“ভালো থেকো ঘাস, ভোরের বাতাস, ভালো থেকো।
ভালো থেকো রোদ, মাঘের কোকিল
ভালো থেকো বক, আড়িয়াল বিল
ভালো থেকো নাও, মধুমাখা গাঁও, ভালো থেকো।
ভালো থেকো মেলা, লাল ছেলেবেলা, ভালো থেকো।”

কিন্তু কতদিন ভাল থাকবে, কবির এই আকুতি শুকিয়ে যাবে চৈত্রের আড়িয়াল বিলের মত। চারদিক থেকে চেপে আসা জনবসতি হয়তো বেশ সময় নেবে পুরো বিলকে খেয়ে নিতে, রিয়েল এস্টেট দানবরা সময় নেবে কিছুটা কম। কিন্তু যদি এখানে বিমানবন্দর হয় তবে বিল নিশ্চিহ্ন হতে সময় নেবে না। বিমানবন্দরের অর্থনৈতিক প্রয়োজনীয়তা সোজা চোখে দেখা যায় কিন্তু এই বিশাল জল মাহালের গুরুত্ব বুঝতে হলে প্রয়োজন গভীর দৃষ্টি আর শিক্ষার। প্রতি বছর যে বিশাল পরিমাণ জল ধারণ করে এই বিল তা এর চারপাশের বিস্তীর্ণ অববাহিকার পরিবেশ, জলস্তরকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই অঞ্চলের এমনকি ঢাকা শহরের মানুষের চাল, সব্জি, মাছের চাহিদা পূরণ করে আড়িয়াল বিল। এটি হারিয়ে গেলে মানুষেরই ক্ষতি হবে বেশি।

১৩৬ বর্গ কিলোমিটারের এই বিশাল সবুজ বিল ছড়িয়ে আছে ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ ও দোহার, মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগরে। অতীতে এর নাম ছিল চুড়াইন বিল। পুরো বিলে আছে অসংখ্য পুকুর আর খাল। পুকুরগুলো ঘীরে থাকে নানা রকম গাছ, বর্ষায় যখন বিলের পানিতে সব সমান হয়ে যায় তখন গাছগুলো পুকুরের অস্তিত্ব ঘোষণা করে দাড়িয়ে থাকে। সারা বছরই এখানে দেখা মিলে বকের।

অন্য খবর  পদ্মা নদীর ভাঙন

মানব বসতি থেকে পাখিরা দিনে দিনে বিদায় নিয়ে শেষ আশ্রয় হিসেবে বনগুলোতে টিকে আছে, তেমনি এই অঞ্চলে অনেক পরিচিত পাখি আর দেখা যায় না, কিন্তু আড়িয়াল বিলে গেলে তাদের কারো কারো দেখা মিলতে পারে।

উপরে নীল আকাশ, চারপাশে সবুজের দেয়াল, টলটলে জলে সাদা মেঘের প্রতিবিম্ব, তার মাঝ দিয়ে কখনো যদি নৌকায় করে ঘোরার সুযোগ হলে দেখবেন অনন্যসাধারণ দৃশ্য আর দিন শেষে সূর্যাস্ত। এখানে সেখানে জেলেরা পেতে রেখেছে মাছ ধরার ‘বেহাল’ (ভেসাল)। কেউ কেউ জাল দিয়ে মাছ ধরছে।

আর যখন পানি থাকে না, পুরো বিলেই হয় ধান চাষ। হেমন্তে ধান কাটা, কৃষকের মাথায় করে ধান নিয়ে যাওয়া, ধান মাড়াই, শুকানো এই দৃশ্য যেন এখন সময়ের ফসিল।

আপনার মতামত দিন