মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডারে সয়লাব দোহার-নবাবগঞ্জ 

493
দোহার-নবাবগঞ্জ

একটি সিলিন্ডারের আয়ুষ্কাল সাধারণত ১৫ বছর। অথচ ২৮ বছরের পুরনো সিলিন্ডারেও লিকুইফায়েড পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) বিপণন হচ্ছে। মেয়াদোত্তীর্ণ এসব সিলিন্ডারে গ্যাস বিপণনের কারণে বাড়ছে বিস্ফোরণ ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি। আর রংচটা ও জং ধরা এমন মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডারে এখন দোহার ও নবাবগঞ্জের বাজার সয়লাব। রয়েছে, স্থানীয়ভাবে সিলিন্ডারে নিন্মমানের গ্যাস রিফুয়েলিং করার গুরুত্বর অভিযোগও। মাননির্ণয় ছাড়াই এসব সিলিন্ডার গ্রামীণ জনপদের মানুষ ব্যবহার করছে। কোনো প্রকার অনুমোদন ছাড়াই দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলার দোকানে দোকানে বিক্রি হচ্ছে এসব গ্যাস সিলিন্ডার।

ফায়ার সার্ভিসের পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিবছর আশংকাজনক হারে অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটেছে এলপিজি সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কারণে। এতদিন ধরে মূলত বাসাবাড়িতে রান্নার কাজে এলপিজির ব্যবহার হয়ে এলেও এখন মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে এলপিজি সিলিন্ডার দিয়ে চালানো হচ্ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। ক্রমাগত গ্যাস সংকট আর সিএনজি ফিলিং স্টেশনের লম্বা লাইন এড়াতে ঝুঁকিপূর্ণ এ পথ বেছে নিয়েছেন চালকরা। দোহার ও নবাবগঞ্জ সড়কে চলাচলকারী অটোরিকশাগুলোর পেছনের সিটের পাশে গ্যাস সিলিন্ডার স্থাপন করা হচ্ছে, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে যানবাহনে। গ্যাসভর্তি এসব সিলিন্ডার বাজারে সরবরাহ এবং সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে রয়েছে গুরুতর অনিয়ম।

নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি সিলিন্ডার পাঁচ বছর অন্তর পরীক্ষা করে তা নিরাপদভাবে গ্যাস সরবরাহে উপযোগী কিনা তা দেখার কথা। যদি নিরাপদ না থাকে, তাহলে তাৎক্ষণিক সিলিন্ডার বাতিল করতে হবে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এ বিষয়টির প্রতি গুরুত্বই দেয়া হয় না। এলপিজির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় নতুন সিলিন্ডার আনা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তার সঙ্গে যোগ হচ্ছে পুরনোগুলোও।

অন্য খবর  দোহারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বাল্যবিবাহ বন্ধ

মূলত সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ভোক্তাপর্যায়ে গ্যাসভর্তি সিলিন্ডার সরবরাহ করে থাকে। এলপিজি শেষ হওয়ার পর ভোক্তা খালি সিলিন্ডার জমা দিয়ে আরেকটি এলপিজি ভরা সিলিন্ডার কেনেন। এভাবে সিলিন্ডারগুলো চক্রাকারে ডিলার পর্যায় থেকে এলপিজি প্লান্টে যায়। সেখান থেকে আবার পুরনো সিলিন্ডারগুলোতেই গ্যাস ভরে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু পুরনো সিলিন্ডারে গ্যাস ভরার পর ভোক্তাপর্যায়ে তা কতটা নিরাপদ এ নিয়ে প্রশ্ন থাকার পরও সিলিন্ডার পরীক্ষায় নেয়া হয় না তেমন কোনো উদ্যোগ। সিলিন্ডারের মান ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে চরম ঘাটতি থেকেই বিস্ফোরণের মতো দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে দিন দিন।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, গ্যাসসংক্রান্ত অগ্নিদুর্ঘটনা আগের তুলনায় বেড়েছে। তবে সবচেয়ে আশঙ্কার ব্যাপার হচ্ছে, এলপিজি সিলিন্ডার বিস্ফোরণে অগ্নিকা-ের ঘটনা কয়েক গুণ বেড়েছে। ব্যবহারকারীদের অসতর্কতা, সিলিন্ডারে অরিজিনাল ভাল্বের জায়গায় বাজার থেকে কেনা সস্তা ভাল্ব সংযোজন, মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিম্নমানের সিলিন্ডার ব্যবহার, যেখানে সেখানে এলপিজি ভর্তি সিলিন্ডার থেকে খালি সিলিন্ডারে গ্যাস ভরাসহ বিভিন্ন কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটছে। এছাড়া ট্রাক-লরি-পিকআপে করে ডিলারদের এলপিজি সিলিন্ডার সরবরাহ করার সময় উঁচু স্থান থেকে গ্যাসভর্তি এলপিজি সিলিন্ডার মাটিতে ফেলার সময়ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে।

অন্য খবর  মাহমুদপুরে ড্রেজারের পাইপ নিয়ে ভোগান্তি, শঙ্কা

বিস্ফোরক আইন ১৮৮৪-এর অধীনে গ্যাস সিলিন্ডার বিধিমালা ২০০৪-এর ৬৯ ধারা অনুযায়ী লাইসেন্স ছাড়া অনধিক ১০টি গ্যাসপূর্ণ সিলেন্ডার মজুদ করা যাবে।

তবে বিধির ৭০ ধারা অনুযায়ী এসব সিলেন্ডার মজুদ করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট পরিমাণে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি এবং আগুন নিয়ন্ত্রক সরঞ্জাম মজুদ রাখতে হবে। সিলিন্ডার গ্যাস স্থাপনা প্রাঙ্গণে দিয়াশলাই বা আগুন লাগতে পারে এমন কোনো বস্তু বা সরঞ্জাম রাখা যাবে না। মজুদ করা স্থানের কাছাকাছি আলো বা তাপের উৎস থাকা যাবে না।

এসব আইনের তোয়াক্কা না করে চা-দোকান থেকে আরম্ভ করে ভ্যারাইটিজ স্টোরেও পাওয়া যায় এ সিলিন্ডার গ্যাসের বোতল।

বর্তমানে দোহার-নবাবগঞ্জ উপজেলাতেই সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। ব্যাপক চাহিদা থাকার কারণে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী নিজেদের মনগড়াভাবে যেখানে সেখানে সিলিন্ডারের বোতল ফেলে রেখে ব্যবসা করছে। এরমধ্যে মানহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডারের সংখ্যাও কম নয়। ঝুঁকিপূর্ণ এ জ্বালানির যথাযথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই এসব দোকানে। বেশিরভাগ দোকানি ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন।

আপনার মতামত দিন