লোডশেডিংএ নাকাল দোহার-নবাবগঞ্জবাসী

141

দিন ও রাতে সমান তালে চলছে নবাবগঞ্জ ও দোহার উপজেলায় লোডশেডিং। এলাকাভেদে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৮ থেকে ১৪ ঘণ্টাই লোডশেডিং হচ্ছে উপজেলাদ্বয়ের বিভিন্ন এলাকায়।
দুই উপজেলার সদর এলাকায় সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন অফিস,হাসপাতাল, থানা হওয়ার কিছুটা কম লোডশেডিং হলেও এই এলাকার বাইরে লোডশেডিং এর পরিমাণ সাধারণ মানুষের সহ্যের সীমা অতিক্রম করেছে। সবাই মাননীয় এমপির হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।

শিশু ও বায়োবৃদ্ধ ব্যাক্তিরা আছেন সবচেয়ে অসুবিধায়। ঠান্ডা কাশি,জ্বর,ডায়রিয়াসহ নানাবিধ শারীরিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে এই তীব্র গরমে। কয়লা সংকটে লোডশেডিং হবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেটি যথাযথ সমন্বয় না করা এবং এখানকার বিদ্যুৎ অন্য এলাকায় দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।

নবাবগঞ্জ উপজেলার বান্দুরা ইউনিয়নের নতুন বান্দুরা গ্রামের বাসিন্দা শারমিন আক্তার বলেন, গতকাল রাতে ১১ টা ৩০ মিনিটের দিকে বিদ্যুৎ চলে যায়। ভেবেছিলাম ১/২ ঘণ্টার মধ্যে চলে আসবে ।কিন্তু বিদ্যুৎ আসেনি। আমরা সবাই অসহ্য গরমে সারারাত নির্ঘুম ছিলাম।অনেক পরে সকাল ৭ টায় আমাদের এলাকায় বিদ্যুৎ আসে।
তিনি আরো বলেন, বাসায় শিশু ও বৃদ্ধলোক থাকায় সব চেয়ে বেশি ভোগান্তিতে আছি।

জানা যায়,নবাবগঞ্জ উপজেলা সদরের কলাকোপা ইউনিয়নের পানালিয়া বিদ্যুৎ অফিস থেকে উপজেলা অফিস হয়ে বাগমারা পর্যন্ত সবচেয়ে কম ৭-১০ ঘণ্টা লোডশেডিং হতে দেখা গেছে। এছাড়া উপজেলার জয়কৃষ্ণপুর, শিকারিপাড়া, বারুয়াখালী, নয়নশ্রী, বান্দুরা, যন্ত্রাইল, কৈলাইল, বক্সনগর, আগলা, গালিমপুর, চুড়াইন ইউনিয়নে ১০-১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে বলে জানা যায়।

সৌদি প্রবাসী মাসুম শেখ বলেন, আরব দেশগুলোতে এর চাইতে অনেক গরম তবুও বাংলাদেশে এসে গরমের যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছি না। দিনদিন আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। গত বছর প্রবাসে থাকা অবস্থায় লোডশেডিং এর কথা জেনেছি। পল্লী বিদ্যুৎ এর উচিত ছিল সমস্যাকে মাথায় রেখে বিদ্যুৎ বণ্টনে এবছর আগে থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া এবং সমন্বয় করা। তাহলে সাধারণ মানুষ এই দুর্ভোগে পড়তো না।

অন্য খবর  দোহারের ইকরাশিতে চলছে অবাধে জুয়ার আসর

নবাবগঞ্জ উপজেলার বাগমারা বাজার ঘুরে সরেজমিনে জানা যায়, মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং এর কারণে হাত পাখা, চার্জার ফ্যান, আইপিএস, সৌর বিদ্যুৎ এর চাহিদা আগের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সুযোগে ব্যাবসায়ীরাও দাম হাকাচ্ছেন কয়েক গুণ বেশি। স্থানভেদে ৩০ টাকার তালের হাতপাখা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ১০০ টাকায়, ১৫০০ টাকার চার্জার ফ্যান বিক্রি হচ্ছে, ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকায়।

একই অবস্থায় দোহার উপজেলার নয়াবাড়ি, কুসুমহাটি, মাহমুদপুর, বিলাশপুর, রাইপাড়া, সুতারপাড়া, নারিশা, মুকসুদপুর ও পৌরসভায় বিভিন্ন এলাকায়।এখানেও পালা করে হচ্ছে লোডশেডিং।

