সালমান রহমানের নির্দেশে লিজের জমিতে দোহার আওয়ামীলীগের দলীয় কার্যালয় উচ্ছেদ

528

দোহারে ‘অবৈধ ভবনের’ আওয়ামী লীগ কার্যালয় উচ্ছেদে সালমান এফ রহমানের নির্দেদোহার উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কার্যালয় হিসেবে ২০১২ সাল থেকে ব্যবহার হয়ে আসা ভবনটি অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় সেখানে কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান। ইতিমধ্যে ওই ভবনে থাকা দলীয় কার্যালয় থেকে আসবাবপত্র স্থানান্তর করা হয়েছে। খুলে ফেলা হয়েছে দলীয় সাইনবোর্ডও।

জানা যায়, ২০১২ সালে লিজকৃত সম্পত্তির শর্ত ভেঙে উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে দোহার উপজেলা আওয়ামী লীগের নামে বরাদ্দকৃত সাত শতাংশ ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মান্নান খানের ভাই মোতালেব খানের নামে বরাদ্দকৃত চার শতাংশ জমিতে মোতালেব খান নিজস্ব অর্থায়নে চারতলা বিশিষ্ট একটি ভবন তৈরি করেন। ভবনটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার সামান্য অংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় হিসেবে রেখে পুরো ভবনের ভাড়া ও সুবিধা মোতালেব খান নিজে ভোগ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

দোহার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলী আহসান খোকন শিকদার বলেন, ভবনের বিষয়টি জানার পর বর্তমান এমপি সালমান এফ রহমান আমাদের ডেকে নির্দেশ দিয়েছেন- অবৈধ ওই ভবন থেকে আওয়ামী লীগ অফিসের কার্যক্রম সরিয়ে নিতে।

তাঁর নির্দেশমতো আমরা সেখানে দলীয় কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছি এবং দলের সাইনবোর্ড সরিয়ে নিয়েছি। বর্তমানে দোহার উপজেলা আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ফজলুর রহমান ফাউন্ডেশনের অফিসটি ব্যবহার করা হচ্ছে। দোহার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবুল বলেন, ওই ভবনের পেছনের অংশের সাত শতাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের জন্য আমার ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলী আহসান খোকন শিকদারের নামে লিজ নেয়া। সামনের অংশে চার শতাংশ মোতালেব খানের নামে। কিন্তু তিনি নিজস্ব অর্থায়নে এই মোট এগারো শতাংশ জায়গায় চারতলা একটি ভবনই করেছেন। কথা ছিল আওয়ামী লীগ কার্যলয়ের নিচের অংশে থাকা দোকানগুলোর পজেশন বিক্রি করে তিনি আমাদের অংশের ভবনের নির্মাণ ব্যয় তুলে নিবেন। কিন্তু জমি যেহেতু লিজের সেহেতু ওই দোকানগুলোর পজেশনও কেউ কিনতে আগ্রহী হননি। আর ভবনের বেশি অংশ মোতালেব খানই ব্যবহার করে ভাড়া তুলেছেন।

অন্য খবর  দোহার থেকে আটককৃত তিনজন ‘নব্য জেএমবি’র সদস্য: সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব

নজরুল ইসলাম বাবুল বলেন, ইতিমধ্যে আমরা বর্তমান এমপি সালমান এফ রহমানের নির্দেশে ওই ভবন ছেড়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের ব্যানার, ফেস্টুন সরিয়ে ফেলেছি। আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের জন্য বিকল্প জায়গা খোঁজা হচ্ছে বলে জানান তিনি। এমপি বলেছেন, প্রয়োজনে নিজস্ব অর্থায়নে তিনি দলীয় কার্যালয়ের জন্য ভবন করে দিবেন। এ বিষয়ে মোতালেব খান বলেন, তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমোদন নিয়েই আমি ব্যক্তিগত অর্থায়নে ভবনটি নির্মাণ করেছি। লিজের সম্পত্তিতে কোনো পাকা ভবন নির্মাণ করা যাবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমার জানা নেই। দোহার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, লিজকৃত সম্পত্তিতে বহুতল ভবন নির্মাণ করে তারা লিজের শর্ত ভঙ্গ করেছেন। সেজন্য এ বছরের ৪ঠা এপ্রিল তাদের কারণ দর্শানোর প্রথম নোটিশ দেন বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা আক্তার রিবা ও সেসময়ে দায়িত্বে থাকা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সালমা খাতুন। পরবর্তীতে তারা নোটিশের জবাবও দিয়েছেন। কিন্তু জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় গত ১৫ই অক্টোবর তাদের পুনরায় আরেকটি নোটিশ দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিষয়টি আমাদের এমপি সালমান এফ রহমান জানেন। তিনি আমাদের ডেকে এ ব্যাপারে আইন ও নীতিমালা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

অন্য খবর  বর্ণমালা বিদ্যালয়ের শিশুদের মাঝে শীত বস্ত্র বিতরন

দলীয় সূত্রে জানা যায়, দোহারের প্রাণকেন্দ্র জয়পাড়া বাজারের এবি ব্যাংকের চতুর্থ তলা এখন উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন দোহার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবুল ও সাধারণ সম্পাদক আলী আহসান খোকন।

দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজা আক্তার রিবা বলেন, লিজের শর্ত ভঙ্গ করায় প্রথম দফায় তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছিল। জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় দ্বিতীয় দফায় আরেকটি নোটিশ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আইন ও নীতিমালা অনুযায়ী দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আপনার মতামত দিন