ফেসবুক চিনল মানিক-রতনকে

667
ফেসবুক চিনল মানিক-রতনকে

এই বাংলা নববর্ষে ফেইসবুকে জনপ্রিয় স্টিকার তালিকায় স্থান পেল বাংলাদেশের জনপ্রিয় কার্টুনিস্ট যমজ ভাই মানিক ও রতনের তৈরি ড্রগো সিরিজের ২০টি স্টিকার। এর মাধ্যমে প্রথম কোনো বাংলাদেশির তৈরি স্টিকার অনুমোদন দিল ফেইসবুক।

এবার বাংলা নববর্ষের দিন থেকে ইন্টারনেট দুনিয়ায় মানুষের অনুভূতির সঙ্গী হয়ে ঘুরছে ছোট্ট এক ড্রাগন স্টিকার—ড্রগো। বনবাদাড় ভেঙে তেড়ে আসা নয়, দুষ্টু ড্রগো আবার পোষ মানা। বাংলাদেশের জনপ্রিয় দুই কার্টুনিস্ট মানিক ও রতনের হাতে জন্মে পোষও মেনেছে তাদের।

ড্রগোর কাজকর্ম পছন্দ হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া ফেইসবুক কর্তৃপক্ষের। তাদের আগ্রহেই স্টিকার ড্রগো এখন সেঁটে যাচ্ছে ফেইসবুকের দেয়ালে দেয়ালে।

ড্রাগন এলো:  যমজ ভাই মানিক-রতন। কার্টুন আঁকতে খুব ভালোবাসেন। একসময় লেখালেখি করতেন জাতীয় পত্রিকায়। কার্টুনও আঁকতেন। ব্যস্ততায় পত্রিকার কাজে অনিয়মিত হয়ে পড়লেও ছাড়েননি কার্টুন আঁকা। এখন বেশি নিয়মিত ডিজিটাল মাধ্যমে, বিশেষ করে ইনস্টাগ্রামে। অনলাইনে নিজেদের মতো করে বিভিন্ন চরিত্রের সৃষ্টি করে যান তাঁরা।

মানিক-রতন বলেন, থ্রিডি এনিমেটেড মুভি ‘হাউ টু ট্রেইন ইউর ড্রাগন’ খুব পছন্দের মুভি আমাদের। ওই মুভিতে সবার ব্যক্তিগত ড্রাগন থাকে। একসময় মনে হলো, আমাদেরও ব্যক্তিগত ড্রাগন থাকুক না কেন। এই ভাবনা থেকে কাজ শুরু ২০১৪ থেকে। এরপর এঁকে ফেললাম আমাদের ড্রগো।

নাম করল ড্রগো:  ড্রাগন তো জন্ম নিল। এবার নাম দেওয়ার পালা। দুই ভাই মিলে ভাবলেন, বড় ড্রাগনের নাম যেতেগু ‘ড্রাগন’, ছোট ড্রাগনের নাম একটু ছোটই হওয়া উচিত। এই চিন্তা থেকে ‘ড্রাগন’ ছেঁটে রাখা হলো ‘ড্রগো’।

ড্রগোর কয়েকটি সংস্করণ ইনস্টাগ্রামে প্রকাশ করলেন দুই ভাই। প্রাধান্য ছিল বাস্তব বিষয়ের সঙ্গে কার্টুন চরিত্র মিলিয়ে আঁকা। প্রকাশের পরপরই ইনস্টাগ্রামে পেল দারুণ জনপ্রিয়তা। এরপর বিভিন্ন বিষয় উপজীব্য করে জন্ম নিল নতুন নতুন কার্টুন। এভাবে একসময় প্রায় ১০০ ড্রগো চরিত্র প্রকাশ পেল ইনস্টাগ্রামে।

বলতে গেলে দুই ভাইয়ের সবচেয়ে কাছের সঙ্গী এখন ড্রগো। এদিকে ইনস্টাগ্রামে ড্রগোর রয়েছে অনেক ফলোয়ার ও ফ্যান। ড্রগো প্রতিদিন কিছু না কিছু করে। আর সে গল্প জানিয়ে দেওয়া হয় ইনস্টাগ্রামে। যেমন—ড্রগো একদিন একটি চকোলেটের অর্ধেক খেয়ে ফেলায় কতটা মোটা হয়ে গেছে, সেটি জেনে গেল তার ফ্যান ফলোয়াররা। আবার ড্রগো বকা খেয়েছে—এমনটা জানলেই মন খারাপ হয় ফলোয়ারদের। ড্রগোকে না বকার জন্য অনুরোধ করে তারা। এভাবেই সবার খুব ‘কাছের কেউ’ এখন ড্রগো।