দোহার উপজেলার পশ্চিমচর গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা ইব্রাহীম খলিল সবুজ আমাদের জানান,প্রতিদিন দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ছে অথচ পল্লী বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো প্রতিযোগিতা করছে লোডশেডিংয়ের। এ যেন সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।

দোহারের জয়পাড়া বাজারের ব্যবসায়ীরা বলেছেন, লোডশেডিংয়ের কারনে আমাদের ব্যবসা স্থবির হয়ে যাচ্ছে। কারণ আমরা ব্যবসা করেই সংসার চালাই আর এই গরম ও বিদ্যুৎ এর লোডশেডিং এর কারনে দোকানে বসে দোকান করা সম্ভব হচ্ছে না।এছাড়াও বাজারে জেনারেটর আছে কিন্তু সেই লাইনেও এখন সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

জয়পাড়া বাজারের মুদির ব্যবসায়ী মো: হালিম বলেন, প্রতিদিন দিনে ৭-৮ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকে না। আজকেও ফজরের পর ৭-৮ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ ছিল না। আমরা তো আমাদের বিদ্যুৎ বিল ঠিকই দিয়ে থাকি কিন্তু বিদ্যুৎ সঠিকমত পাই না।

জয়পাড়া বাজারে মাহমুদপুর ইউনিয়ন থেকে বাজার করতে আসা মো: রহিম মিয়া বলেন, লোডশেডিং যা করছে তা আর সহ্য করা যাচ্ছে না। দিন ও রাত মিলিয়ে তিনভাগের দুইভাগই বিদ্যুৎ থাকে না। অথচ আমরা প্রতি মাসে হাজার টাকার উপর বিদ্যুৎ বিল দিয়ে থাকি। আর যে মাসে বেশি লোডশেডিং হয় সে মাসে বিদ্যুৎ বিলও আরো বেশী আসে।

অন্য খবর  দোহারে ‘কৃষক বাঁচাও দেশ বাঁচাও’ এই স্লোগানে র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে

এ বিষয়ে জয়পাড়া ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের পরিচালক দেলোয়ার হোসেন বলেন,বিদ্যুৎ সেক্টরের প্রতিটি প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে । কিন্তু এর সুফল ঘরে তুলেতে পারছে না সরকার।বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর দূর্নীতি, লুটপাট আর ষড়যন্ত্রের কারণে এমনটি হচ্ছে। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা পল্লী বিদ্যুতের বিভিন্ন সমিতিতে। এই অবস্থায় চরম বিপাকে পড়েছি আমরা শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা।

অন্য দিকে বিদ্যুৎ লোডশেডিং এর কারনে বেড়েছে হাতপাখা, আইপিএস ও চার্জার ফ্যান বিক্রি।
এবিষয়ে উপজেলার নয়াবাড়ি ইউনিয়নের সৌদি আরব প্রবাসী মো: ওয়াসিম বলেন, আমি জয়পাড়ায় আইপি এস নিতে এসেছিলাম তারা ৪০ হাজার টাকা চেয়েছে পরে আমি ঢাকা থেকে ৩২ হাজার টাকা দিয়ে কিনে এনেছি।

জয়পাড়া বাজারে ফ্যান বিক্রিতা সোহাগ হোসেন বলেন, কয়েকদিন আগেও চার্জার ফ্যানের দাম কম ছিল বর্তমানে চাহিদা বেশি থাকার কারনে কোম্পানি গুলো প্রতেকটি ফ্যানে ২-৩ হাজার টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে সে জন্য আমাদেরও বেশি দামে।ফ্যান বিক্রি করতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার মো. মজিবুর রহমান বলেন, বর্তমানে দোহার ও নবাবগঞ্জে বিদ্যুৎ চাহিদা ৬০ থেকে ৬৫ মেগাওয়াট। কিন্তু সে তুলনায় বরাদ্দ পাচ্ছি ৪০ থেকে ৪৫ মেগাওয়াট। বিদ্যুতের বরাদ্দ কম থাকায় সারা দেশের ন্যায় দোহার ও নবাবগঞ্জে লোডশেডিং হচ্ছে।

আপনার মতামত দিন