মানুষ এতটা নিষ্ঠুর হচ্ছে কেন

706

রাশিম মোল্লা :

এ কেমন কালচারে পরিণত হচ্ছে আমার এই ভ্রাতৃত্ব বোধ সম্পন্ন সোনার বাংলাদেশে। কেউ অসুস্থ হলে, প্রতিবেশী, বহু দূর দূরান্তের আত্মীয়-স্বজন শোনা মাত্র তাকে দেখতে দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে আসতেন । কোনো ব্যাক্তি মৃত্যুবরণ করলে লাশ দাফনের কাজ নিয়ে পরিবারকে ভাবতে হত না। মৃত ব্যক্তিকে গোসল করা, কবর খোদা, কাফনের কাপড় কেনা এসব নিয়ে কোন টেনশন করতে হতোনা পরিবারকে। সাত দিন পর্যন্ত মারা যাওয়া ব্যক্তির বাড়িতে প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনরা খাবার পাঠাতো। এই সময় মৃত ব্যক্তির বাসায় চুলা জ্বালাতে হতো না। সবকিছুই দিতেন অন্যেরা। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় বাংলাদেশের এই চিত্র পাল্টাতে শুরু করেছে।

সম্প্রতি মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে এ পরিবর্তনের চিত্র আরও একধাপ বেড়েছে। আদরের সন্তান করোনা আক্রান্ত পিতা-মাতাকে বাড়ির বাইরে রাখার ঘটনাও ঘটেছে। সারারাত বাড়ির আঙিনায় লাশ পড়ে থাকার ঘটনাও ঘটেছে। দেশের এমন অনেক ঘটনার সাক্ষী আল মারকাজুল ইসলাম নামে অরাজনৈতিক সংগঠন। যারা বর্তমান সময়ে নিজ ধর্মের করোনা আক্রান্ত মৃত ব্যক্তি লাশ দাফন করছেন। অন্য ধর্মের লোকদের মৃত লাশও সৎকার করছেন।

সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জে এক ব্যবসায়ীর মৃতদেহ নিজের বাড়ির সিঁড়িতে পরে থাকলেও তা সরাতে পরিবারের কেউ এগিয়ে আসেনি। নবাবগঞ্জে করো না উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করা এক ব্যক্তির লাশ দাফনে বাধা দিয়েছে এলাকাবাসী পরবর্তীতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দাফনের কাজ সম্পন্ন করে প্রশাসনের সহায়তায় লাশ কবর করা হয়। আর এ কারণেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কেউ মারা গেলে তাকে স্বাস্থ্য নির্দেশনা মেনে নিজ ধর্ম মেনে সৎকার কিংবা পারিবারিক কবরস্থানেই তাকে দাফন করা যাবে বলে জানানো হয়। ওই এলাকার একজন জনপ্রতিনিধি বিবিসি বাংলাকে বলেন, নিজে মুসলিম হলেও স্বজনেরা এগিয়ে না আসায় করোনাভাইরাসে মৃত একাধিক হিন্দু মরদেহের মুখাগ্নি করতে হয়েছে তাকে

অন্য খবর  উপজেলা এবং পৌর ছাত্রলীগ কমিটি বিলুপ্তি করন কি যৌক্তিক?

বুধবার নবাবগঞ্জে উপজেলার নয়নশ্রী ইউনিয়নের এক ব্যক্তি ব্রেন স্ট্রোক করে মারা যায়। ওই ব্যক্তির মধ্যে করোনা উপসর্গ থাকায় লাশের কাছে যায়নি কেউ। এমনকি করোনার ভয়ে পরিবার ও বংশের কেউ কাছে আসেনি বলে জানা যায়। এ খবর পেয়ে মৃত ব্যক্তির দাফন কাফন ও জানাজার জন্য এগিয়ে আসেন নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান তাবির হোসেন খান পাভেল। তার নেতৃত্বে দলের বাকি সদস্যদের নিয়ে রাত ১২ টার দিকে করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তির জানাজা ও দাফন কার্য সম্পন্ন করেন তিনি। এমন আরো পাঁচটি ঘটনা ঘটে নবাবগঞ্জে।

অথচ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে যে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার তিন ঘণ্টা পর ওই মৃতদেহে আর ভাইরাসটির কোন কার্যকারিতা থাকে না। ফলে মৃতদেহ থেকে এই ভাইরাস ছড়ানোর কোন আশঙ্কা নেই বলে জানাচ্ছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ডা. নাসিমা সুলতানা। তিনি বলেন, “মৃতদেহ দাফন বা সৎকার করতে তিন চার ঘণ্টা সময় লেগেই যায়। তিন ঘণ্টা পরে আর মৃতদেহে এই ভাইরাসের কার্যকারিতা থাকে না।”

ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, নিয়ম অনুযায়ী মৃতদেহের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে বডি ব্যাগ বা সেটা না পাওয়া গেলে পলিথিনে মুড়ে স্থানান্তর করা যায়। মৃতদেহ দাফন বা শেষকৃত্যের জন্য নির্ধারিত কবরস্থান বা পারিবারিকভাবে নির্ধারিত স্থানে দাফন ও শেষকৃত্য করা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, সংস্থাটি বলেছে যে, এখনো পর্যন্ত এটা প্রমাণিত হয়নি যে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তির দেহ থেকে সুস্থ কোন ব্যক্তির মধ্যে করোনাভাইরাস ছড়ায়।

অন্য খবর  দোহার পৌরসভা (শেষ পর্ব): উপসম্পাদকীয় – আব্দুর রহমান আকন্দ

 

লেখকঃ রাশিম মোল্লা
সেক্রেটারি
সেভ দ্য সোসাইটি এন্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরাম

আপনার মতামত দিন