অন্য খবর  ফেসবুকের ভিডিও স্ট্রিমিং সবার জন্য উন্মুক্ত

ড্রগোর টানে ফেইসবুক: ড্রগোর ব্যাপক জনপ্রিয়তার খবর ডিজাইন ট্যাক্সি, বোর্ডপান্ডাসহ আলোচিত বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রতিবেদন হিসেবে প্রকাশ হতে শুরু করে। বিভিন্ন দেশে বাড়তে থাকে ফ্যান-ফলোয়ার।

বিষয়টি যে ফেইসবুকের নজরেও পড়েছে, দুই ভাই তা বুঝতে পারেন গত বছর একটি মেইল পেয়ে। ফেইসবুকের স্টিকার টিম থেকে করা সেই মেইলে জানানো হয়, ড্রগো চরিত্রটি তাদের মুগ্ধ করেছে। এই চরিত্র দিয়ে ফেইসবুকের জন্য স্টিকার প্যাক বানানোর অনুরোধ করে তারা। সানন্দেই রাজি হয়ে যান মানিক-রতন।

শুরু হলো কাজ: মানিক ও রতন বললেন, ‘কাজটা খুব সহজ নয়! স্টিকার বিষয়ে ফেইসবুকের অনেক নিয়ম-কানুন আছে। শত কোটি মানুষ এটি ব্যবহার করবে। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ভাব, মতাদর্শ ও অনুভূতির বিষয় আছে। সে ক্ষেত্রে কোনটা করা যাবে কোনটা করা যাবে না, কোন বিষয়গুলো স্পর্শকাতর—সব কিছু মেনে তৈরি করতে হয়েছে স্টিকারগুলো। যেমন একটি স্টিকার ছিল—স্কুটারে ড্রগো। কপিরাইট ইস্যুতে ঝামেলা হতে পারে বলে এটি বাদ দিয়ে দেয় ফেইসবুক। স্টিকার তৈরি করে পাঠানোর পর ফেইসবুকের নিজস্ব অনুমোদনপ্রক্রিয়া শুরু হলো। প্রতিটি স্টিকারের ভেতরের টেক্সট—যেমন হ্যাপি লিখলে ওই বিষয়ের ওপর যেন স্টিকারটি দেখা যায়। সেটি বাংলা, ইংরেজি বা হিন্দি—সব ভাষায় যেন হয়, এ ধরনের বিষয়গুলো যুক্ত ও পরীক্ষা করা হলো। সব শেষে ‘ছোট্ট বন্ধু ড্রাগনের সঙ্গে আনন্দ’ শিরোনামে বাংলা নববর্ষের দিন ড্রগোর ২০ স্টিকার আপলোড করে ফেইসবুক স্টোর।

ফেসবুক চিনল মানিক-রতনকে

ড্রগোর যত ভঙ্গি: মানিক-রতন ৩৫টি স্টিকার তৈরি করলেও শুরুতেই সব গ্রহণ করেনি ফেইসবুক। ড্রগোর ২০টি ভাব বা ইমো স্টিকার প্রকাশ করেছেন তাঁরা। অবশিষ্ট ১৫টি ভবিষ্যতে প্রকাশ করা হতে পারে বলে আশা করছেন দুই ভাই। প্রকাশিত ড্রগোর ভাবগুলো—আঙুলে ঝুলে খুশিতে ডগমগ ড্রগো (Swing drogo), মাইক হাতে ঘোষণায় ব্যস্ত (Shouting, announcing), ভেংচি কেটেছে সে (Shouting, announcing), ড্রগোর হাই-ফাইভ (Hi5),  জন্মদিনে কেক হাতে মোববাতিতে ফুঁ (Happy Birthday), ক্লান্ত হয়ে মগে উপুড় (Tired, Drunk), খেলো চিমটি (Squish, pinch), শেষে কান্না (Crying), এবার বিভ্রান্ত সে (confused), আদরে-আহ্লাদে পল্টি (Adored, pampered), নাহ বিরক্ত এবার (Annoyed, Not cool), ড্রগো ব্যস্ত ফুটবল খেলায় (football), হাসতে হাসতে শেষ (Laughing out loud), মাথায় আইস ব্যাগ, মুখে থার্মোমিটার—আহা অসুস্থ (Sick, Unwell), সেই চমক তার (Surprise), কী ভালোবাসা, হৃদয় তার দু’হার (Love, I Love you), এই যে শুনছেন হাই, হ্যালো (Hi), বুড়ো আঙুল উঁচিয়ে আচ্ছা ঠিক আছে (Alright), কাতুকুতুতে ওলটপালট (Tickle), ভারোত্তলন করছে ড্রগো, ব্যায়ামে আছে, ব্যস্ত (Working Out)।

