গ্রামটিই জাঁকিয়ে রাখবে ইছামতিকে-

444
ইছামতি

গ্রামের নাম বলমন্তচর। এক সময় অনেকের কাছে অজানা অচেনা গ্রামই মনে হতো। তবে আমার কাছে এই জনপদ পরিচিত ছিলো ছোট বেলা থেকেই- এটি আমার নানা বাড়ীর গ্রাম। গ্রামের মেঠো পথগুলো আর আগের মতো নেই। আজ সেই অচেনা অজানা অচেনা গ্রাম এখন দোহার নবাবগঞ্জ কেরানাীগঞ্জের মধ্যে সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দিত গ্রাম। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে এই গ্রামের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তরুন সেই সময় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রকন করেন। ইছামতি তীরে গড়ে উঠা এই গ্রামটির অবকাঠামো বলতে ছোট একটি ক্লাবঘর , মসজিদ এবং খেলার মাঠ, প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিলো। তবে কবরস্থান এবং খেলার মাঠ প্রায় সময় নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়তো হতো।ছোট বেলায় খেলার মাঠের পাশেই এক পায়ে দাঁড়িয়ে ছিলো একটি তাল গাছ। প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ছিলো টিনের তৈরি। সেই সময় ইছামতি নদীতে লঞ্চের আওয়াজ শুনলেই এক দৌঁড়ে নদীর পারে চলে যেতাম লঞ্চ দেখতে। লঞ্চের ঢেউ খেয়ে খেয়ে সাতার কাটার স্মৃতি আজও মনে গেঁথে রয়েছে। অজানা সেই লঞ্চ এর গল্প আমাদের নিজ গ্রামে গিয়ে বলতে থাকতাম। যাই হোক গত ১০ বছরের মধ্যেই গ্রামটিকে সাঁজিয়ে নিজের মতো করে। প্রথমেই মসজিদ এবং মসজিদের মিনার তৈরিতে হাত দেন। ৩/৪ বছরের মধ্যে কাংখিত ডিজাইন অনুযায়ী মসজিদ ও মিনার তৈরির পরিসমাপ্তি ঘটান। এর পর ডিজাইন করেন কবরস্থানের। ইছামতির তীর ঘেষে গ্রামটির কবরস্থান ও মাঠকে ভাংঙ্গনের হাত থেকে রক্ষার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। এই নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য নিজের সাথে সরকারের সহযোগীতাও কাজে লাগান। গত তিন বছরের মধ্যেই কবরস্থানও সুন্দর ডিজাইন করে কাজের সমাপ্তি ঘটান এই বছরেই। জরাজীর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও এখন দুতলা বিল্ডিং। অর্থাৎ ইছামতির পাশেই গড়ে উঠা এই মসজিদ, এই মিনার,, এই খেলার মাঠ, কবরস্থান, সরকারী প্রাথমিক নতুন ভাবে জেঁগে উঠেছে। আজ ইছামতি ছয় মাস জীবিত থাকলে বাকী সময় একটি বক্রাকারের খালের মতো দাঁড়িয়ে থাকে। তথাপি এই গ্রামের মানুষগুলো সব সময আধুনিকতা গ্রহনের অভ্যস্ত- তা কাজের মাধ্যমে প্রমান করেছেন। ইছামতি নদী রক্ষার আন্দোলন এই গ্রাম থেকেই শুরু হয়েছিলো। জনাব মোতাহারুল ইসলাম খান- যিনি এই সংগঠনের সেক্রেটারী তাঁর হাত ধরেই আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলনের পাশাপাশি নিজেদের গ্রামকেও সাঁজিয়েছেন ইছামতি পাশেই। দূর থেকে ইছামতির তীরে গড়ে উঠা গ্রামটি – পথিকের নজর কেঁড়ে নিচ্ছে।
স্বাধীনতার পর তৃতীয় প্রজন্মের হাতে গড়ে উঠছে এই অবকাঠামো। এই অবকাঠামোর যাত্রা শুরু হয় সুদীর্ঘকাল হতেই। অনেক ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে তৃতীয় প্রজন্মের হাত গড়ে উঠে কাংখিত গ্রামটি। এই গ্রামের একটি বড় বিষয় হলো এখানে শিক্ষার হার অন্যান্য গ্রামের চেয়ে বেশী। পাশাপাশি অনেক জ্ঞানী লোকের জন্মস্থান এই গ্রামে। সবচেয়ে বড় কথা এরা সকলেই সব সময় আধুনিক। এদের সব বয়সের মানুষগুলেই আধুনিক। একটি সমাজকে আধুনিক সমাজ বলা হবে তখন যখন ঐ সমাজের মানুষগুলো সামনের দিনগুলোতে কি ঘটবে তা দেখতে পান। স্বপ্ন সকলেই দেখতে পান না। দুই একজন মানুষ স্বপ্ন দেখেন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে এক সাথে কাজ করেন সকলে। এই বলমন্তচর গ্রামের ক্ষেত্রেও তাই।পরিকল্পনা গ্রহন করতে হবে এবং সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন করতে হবে- তবেই উন্নয়ন দৃশ্যমান হবে । আজ ইছামতিকে যারা মৃত বলে চালিয়ে দিতে চাচ্ছেন- তাদের কাছে বলমন্তচর নতুনভাবে জানান দিয়ে যাচ্ছেন- ইছামতি মারতে চাইলে এই গ্রাম ইছামতিকে বাঁচিয়ের রাখতে চায় দীর্ঘদিন। ইছামতির তীর ঘেষা গ্রামগুলো যদি বলমন্তচরের পথ অবলম্বন করে, আমার মনে হয়- এই ইছামতি আবার নতুনরুপে আর্বিভূত হবে। যেমনটি ইছমাতিকে ঘিরে নগর সভ্যতা গড়ে তুলেছিলেন জমিদারগণ। সেই সময় নদীকে কেন্দ্রে করেই অবকাঠামো গড়ে উঠেছিলো।স্কুল কলেজ, বাজার ঘাট ব্যবসা বানিজ্য সবকিছুই নদী তীর ঘেষে গড়ে উঠেছিলো। আজ বলমন্তচর গ্রাম নতুনভাবে ইছামতিকে জাঁকিয়ে তুলার ডাক দিয়েছেন- আসুন নদীকে নোংড়া নয় , এটিকে বাঁচিয়ে রেখে কিভাবে অবকাঠামো নদী পার দিয়ে গড়ে তোলা যায়- বলমন্তচর গ্রাম থেকে শিখে নেই। গাড়ীতে বসে বসে মিনারে থেকে যখন আজানের ধ্বানি ভেসে আসে – তখন মহা কবি কায়কোবাদের কথা মনে পড়ে যায।
মহা কবি আজ বেঁচে নেই- কিন্তু তাঁর শুনতে পাওয়া আজানের ধ্বনি আজ ছড়িয়ে পড়ছে নবাবগঞ্জের এক মাথা থেকে অপর মাথায়। তিনি হয়তো ইছামতির তীরে এমন গ্রাম আর এমন মিনারের স্বপ্ন দেখেছিলেন।

আপনার মতামত দিন