মানচিত্র থেকে পদ্মায় হারিয়ে যাবে দোহার; তবুও বেড়িবাঁধের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হবে না

355

আবু নাইম তাইমিয়া, নিউজ৩৯ ♦ নবাব সিরাজদৌল্লার সাথে বিশ্বাশঘতক রাজা রায়বল্লভের সকল কীর্তি নাশ করেছিল প্রমত্তা পদ্মা। তাই তার নাম হয়েছিল কীর্তিনাশা। সেই পদ্মা আবারো ধারন করেছে ভয়াবহ সে রুপ। আজ পদ্মা সত্যিই কীর্তিনাশা। গত চার দিনে দোহারে বিলীন হয়েছে ২০০ ঘরবাড়ি। মেঘুলা বাজারের ব্রীজের কাছে চলে এসেছে পদ্মা।

এভাবে চললে হয়তো এ বর্ষায় মেঘুলা বাজার ইতিহাস হবে। হারিয়ে যাবে, তলিয়ে যাবে পদ্মায় সমৃদ্ধ ও ঐতিহ্যবাহি এই জনপদ। গতবছর হারিয়ে গেছে রাণিপুর ও পশ্চিমচরের ৮০ শতাংশ। হারিয়ে গেছে ধুলশরা, নয়াবাড়ি; হারিয়ে যাচ্ছে বাহ্রা । দিন দিন ছোট থেকে ছোট হয়ে যাচ্ছে দোহার।

এভাবে চললে আর দোহার-ঢাকা রাস্তা যে’টি বাধ হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে তা যে কোন স্থানে ভেঙে গেলে; দ্রুত তলিয়ে যাবে দোহার। বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে বিলীন হয়ে যাবে দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদেশী মুদ্রা অর্জনকারী দেশের এই জনপদ। দোহার উপজেলার নয়াবাড়ী ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা পদ্মায় বিলীন হচ্ছে। নয়াবাড়ি আর নেই বললেই চলে। চার দিনে তীব্র ভাঙনে পদ্মায় ১০০ ঘরবাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে।

এলাকাবাসী দাবি করেন, ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে দোহারে এক জনসভায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাঙন ঠেকাতে পদ্মা রক্ষা বেড়িবাঁধ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি আবার ক্ষমতায় আসার পর আজ অবধি নদীপারের মানুষকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হয় নি।

স্থানীয় বাসিন্দা রেজাউল বিশ্বাস বলেন, ‘শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নন, নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান, সাবেক গৃহায়ণ প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান খান, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তালুকদার মাহবুবুর রহমান, এবং বর্তমান সাংসদ সালমা ইসলামসহ সবাই আমাদেরকে আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু কেউই কাজ করে দেখাচ্ছেন না। এখন সৃষ্টিকর্তার ওপরই সব ছেড়ে দিয়েছে এলাকার মানুষ।’

অন্য খবর  জনদুর্ভোগঃ মুকসুদপুরের মৌড়ার রাস্তার বেহাল দশা, সংষ্কারের উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের

হুমকির মধ্যে রয়েছে নারিশা বাজার, বাহ্রা ঘাট, ধোয়াইর বাজার, ঐতিহ্যবাহী বাহ্রা হাবিল উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়সহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গুরুত্বপূর্ন স্থাপনা। এ ব্যাপারে স্থানীয় সাংসদ সালমা ইসলাম বলেন, ‘ওয়াদা দিয়েছি, ভোট নিয়েছি। কাজটা শুরু করতে না পারায় ওই এলাকার মানুষগুলোর কাছে যেতেও কষ্ট লাগে। তবে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও জলবায়ু তহবিল থেকে দোহারের পদ্মা রক্ষায় বেড়িবাঁধ তৈরি করতে একটি পত্র (ডিও লেটার) দেওয়া হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব কাজটি করতে চাই এবার এবার হয়তো করতে পারবো।’