অন্য খবর  দোহারে ডিশ ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা

মেসেঞ্জারে চ্যাট করা, ফেইসবুকে মন্তব্য, টাইমলাইনে পোস্ট বা স্ট্যাটাস দেওয়ার সময় স্টিকার বাটনে শুরুতে ক্লিক করতে হবে। তারপর স্টিকারগুলো ডিসপ্লেতে আসার পর ‘+’ বাটনে ক্লিক করে প্লেইং উইথ ড্রগো স্টিকার প্যাকটি যুক্ত করে নিলেই হবে। এ ছাড়া ফেইসবুকে লগইন করে সরাসরি এই লিংক (https://www.facebook.com/sticker) থেকেও প্লেইং উইথ ড্রগো স্টিকারটি নিজের স্টিকার সংগ্রহে যুক্ত করা যাবে।

আমাদের মানিক-রতন:  পুরো নাম হুমায়ূন কবির মানিক ও কামরুজ্জামান রতন। গুণের শেষ নেই তাঁদের। কার্টুনিস্ট, পেশাদার ডিজাইনার, আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত ফটোগ্রাফার আবার এনিমেশন ফিল্মের নির্মাতাও।

যমজদের জন্ম ১৯৮৫ সালের ১২ অক্টোবর। মানিক পাঁচ মিনিটের বড়। বাবা প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম ও মা গৃহিণী হাসিনা পারভিন। বাবার চাকরির সুবাদে ঘুরে বেড়িয়েছেন দেশজুড়ে।

এনিমেশনের ওপর পড়াশোনা করছেন মালয়েশিয়ার লিমককউইং বিশ্ববিদ্যালয়ে। অর্জন করেছেন ক্লাসিক্যাল এনিমেশনে দক্ষতা।

দুই ভাই এখন গড়ে তুলেছেন ব্র্যান্ডিং এবং এনিমেশন স্টুডিও। ‘নার্ড র‌্যাবিট’ নামের এই স্টুডিওতে প্রাণ, গ্রামীণফোন,  ব্র্যাক, আমরা নেটওয়ার্ক, সুইস কন্টাক্ট, ওরিওসহ বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কাজ হয়।

আছে আরো অনেক অর্জন:  আমেরিকান মিউজিক অ্যাওয়ার্ড মঞ্চের জন্য মনোনীত হয়েছে মানিক-রতনের ডিজাইন। মাইক্রোসফটের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে ব্যবহার করা হয়েছে তাঁদের অলংকরণ।

মাইক্রোসফটের ‘পরিবেশ’ বিভাগের পেইজে স্থান পেয়েছিল এটি।

দুই ভাইয়ের কাজ আছে সিএনএন অনলাইন, এমটিভি ইন্ডিয়া, জেনারেল ইলেকট্রনিকস রেড বুলসহ অনেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। বলিউডের চলচ্চিত্র ‘লাইফ ইন এ মেট্রো’-র অডিও সিডির প্রচ্ছদ ডিজাইনও করেছিলেন তাঁরা।

তাঁদের ইলাসট্রেশন প্রকাশিত হয়েছে টাইম, হাফিংটন পোস্ট, ফোর্বস, ম্যাশেবলসহ আরো অনেক বিশ্বখ্যাত মাধ্যমে।

আনসলভড স্টারস এবং তুই রাজাকার নামে দুটি এনিমেটেড চলচ্চিত্রও বানিয়েছেন মানিক-রতন। বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক উৎসবে দেখানো হয়েছে আনসলভড স্টারস।

আপনার মতামত দিন