ক্রাইম ইউনিট, news39.net: এতোদিন শুনেছেন খাল কেটে কুমির আনা। এখন দোহারের মাহমুদপুর ইউনিয়নবাসী দেখছে ড্রেজিং করে, পদ্মা নদীকে কাছে আনা। দোহার উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের ইট ভাটার দক্ষিণ পাশে পদ্মা নদীর ১০০ মিটারের মধ্যে কৃষি জমি কেটে নিয়ে এখন বিশাল পুকুর বানিয়ে ফেলেছে। যেকোন সময় পদ্মা নদীর পাড় ভেংগে যেতে পারে এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক মেরিন ড্রাইভ ও বাধ নির্মাণের ক্ষেত্রে স্থানটি ঝুকিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া নদীর তীর ঘেষে রয়েছে বালু উত্তোলনের জন্য ৩টি বলগেট।
news39.net ক্রাইম ইউনিট সরজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, চর মাহমুদপুর গ্রামে পদ্মা নদীর পাড় থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরে ড্রেজিং করা হচ্ছে আবাদী জমিতে। এর অতি সন্নিকটেই রয়েছে মাহমুদপুর ইউনিয়ন অফিস। আবার পদ্মা নদীর পাড় থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরে প্রাকৃতিকভাবে তৈরী হয়েছে একটি খাল। যে খালে পদ্মা নদী থেকে সরাসরি পানি প্রবাহিত হয়। পদ্মার পাড়ের পাশেই রয়েছে বিস্তীর্ণ আবাদী জমি। কৃষি জমিতে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে সেখান থেকে মাটি ও ভিটা বালু উত্তোলন করায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে অনেক ফসলি জমি। যেখানে চাষ হতো বাদাম ও আমন ধান । এছাড়াও ভাঙনের হুমকিতে পড়ছে মেরিন ড্রাইভ ও বাধ।
স্থানীয় এলাকাবাসী news39.net কে জানান, দীর্ঘ দিন ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হয়েছে। সে সময়ে ড্রেজার বন্ধের জন্য পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়। পুলিশ এসে ড্রেজারের মেশিন ও পাইপ ভেঙে দিয়ে বালু উত্তোলন করা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু তার পরদিনই পুণরায় বালু উত্তোলন শুরু হয়ে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা চলে। এভাবেই ঘটনা হয়ে আসছে।
এই ব্যাপারে ড্রেজার ব্যবসায়ী নিজাম উদ্দিন বলেন, ইয়াকুব দেওয়ান আমার কাছ থেকে ড্রেজার ভাড়া নিয়ে মাটি কাটছে। তারা প্রশাসনের কাছে থেকে অনুমতি নিয়েছে কিনা সে বিষয় আমি কিছু জানি না।
এ বিষয়ে ইয়াকুব দেওয়ান এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বলেন, আমি আমার নিজের জমি থেকে মাটি কাটছি। নিজের জায়গা থেকে মাটি কাটতে আবার কোন অনুমতি লাগে? আর কতৃপক্ষ বিবেচনায় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেনকে বলেছি। তিনি আমার কাছে লোক, প্রতিবেশী।
মাহমুদপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমি এবিষয়ে কিছু জানি না। তাদেরকে আমি কখনোই এসব বিষয়ে অনুমতি দেইনি। এতে পার ভেংগে নদী ভিতরে ঢুকে যাবে। সাংবাদিক ভাইদের নিকট আবেদন, আপনারাও বিষয়টি উপজেলা চেয়ারম্যানকে অবহিত করুন।
সরকারের বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০-এর ধারা ৫-এর ১ উপধারা অনুযায়ী, পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্য কোনো মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। ধারা ৪-এর (খ) অনুযায়ী, সেতু, কালভার্ট, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ। আইন অমান্যকারী দুই বছরের কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
সরকারি বিধিমোতাবেক, কৃষি জমিতে পুকুর খননও করা যাবে না। ক্ষেত্র বিশেষে পুকুর খননের প্রয়োজনীয়তা থাকলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে পুকুর খনন করা যাবে।
দোহার উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা লুতফুন্নাহার জানান, আবাদী জমি কেটে পুকুর তৈরির জন্য কেউ আমাদের কাছে থেকে কোন অনুমতি নেয়নি।
বিষয়টি দোহার উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র জানান, ইতঃপূর্বে পাঠিয়ে আমি ড্রেজার বন্ধ করে দিয়েছিলাম। পুনরায় ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করায়, দোহার উপজেলা প্রশাসন অবৈধভাবে বালু উত্তোলন কারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিবে।
দোহার উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা ফিরোজ মাহমুদ নাঈম news39.net কে বলেন, আপনাদের মাধ্যমে আমি বিষয়টি অবহিত হলাম। প্রশাসন দ্রুত এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিবে। কোন অবৈধ ড্রেজার বা বালুর ব্যবসা করতে দেয়া হবে না।