উৎপাদন বেশিঃ তবুও দোহারে পাট চাষীরা আগ্রহ হারাচ্ছে

73

শরিফ হাসান, news39.net: পাট উৎপাদনে ঢাকা জেলা অন্যতম। সারাদেশের সোনালী আশের অন্যতম শীর্ষ উৎপাদন কেন্দ্র ঢাকা জেলা হলেও, দোহার উপজেলায় গত কয়েক বছরে পাট চাষ করে ন্যায্যমূল্য পায়নি কৃষকরা। তাই পাট চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে কৃষকরা।

চলতি মৌসুমে দোহার উপজেলায় আগের তুলোনায় পাট চাষ কমেছে। গতকয়েক বছরের তুলনায় উপজেলার ৮টি ইউনিয়নেই পাটের আবাদ কমেছে এবছর। পানির অভাবে পাটে পানি না দিতে পারা ও জাগ দিতে না পেরে এবং শ্রমিকের দাম বেশি হওয়ায় লোকসানের মুখে পড়ে উৎপাদন খরচ তুলতে কৃষককে খেতে হচ্ছে হিমশিম। ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার কারনে অনেক কৃষক এখন পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে।

এক সময় পাটকে সোনালী আঁশ বলা হলেও সেই স্বপ্নের সোনালী আঁশ পাটকে ঘিরে থাকতো কৃষকের স্বপ্ন। সময় মতো বৃষ্টি না হওয়ায় কারনে ভালো বীজ রোপণ করেও কাঙ্খিত ফলন পাচ্ছে না দোহারের কৃষকরা। এতে দুশ্চিন্তায় পরেছে সোনালী আঁশের পাট চাষিরা। আর সে জন্য সোনালী আঁশ পাট চাষবাদ দিয়ে অন্যান্য ফসল উৎপাদনে ঝুঁকছে তারা। কাঙ্খিত দাম না পেয়ে হতাশ পাট চাষীরা। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন পাট চাষীরা। প্রতি মণ পাট ২৩’শ থেকে ২৫’শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, গত বছর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ৬০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়। চলতি মৌসুমে ৭০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে।

উপজেলার বিলাশপুর ইউনিয়নের বড় রামনাথপুর গ্রামের পাট চাষী আলাউদ্দিন খা(৬০) জানান, দেড় বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। এইবার তো সময়মতো বৃষ্টি হয় নাই। তাই এবার ফলনও ভাল হয় নাই। তাছাড়া দেড় বিঘা জমিতে শ্রমিকের মজুরিসহ ১৫ হাজার টাকা খরচ গিয়েছে। বাজারে পাটের দামও ২ হাজার থেকে দুই হাজার পাঁচশত টাকা। আমি প্রায় বিশ বছর ধরে চাষা বাদ করে আসছি। দুই তিন বছর ধরে লুকশান হচ্ছে। সে জন্য চিন্তা করতেছি সামনে বছর আর পাট চাষ করবো না। খরচ বেশী পরে ফলনের থেকে সে জন্য।

অন্য খবর  নবাবগঞ্জে নদীতে ডুবে কলেজ ছাত্রের মৃত্যু

একই ইউনিয়নের রামনাথপুর গ্রামের হাসানা বেগম জানান, আমি এ বছর ১ বিঘা নয় কাটা জমিতে পাট চাষ করেছি। এতে আমার ১৬ হাজার টাকা খরচ গিয়েছে । কাঙ্খিত দাম পাইনা আবার লোকজন নাই। টাকার জন্য লোকও নিতে পারিনা সে জন্য এবার ১ বিঘা নয় কাটায় জমিতে পাট চাষ করেছি। লোকসান দিয়ে সামনে বছর পাট চাষ করার আগ্রহ নেই। খরচের চেয়ে কম দামে বিক্রি করতে হয় পাট।

