সাদ্দাম-সুরুজদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ মুকসুদপুর

870
find justis

ঢাকার অদূরেই আড়িয়ল বিলের কাছে মধুরখোলা, সাতভিটা, রুইতা, পল্লীবাজার, দুবলী, মইতপাড়া ও মৌড়া। দোহারের ছায়া সুনিবিড় সবুজে ঘেরা জনপদ। এলাকার মানুষের পেশা কৃষি, ব্যবসা ও প্রবাসে চাকরি। এসব গ্রামের শান্তিপ্রিয় মানুষ এতদিন বেশ নির্বিঘ্নেই জীবনযাপন করে আসছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি তাদের জীবনে ত্রাস হয়ে উঠেছে সাদ্দাম সুরুজদের এই দলটি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, মুকসেদপুর ইউনিয়নের এ সাত গ্রামে এখন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে এ বাহিনীর নানা অপকর্ম। সম্প্রতি এদের গণধর্ষণের শিকার হয় ৭ম শ্রেণীর এক স্কুলছাত্রী। জমে থাকা ক্ষোভ রূপ নেয় দাবানলে। তাদের গ্রেফতার দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে আসছেন এলাকাবাসী।

মাদক, চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও ডাকাতি মামলার আসামি মিলে গড়ে ওঠা এ বাহিনীতে রয়েছে সাদ্দাম, সুরুজ, রানা, সিরাজ, চাক্কু মিলন, পাইন্যা সুমন ও সেলিমসহ ১০/১২ জন। পুলিশও তাদের অপরাধী হিসেবেই চেনে। তবে নামমাত্র অভিযানে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।

২০ অক্টোবর সহপাঠীদের নিয়ে বাড়ির কাছে বাজারে আসার সময় ওই কিশোরীর প্রতি কুদৃষ্টি পড়ে বখাটে সাদ্দাম, সুরুজ, সেলিম, রানা ও সিরাজের। পথে ওঁৎ পেতে থাকে তারা। ফেরার সময় ধরে নিয়ে ময়নার বস্তির এক পরিত্যক্ত ঘরে মুখ বেঁধে পাশবিক অত্যাচার চালায়। একপর্যায়ে মুখের বাঁধন খুলে চিৎকার করলে এগিয়ে আসে স্থানীয়রা। পালিয়ে যায় বখাটেরা। পুলিশ এসে কিশোরীকে হাসপাতালে নেয়। পরে স্কুলছাত্রীর বাবা ওই পাঁচজনকে আসামি করে দোহার থানায় মামলা করেন।

অন্য খবর  দোহারের কুতুবপুর পুলিশ ফাঁড়ির শ্রেষ্ঠ ইনচার্জ নির্বাচিত

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, সাত গ্রামের মানুষ সন্ত্রাসী সাদ্দাম বাহিনীর কাছে জিম্মি। কিছুদিন আগে সাদ্দাম এক মামলায় আটক হলেও হাতকড়া ছিঁড়ে পুলিশের কাছ থেকে পালিয়ে যায়। প্রবাসী পরিবার ও ব্যবসায়ীদের কাছে নিয়মিত চাঁদা দাবি করে তারা। টাকা না দিলেই নেমে আসে অত্যাচার।

মৌড়া গ্রামের বায়েজিদ বলেন, সাদ্দাম বাহিনীর ভয়ে মেয়েরা স্কুল-কলেজে যেতেও ভয় পায়। ১৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় মোটরসাইকেলে বাজারে যাওয়ার পথে তাকে আটকে টাকা চায়। না দেয়ায় তার গাড়িটি নিয়ে যায়।

মধুরখোলা গ্রামের আলমগীর ভূঁইয়া বলেন, এরা এলাকার ত্রাস। মানুষ ওদের ভয়ে নিরাপদে রাস্তায় বের হতে পারে না। মাদক ব্যবসাসহ এমন কোনো অপরাধ নেই যা তারা করছে না।

ইউপি সদস্য ফয়জল খালাসী বলেন, মাদকের আখড়া হিসেবে পরিচিত বিলের পাড়েই এরা আস্তানা গড়েছে। ভয়ে এলাকাবাসী ওদের কিছু বলে না। পুলিশকে বললেও তারা এসে ঘুরে চলে যায়।

পল্লীবাজার এলাকার অধিবাসী নারী ইউপি সদস্য বলেন, সাদ্দাম বাহিনীর রয়েছে বিশাল নেটওয়ার্ক। এলাকায় কখন পুলিশ বা আইন-শৃংখলা বাহিনীরা আসে সে সংবাদ তাদের কাছে মুহূর্তে পৌঁছে যায়। তারা নিরাপদে সটকে পড়ে।

অন্য খবর  যুব সমাজকে মাদকমুক্ত রাখতে খেলাধুলার চর্চা বাড়াতে হবে: সালমা ইসলাম

এ বিষয়ে দোহার থানার ওসি শেখ সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমি রোববার ওই এলাকায় গিয়ে স্থানীয়দের ডেকে সভা করেছি। এখন পরিস্থিতি শান্ত আছে। যে কোনো মূল্যে এবং দ্রুতই সাদ্দাম ও সহযোগীদের গ্রেফতার করা হবে।

সোমবার দোহার উপজেলা চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে ওই এলাকা পরিদর্শন করেন। এলাকাবাসীকে সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে সন্ত্রাসীদের পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

আপনার মতামত দিন