১৩ বছর ধরে ভোটাধিকার বঞ্চিত দোহারের তিন ইউনিয়নের জনগণ

789
দলীয় প্রতীকেই নির্বাচন হবে দোহার-নবাবগঞ্জে

দোহার পৌরসভার মামলা জটিলতার কারণে তিনটি ইউনিয়নের জনসাধারণ ভোটাধিকার ও উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই তিনটি ইউনিয়ন হলো— রাইপাড়া, সুতারপাড়া ও মাহমুদপুর। এর মধ্যে সুতারপাড়া ও রাইপাড়ায় কাজ চলছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দিয়ে।

রাইপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান গত বছরের রমজানে মারা যান। একজন ইউপি সদস্য সেখানে দায়িত্ব পালন করছে। নির্বাচনী আইনে কোনো জনপ্রতিনিধি মারা গেলে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার বিধান থাকলেও তা হয়নি। ফলে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রমও অনেকটা থমকে আছে। কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

এছাড়া, মাহমুদপুর ইউনিয়নের চর-লটাখোলা গ্রামবাসী যেন পৌরসভার কাছে ছিটমহলের বাসিন্দা। তারা ইউনিয়ন বা পৌরসভা কোনোটিরই সেবা পাচ্ছেন না বলে জানা গেছে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও ভোগান্তি বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, ২০০৩ সালে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলেও একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক চক্রের ইশারায় নির্বাচনী আয়োজন বন্ধ হয়ে যায়। দেখতে দেখতে প্রায় ১৩ বছর নির্বাচন ছাড়াই চলছে ৩টি ইউনিয়নের সব কার্যক্রম। চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন ইউপি সদস্যরা। নির্বাচন না হওয়ায় উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নয়ন কাজ হয়নি। বরং দরিদ্র জনগোষ্ঠী বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতাসহ বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

অন্য খবর  মা ইলিশ শিকার করায় ০৮ জনকে ১ বছরের কারাদন্ড

রাইপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আবদুল বারেক বলেন, ‘ভোট ছাড়া দীর্ঘদিন কোনো জনপ্রতিনিধি দায়িত্ব পালন করলে সেখানে সেবা পেতে কষ্ট হয়। কারণ, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহি থাকে। ভোট পাওয়ার আশায় তারা কিছুটা হলেও মানুষের সেবা করে। তাই সব বাধা-বিপত্তি ও মামলাগুলো নিষ্পত্তি করে জনগণের স্বার্থে দ্রুত নির্বাচন দেয়া জরুরি। এ দিকে, লটাখোলা সেতুটি দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থায় পরে থাকলেও রাইপাড়ার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেই। খেয়াল নেই মাহমুদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানেরও। মাথাব্যথা নেই দোহার পৌরসভার। পরে কয়েক বছর বেহাল অবস্থায় পরে থাকলেও সেতুটি চলাচলের অনুপযোগী পড়ে থাকে।

চর লটাখোলা গ্রামের বাসিন্দা আলাল উদ্দিন অভিযোগের সুরে বলেন, পৌর মেয়র ও কিছু প্রভাবশালী চক্র গোপনে সমঝোতার ভিত্তিতে মামলা করে আমাদের নাগরিক অধিকার হরণ করছে। শুধু কালক্ষেপণ ও বিনা নির্বাচনে পদে থাকতেই এ ধরনের মামলা দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে প্রায় এক যুগের বেশি সময়। চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য কোনো উন্নয়নের ধার ধারেন না। কেউ এলাকার উন্নয়নের কথা বললে, সরকারিভাবে কাজ না আসলে আমি কী করব— জনপ্রতিনিধিদের এ রকম বক্তব্য আছে বলে কেউ কেউ অভিযাগ করেন। দোহারের রাইপাড়া, সুতারপাড়া ইউনিয়নই খুবই গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। প্রবাসী-অধ্যুষিত হওয়ায় এই দুটি ইউনিয়নের নির্বাচনী উত্সব হয় ভিন্ন আমেজে। কিন্তু ১৩ বছর ধরে এ দুটি ইউনিয়নের ভোটাররা নির্বাচনী উত্সব থেকে বঞ্চিত।

অন্য খবর  জয়পাড়ায় হলে আবার অশ্লীল সিনেমা প্রদর্শন

মাহমুদপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আবদুস সালাম জানান, নির্বাচন না হওয়াতে জনপ্রতিনিধিদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। ভারপ্রাপ্তরা উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ সঠিকভাবে কাজে না লাগিয়ে অনিয়ম করছেন। ফলে এসব ইউনিয়নের গ্রামের কাঁচাপাকা সড়কগুলোর বেহালদশা। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম।

এ ব্যাপারে দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও কে এম আল-আমিন বলেন, ‘এগুলো নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা আছে বলে শুনেছি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব এসব দেখভালের। তারা কোনো নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত আমাদের কিছু করার নেই।

 

আপনার মতামত দিন