টা করছেন মাদক নির্মুলে, আর এসব সন্ত্রাসীরা দলের নাম ভাঙ্গিয়ে তরুন ও যুব সমাজেরর কাছে নেশা বিক্রি করে। মাদকের প্রতিবাদ ও থানায় অভিযোগ করায় উক্ত সন্ত্রাসীরা আমার স্বামীকে মেরে ফেলার জন্য রাতের অন্ধকারে আক্রমন করে। তারা শিশুদেরকে মাদকাসক্ত করতে ডিংক্স এর সাথে নেশা মিশিয়ে খাওয়ায়।

তিনি বলেন, উপজেলা থেকে খানেপুর একটু দূরে হওয়ায় পুলিশ, সাংবাদিকদের চোখকে ফাকি দিয়ে তারা এই এলাককে বেছে নিয়েছে। শুধুমাত্র মাদকের প্রতিবাদ করায আমার স্বামীর জীবন আজ হুমকির সম্মুখীন। এই কঠিন মুহূর্তে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও গণমাধ্যম যদি আমাদের পাশে না থাকেন, তাহলে আর কেউ মাদকের প্রতিবাদ করতে সাহস পাবে না। আমার স্বামীর সাথে উল্লেখিত আসামিদের অন্য কোন বিষয় নিয়ে কখনো ঝগড়াঝাঁটি মারামারি হয়নি। তাদের সাথে কোন ধরনের শত্রুতাও নেই। বরং তারা আমার স্বামীর সাথে রাজনীতি করত। আমার স্বামী তাদেরকে সব সময় বলতো রাজনীতি করতে হয় মানুষের মঙ্গলের জন্য। দলের নাম ভাঙ্গিয়ে কোন ধরনের অপকর্ম করা যাবে না। মামলার ১ নম্বর আসামি ছাত্তারকে আমার স্বামী প্রায়ই বুঝাতেন মাদক ব্যবসা না করার জন্য।

অন্য খবর  বারুয়াখালী বিদ্যালয়ে বার্ষিক তাফ্সীরুল কুরআন মাহ্ফিল

মামলির নথি ও বিভিন্ন সূত্র জানায়, গত ১৪ই জুলাই দুই শিশুকে নেশা খাওয়ানোর প্রতিবাদ করায় মো. সোহরাব হোসেনকে এলাকার মাদক ব্যবসায়ী মো. ছাত্তার (৪৫) পিতা: আজিজ বেপারী, আজিজুল ওরফে আজি বেপারী (৭০), জমির দালাল মো. আইনুদ্দিন(৫০) পিতা: বোরহান বেপারী, ইপটিজিং মামলার আসামি মো. রবিউল (২২), বখাটে মো. নাহিদ(২০) পিতা: আলমাছ, অজ্ঞাতনামা আরো ৪/৫ জন এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি, চড়-থাপ্পড় মেরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে নীলা ফুলা জখম করে। ঘটনার দিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় মসজিদ হতে নামাজ পড়ে বাসায় ফেরার পথে উপজেলার খানেপুর গ্রামের যাদব সরকারের মুদি দোকানের সামনে পাকা রাস্তার উপর পৌছামাত্র আসামিগণ আমার স্বামীর পথরোধ করিয়া অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। প্রতিবাদ করিলে এক নম্বর আসামি ছাত্তারের হুকুমে উল্লেখিত আসামিগন আমার স্বামীকে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি, চড়-থাপ্পড় মেরে তার হাতে, বুকে ও পিঠে সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে বেদনাদায়ক নীলা ফুলা জখম করে। মামলার ৪ নম্বর আসামি মো. রবিউল তার হাতে থাকা ধারালো রামদা দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে আমার স্বামীর মাথা লক্ষ্য করে কোপ মারিলে মুখের থুতনীর মাঝখানে কোপ লেগে মারাত্মক কাটা রক্তাক্ত জখম হয়। ৫ নং আসামি নাহিদ হাতে থাকা লোহার হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করলে আমার স্বামীর নাক ফাটিয়ে রক্তাক্ত জখম হয়। ৩ নং বিবাদী আইনুদ্দিন তার হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে পিটাইয়া মাথা সহ বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত ফোলা জখম করে। এক পর্যায়ে তিন নম্বর আসামি আইনুদ্দিন আমার স্বামীর পকেটে থাকা নগদ ১০ হাজার টাকা নিয়ে যায়। আমার স্বামীর ডাক চিৎকারে করিলে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসিলে উক্ত আসামিগন আমার স্বামীকে খুন জখম সহ প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে দ্রুত পালিয়া যায়। এঘটনার আসামিদের বিরুদ্ধে নবাবগঞ্জ থানায় মামলা করা হয়েছে।

অন্য খবর  দোহার-নবাবগঞ্জ-কেরানীগঞ্জ বাসীকে গিয়াসউদ্দিন সোহাগের ঈদ শুভেচ্ছা

তবে এই ঘটনার আগের দিন আহত সোহরাব হোসেন নিজে উল্লেখিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নবাবগঞ্জ থানায় অভিযোগপত্র দায়ের করেন। অভিযোগ পত্রে বলা হয়, গত ১৩ই জুলাই সন্ধ্যা রাতে খানেপুর বাজারে আমার আহত মো. সোহরাব হোসেনকে ইয়াবা ব্যাবসায়ী মো. ছাত্তার (৪৫) পিতা: আজিজ বেপারী, জমির দালাল মো. আইনুদ্দিন(৫০) পিতা: বোরহান বেপারী, বখাটে মো. নাহিদ(২০) পিতা: আলমাছ, আলমাছ মিয়া পিতা বোরহান বেপারী অজ্ঞাতনামা আরো ৩/৪ জন এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি, চড়-থাপ্পড় মেরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে নীলা ফুলা জখম করে। এরা এলাকায় বিভিন্ন ধরণের নেশা পান করে বেরায়। এক নম্বর আসামি ছাত্তারের ছেলে রবিউল আমাদের গ্রামের জুলহাসকে এক ধরণের নেশা দেয়। জুলহাস ওই নেশা একই গ্রামের মাসুদের ১০ বছরের ছেলে এবং মঞ্জুর ১১ বছরের ছেলেকে খাওয়ায়। বিষয়টি মাসুদের ভাতিজা আমার স্বামীকে (মো. সোহরাব হোসেন) জানালে জুলহাসের কাছে তাদেরকে নেশা খাওয়ানোর কারণ জানতে চান। পরে জুলহাস ছাত্তার, আইনুদ্দিনসহ অন্যদেরকে জানালে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি, চড়-থাপ্পড় মেরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে নীলা ফুলা জখম করে ।

আপনার মতামত দিন