ঐতিহ্য হারিয়ে ধুঁকছে দোহার ও নবাবগঞ্জের তাঁতশিল্প

74

একসময় মাকুর (তাঁত বোনার কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রবিশেষ) খটখট শব্দে মুখর থাকত দোহার ও নবাবগঞ্জের জনপদ। এই দৃশ্য এখন খুব একটা চোখে পড়ে না। হাতে টানা তাঁতের জায়গা দখলে নিয়েছে পাওয়ার লুম বা বিদ্যুৎ–চালিত তাঁত। সেই সঙ্গে তাঁত বোর্ডের ঋণ বিতরণে বৈষম্য, সুতা ও কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বন্ধ হতে চলেছে ঐতিহ্যবাহী হস্তচালিত তাঁতশিল্প।

নবাবগঞ্জের জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের শংকরদিয়া গ্রামের ষাটোর্ধ্ব রফিক মিয়া একসময় তাঁতের কাজ করতেন। টানা লোকসানের কারণে এই পেশা ছেড়ে এখন তিনি ভ্যানগাড়ি চালান। রফিক মিয়া বলেন, ‘আমার বাপ–দাদার ১৪ডা তাঁত ছিল। লুঙ্গি বুনতে খরচ বেশি ও লোকসান হয়। আট-দশ বছরে সব তাঁত হারাইয়া গেছে। তাঁতে যদি পেটে ভাত না দেয়, তাইলে তাঁত বুইনা কী করমু। পোলাপান লইয়্যা তো বাঁচতে অইবো। তাই বাধ্য হইয়া অহন ভ্যানগাড়ি চালাই।’

সম্প্রতি দেখা যায়, ঢাকার নবাবগঞ্জের বারুয়াখালী, শিকারীপাড়া, জয়কৃষ্ণপুর ও নয়নশ্রী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে এখনো কিছু পরিবার তাঁতশিল্পকে আঁকড়ে ধরে জীবনসংগ্রাম করছেন। দোহার উপজেলার জয়পাড়া, লটাখোলাসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, লুঙ্গি তৈরির সুতা ও কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির কারণে তাঁতিরা এখন আর লুঙ্গি বুনছে না। অনেক তাঁতি পরিবার জীবন–জীবিকার তাগিদে পেশা পরিবর্তন করে বিভিন্ন পেশায় সম্পৃক্ত হয়েছেন। তাঁতের কাজ না থাকায় অনেকে তাঁত সরিয়ে অন্যত্র ফেলে রেখেছেন। তাঁতগুলো জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে।

অন্য খবর  শেষ হলো বিডি ক্লিন-এর ‘সেভ আর্থ সেভ বাংলাদেশ’

তাঁতশিল্প এলাকাগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, তাঁতশিল্পীরা কয়েক বছর আগেও যেমন উৎফুল্ল চিত্তে শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা, গায়ের চাদর, বিছানার চাদরসহ নিত্যব্যবহার্য কাপড় তৈরি করতেন,এখন আর আগের মত সে পরিস্থিতি দেখা যায় না । আর আগের মতো হাতে বোনানো শাড়িগুলো চোখে পরে না। বিদ্যুতের তাঁতের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে হস্তচালিত এই তাঁতকে। তার ওপর মহাজনের সুদ-দাদন আর কাপড়ের দামের চেয়ে কাঁচামালের উচ্চমূল্য অস্তিত্বসংকটে ফেলেছে এ শিল্পকে। এসব কারণে হস্তচালিত তাঁত দিন দিন কমছে। তাই দিন দিন এই তাঁতশিল্পের কর্মগুলো ক্রমাশয়ে হারিয়ে যাচ্ছে ।

তাঁতশিল্প নিয়ে দোহার উপজেলার উত্তর জয়পাড়া এলাকার বাসিন্দা আতর আলী বলেন, ‘আমাদের উপজেলায় ১৮ হাজারের বেশি তাঁতি ছিল। কমতে কমতে জয়পাড়া এলাকায় প্রায় দুই হাজার তাঁতি ছিল। এখন মাত্র চার–পাঁচজন তাঁতি তাঁত বোনে।’

দোহার নবাবগঞ্জ উইভার্স কো-অপারেটিভ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইউনিয়ন লিমিটেডের সভাপতি হুমায়ুন কবীর জানান, তাঁদের সমিতির আওতাভুক্ত ১৭ হাজার তাঁতি পরিবার রয়েছে। দিনদিন সুতা ও কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় তাঁতিরা পেশা বদল করছেন। বঙ্গবন্ধুর সময় আগে এই সমিতির মাধ্যমে তাঁতিদের রং ও সুতাসহ অন্যান্য কাঁচামাল দেওয়া হতো। বর্তমানে এসব অনুদান দেওয়া বন্ধ রয়েছে।

অন্য খবর  সাগরে নৌকাডুবে ১৮০ রোহিঙ্গার মৃত্যুর আশঙ্কা

বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড দোহার বেসিক সেন্টারের সহকারী কর্মকর্তা আবুল হাসেম বলেন, তাঁতিদের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সুযোগ–সুবিধা দেওয়ার ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে

আপনার মতামত দিন