সৈয়দ হক রয়ে গেলেন পরানের গহীনে

719
সৈয়দ হক রয়ে গেলেন পরানের গহীনে

‘আলো নিভে যায়, নিভে যায় আলো একে একে জানালায়। থেমে যায় গান, তারপরও প্রাণ; বাঁশিটির মতো বেজে চলে যেন সবই আছে সবই ছিলো।’ সৈয়দ শামসুল হক চলে গেলেন, কিন্তু রয়ে গেলেন হাজারও পাঠক ভক্তকুলের পরানের গহীনে। গতকাল মঙ্গলবার স্বজন-বন্ধু-দুর্জনদের কাঁদিয়ে চলে যান তিনি। ক্যান্সারে আক্রান্ত এ কবি জীবন সায়াহ্নে বলেছেন, ‘কত লেখা এখনও বাকি’। লেখা হলো না বটে, কিন্তু সৈয়দ হকের অসামান্য অবদানগুলো রয়ে গেল বইয়ের পাতায় পাতায়।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সৈয়দ শামসুল হককে শেষ বিদায় জানালেন ভক্ত অনুরাগীরা। শহীদ মিনারে ১১ টায় তার মরদেহ আনা হলে ঠিক তার কবিতার মতো বেজে ওঠে গত জুনে লেখা কবিতা- ‘ফুলের গন্ধের মতো থেকে যাবো তোমার রুমালে/ ধূপের গন্ধের মতো তোমাদের শান্ত সন্ধ্যাকালে/সমস্ত দিনের শেষে থেকে যাবো নদী পারাপার/তখনো যাত্রীর দেখা পাওয়া যাবে এই নদী পার।
মরদেহ শহীদ মিনারে এলে প্রথমেই রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এর পর সর্বস্তরের মানুষ মরদেহের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
শ্রদ্ধা জানানোর পর রামেন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘তিনি যে জায়গায় হাত দিয়েছেন সেখানেই সোনা ফলেছে। তার প্রায় পৌনে ২০০ কবিতা, ৮টি গল্পসহ অসংখ্য রচনা রয়েছে। তিনি জীবনে সময়ের অপচয় করেননি। তিনি তার যে সৃষ্টি রেখে গেছেন তার বাংলা সাহিত্যের জন্য বিপুল সম্ভার। আমরা সেগুলো পড়লে সমৃদ্ধ হবো। তার রচিত মঞ্চনাটক পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাটক। সবচেয়ে বড় কথা তার বুকে ছিল বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু।’
নাট্য ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ বলেন, ‘বাংলা কাব্য সাহিত্যের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। তিনি যেই ধারার লেখক এ ধরনের লেখকের নাটক জনপ্রিয় হয় বিষয়টি তা নয়। কিন্তু সেটা নতুন উচ্চতায় নিয়ে যায়। তার নাটকগুলো ছিল উচ্চমানের। তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় লন্ডনে বসে শেকসপিয়ারের হ্যামলেট নাটকের অনুবাদ করেছেন।’
সৈয়দ হকের ছেলে দ্বিতীয় সৈয়দ হক বলেন, ‘আমি বাবা হারিয়েছি, কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে বাংলাদেশ একজনকে হারিয়েছে। এতো শ্রদ্ধা দেখে আমার গর্ব হচ্ছে।’
সৈয়দ হক ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুড়িগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কবিতা, উপন্যাস, নাটক,ছোটগল্প তথা সাহিত্যের সকল শাখায় সাবলীল পদচারণার মধ্য দিয়ে তিনি হয়ে ওঠেন সব্যসাচী। ১৯৬৪ সালে মাত্র ২৯ বছর বয়সে বাংলা একাডেমী পুরস্কার পান সৈয়দ শামসুল হক। ১৯৫০-এর দশকে প্রকাশিত হয় তার প্রথম উপন্যাস ‘দেয়ালের দেশ’। পরে ‘খেলারাম খেলে যা’, ‘নিষিদ্ধ লোবান’, ‘সীমানা ছাড়িয়ে’, ‘নীল দংশন’, ‘বারো দিনের জীবন’, ‘তুমি সেই তরবারী’, ‘কয়েকটি মানুষের সোনালী যৌবন’, ‘নির্বাসিতা’র মতো বিখ্যাত উপন্যাস উপহার দিয়েছেন। তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘একদা এক রাজ্যে’, ‘বৈশাখে রচিত পঙক্তিমালা’, ‘পরানের গহীন ভিতর’, ‘অপর পুরুষ’, ‘অগ্নি ও জলের কবিতা’। ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, ‘নুরুলদীনের সারা জীবন’ সৈয়দ শামসুল হকের বিখ্যাত কাব্যনাট্য।

আপনার মতামত দিন