মিনি কক্সবাজার ধ্বংস করে বালু ব্যবসার মহোৎসব

183
মিনি কক্সবাজার ধ্বংস করে বালু ব্যবসার মহোৎসব

ঢাকার দোহার উপজেলায় মিনি কক্সবাজার খেতো মৈনটঘাটকে ও আশেপাশে থাকা ফসলি জমি নষ্ট করে চলছে বালু ব্যবসায়ীরা। এতে দিন দিন মৈনটঘাট এলাকায় ফসলি জমির উর্বরতা হারাচ্ছে। এক সময় মৈনটঘাটে প্রচুর বাদাম, সরিষা, ধনিয়া ও গম সহ অনেক ধরনের সবজি ও ফসল উৎপাদন হতো। কিন্তু বালু স্তুপের পর থেকে এখানে এসব ধরনের ফসল উৎপাদন অনেক কমে গিয়েছে ও সবজি উৎপাদন করা অসম্ভব হয়ে পরেছে।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মিনি কক্সবাজার খেতো মৈনটঘাটে ফসলি জমির বিশাল এলাকা জুড়ে বালুর স্তপ তৈরী করে বালু ব্যবসায়ীরা বিক্রি করাছে বালু। এই বালু বাতাসে উড়ে গিয়ে পাশে থাকা ফসলি জমিতে পরায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি ফসল। আর এতে কৃষকদের ক্ষতি হচ্ছে প্রচুর।

স্থানীয় কৃষক আবুল হোসেন জানান, আমাদের জমীতে বালু পড়ায় দিন দিন ফসল উৎপাদন করা অসম্ভব হয়ে পরছে। আগে এই মৈনটে আমরা প্রচুর পরিমানে ধান, বাদাম, কলই, গম, সরিষা সহ বিভিন্ন ধরনের সবজিও ফলানো হতো। কিন্তু এখন সারা মৈনট এলাকা ঘুরেও এসব ফসলের দেখা পাওয়া যায় না। আর এর মূল কারন হল এই বালু ব্যবসা।

অন্য খবর  দোহারে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত

আরো কয়েকজন কৃষক জানান, এখানে সব প্রভাবশালীরাই বালু ব্যবসা করে। তাদের কিছু বলা যায় না। আর এই বালুতে কোন জিনিসই আমরা করতে পারছি না। সব জমি আস্তে আস্তে বালু ব্যবসায়ীরা টাকা দিয়ে নিয়ে নিচ্ছে।

সবুজ নামে এক পথচারী জানান, প্রথম প্রথম আমরা সময় পেলেই মিনি কক্সবাজার মৈনটঘাটে আসতাম সময় কাটাতে। তখন মৈনটঘাটের পরিবেশ ছিলো সবুজ ফসলের মাঠে ঘেরা। আর এখন প্রয়োজনেও আসতে ইচ্ছে করে না। এখানে আসলেই ট্রাকের বালুতে তলিয়ে যাই। আর এর ফলে সারাদিন শরীর চুলকায় গোছল না করা পর্যন্ত।

আর এসব বালু পরিবহনে ব্যবহার করা হচ্ছে যন্ত্রদানব ট্রাক। উপজেলার প্রতিটি সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বেপরোয়া অবৈধ মাটির ট্রাকগুলো। এসব ট্রাকের নেই বৈধ কোনো কাগজপত্র, রয়েছে বেপরোয়া গতি, হাইড্রোলিক হর্ন বাজানো এবং বেশির ভাগ চালকদের নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স। সব মিলিয়ে নিয়ম কানুন ছাড়াই দিনরাত সড়কগুলো দখলে নিয়েছে মাটি ব্যবসায়ীদের এই যন্ত্রদানব। বিশেষ করে স্কুল চলাকালীন সময়ে ট্রাকের বেপরোয়া গতি জনমনে প্রতিনিয়ত আতঙ্কের সৃষ্টি করছে। এযাবৎকাল দোহার উপজেলার বহু মানুষের প্রাণহানি হয়েছে এসব ট্রাকের চাপায়। তারপরও লাগাম টানা যাচ্ছে না প্রাণঘাতি এ বাহনটির।

অন্য খবর  কালীগঙ্গা নদীর পাড় পরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠবে কৃষি ও শিল্পভিত্তিক কলকারখানা - সালমা ইসলাম এমপি

স্থানীয়দের মাধ্যমে জানা যায়, রাজনৈতিক পরিচয়ে বেশ কয়েকজন মিলে শক্তিশালী সিন্ডিকেট তৈরি করে এই বালু ব্যবসা করছে তারা। তাদের বিরুদ্ধে নাকি ভয়ে কেউ কোন কথা বলতে পারে না।

বালুর ট্রাকে ফসলি জমির পাশাপাশি ক্ষতি গ্রস্ত হচ্ছে রাস্তাঘাট। এছাড়াও মৈনটঘাট ইতিমধ্যে মিনিকক্সবাজার নামে দেশের সর্বত্র খ্যাতি অর্জন করেছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে পর্যটকরা ঘুরতে আসেন। এই বালুর কারনে এখানে পর্যটকরা নিরুৎসাহিত হয়ে পরছে। সেই সাথে যারা প্রতিনিয়ত এই পথে চলাচল করে তারা এই বালুতে অতিষ্ঠ হয়ে পরছে।

বেপরোয়া এই বালু ব্যবসা ও ট্রাকের লাগাম টেনে ধরতে না পারলে এক সময় এই মৈনটঘাট পর্যটক শূন্যের হয়ে পরার পাশাপাশি ফসলের মাঠের পরিবর্তে মরুভূমির মতো হয়ে পরবে।

এবিষয়ে দোহার উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফজলে রাব্বি বলেন, আমরা বিষয়টি অবগত হয়েছি, সেখানে খুব দ্রুত মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করবো।

আপনার মতামত দিন