পৌরসভার চরলটাখোলা গ্রামের পান্নু তালুকদার বলেন, ১ বিঘা জমির পাটে উৎপাদন করতে শ্রমিকের মজুরিসহ ৭-৮ হাজার টাকা পরে। পাট চাষ করে তেমন কোন লাভ করতে পারি না। সে জন্য লোকসানের কারনে দিন দিন পাট চাষ কমিয়ে দিচ্ছেন। এ বছর সময় মতো বৃষ্টি না হওয়া পাট জাগ দেওয়ার জন্য পানি পাওয়া যায় নি। তাছাড়া সেচের পানি দিয়ে পাট চাষের কারনে খরচ বেশী পরেছে। বৃষ্টি সময় মত হলে পাটে পর্যাপ্ত পানি দিতে পারতাম এবং পাট জাগও দিতে পারতাম। সময়মত সব কিছু করতে পারলে হয়তো লাভের মুখ দেখতাম। এখন আল্লাহই ভাল জানে কি হবে তবে আশা করি হয়তোবা কিছু টা লাভ হবে।

পৌরসভার চরলটাখোলা গ্রামের শেখ বাচ্চু জানান, আমি নিয়মিত একজন্য কৃষক আমি সারাবছরই সিজনের ফসল ফলাই। গতবছর আমি পাট কেটে জাগ দিয়ে রেখেছিলা আমার সব পাট বন্যার পানিতে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে। সেই পাট আমি ডুবিয়ে ডুবিয়ে কিছু উঠতে পেরেছিলাম কিন্তু সবগুলো উঠাতে না পারায় আমার ২৯ হাজার টাকা লুকশান হয়েছে। আমি এ বছর চার বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। আমি তিন বছর ধরে পাট চাষ করতেছি। এ বছর পাটে সময় মত পানি না দিতে পারায় তেমন ভাল ফসল হয়নি। পানি না থাকায় আমি সেচের পানি দিয়ে পাট চাষ করেছি এতে খরচবেশী হয়েছে। আমার খেতে সেচের পানি দেওয়ার জন্য ষাট ফুট লতা পাইপের দরকার ছিল আমি মেম্বার,চেয়ারম্যান এর কাছে গিয়ছি তারা ব্যবস্থা করে দেয়নি। পরে আমি উপজেলায় যোগাযোগ করলে কৃষি স্যার দিতে চেয়েছিল কিন্তু আমি অসুস্থ থাকার জন্য সেটি অনতে পারি নাই। পাঠ চাষের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সার দেওয়া হয়েছে। আমার সার এসেছিল কিন্তু আমি অসুস্থতার জন্য যেতে পারি নাই হারুন মেম্বারের কাছে সার আনতে পরার্বতীতে আমি তার সাথে যোগাযোগ করলে সে বলে সার নাই শেষ হয়ে গিয়েছে। আমাদের জয়পাড়া বাজারে সিন্ডিকেট রয়েছে যার কারনে আমরা ভাল পাট নিয়ে গেলেও সে অনুযায়ী দাম পাই না।

অন্য খবর  দোহার উপজেলায় ২০ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড চালু

এব্যাপরে দোহার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ ইয়াকুব মামুন বলেন, গত বছরের তুলোনায় এ বছর ১০ হেক্টর বেশী পাট চাষ হয়েছে। তাছাড়া এবার আমরা ১০০ জন কৃষককে ভালমানের পাটের বিজ দিয়েছি। পাট কম হওয়ার কারণ কি এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমাদের দোহার উপজেলায় ৮ টি ইউনিয়ন রয়েছে সেখান থেকে কিছু ইউনিয়নে পাট চাষ কম হয়েছে আবার কিছু ইউনিয়নে বেশী হয়েছে যেমন মুকসুদপুর ইউনিয়ন পাট চাষ বেশী হয়েছে সেজন্য সব ইউনিয়ন মিলে এবার পাটচাষ গতবছরের তুলেনায় বেশী হয়েছে। তবে পাটের আবাদের সময় বৃষ্টি না হওয়ায় এবার পাট চাষের কিছুটা সমস্যা হয়েছে কৃষকদে।

আপনার মতামত দিন