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পদ্মার পানি বেড়ে যাওয়ায় নারিশা ইউনিয়নের রানীপুর, মধুরখোলা, পশ্চিমচরসহ  নয়াবাড়ী ইউনিয়নের বাহ্রাঘাট ও ধোয়াইর এলাকাযয় গত শনিবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত প্রায় একশ ঘরবাড়ি ও দোকানপাট নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ নিয়ে চলতি বছর দের শতাধিক পরিবার ভাঙনের কবলে পড়ে সব হারিয়েছেন। আতংকে রাতে ঘুমাতে পারছেন না এলাকার মানুষ। আবার অনেকে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন অনেকে। এছাড়া দোহার কাঁশিয়াখালী বেড়িবাঁধের বাহ্রাঘাট এলাকা হুমকির মুখে রয়েছে।

স্রোতের চাপে যেকোনো সময় বাঁধ ধসে পড়তে পারে। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন বাঁধ এলাকার কয়েক হাজার পরিবার। সরেজমিনে দেখা যায়, ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষ স্থাপনা সরাতে ছোটাছুটি করছেন। কেউ ঘরবাড়ি সরানোর কাজে ব্যস্ত। কেউ আবার গাছপালা কাটছেন। দু-একজন চলে যাচ্ছেন অজানা গন্তব্যে।

ক্ষতিগ্রস্থ কয়েকজন জানান, পানি বেড়ে যাওয়ায় গত শনিবার সন্ধ্যা থেকে পদ্মা হয়ে ওঠে অনেক আগ্রাসী। বেশ কিছু ঘরবাড়ি ও দোকান নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। নদীর কাছাকাছি যাঁদের ঘরবাড়ি, তাঁরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। ঘরবাড়ি ও মূল্যবান জিনিস সরিয়ে নিচ্ছেন।

অন্য খবর  মানুষের পাশে থেকে জাতীয় পার্টি উন্নয়ন করতে চায়: সালমা ইসলাম এমপি

পদ্মায় বার বার ভাঙ্গনের শিকার নায়াবাড়ীর বাসিন্দা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে দোহারে তাঁর নির্বাচনী সভায় দোহার- নবাবগঞ্জবাসীকে পদ্মার ভাঙন রোধে বেড়িবাঁধ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু সাত বছরেও প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হয় নি। এ বিষয়ে আমরা জনগণের কাছে লজ্জিত।’

নির্মল রঞ্জন বলেন, বাঁধ নির্মাণে তিনি বিভিন্ন দপ্তরে চেষ্টা-তদবির করছেন। দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূরুল করিম ভূঁইয়া বলেন, ‘দোহারে পদ্মার ভাঙন নিয়ে আমরা সত্যিই আতঙ্কিত। বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায় ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) জানানো হয়েছে।’

পদ্মায় বাধ নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামকারী তরুণদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার সংগঠন দোহার-নবাবগঞ্জ সোশ্যাল মুভমেণ্টের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম বলেন, “আমরা বাধের দাবীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি। মিছিল মিটিং করেছি। সকল মিডিয়ায় তা প্রচার করেছি। সম্ভাব্য পরিস্থিতি নিয়ে ডকুমেণ্টরি নির্মাণ করে সারা দোহারে প্রদর্শন করেছি এবং এখনো করছি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা সর্বদা আহবান জানাচ্ছি। আজ দোহারবাসীর একটাই দাবী- বাধ চাই। বর্ষা আসবে, নদীর পাড় ভাঙবে আর আমরা প্রতিশ্রুতি শুনবো তা হতে পারে না। দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাই এবং জানাতে হবে, আমাদের বাচাতে পদ্মায় বাধ চাই। রাজনীতিবীদদের কাছে অনুরোধ দোহার বাচলে আপনারাই মন্ত্রী বা এমপি হবেন। দয়া করে ব্যবস্থা নিন। মানুষের পাশে দাঁড়ান। বর্তমানে আপদকালীন হোক; সেক্ষেত্রে বুয়েট বা সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর বা নদী বিশেষজ্ঞদের আনা যেতে পারে অস্থায়ী ব্যবস্থা কার্যকরণে।”

আপনার মতামত দিন