সাংবাদিকতার বিপর্যয় ঘটেছে হলুদ ও অপসাংবাদিকতার কাছে

1171

ছাত্র জীবন থেকেই শুনে আসছি একটি সত্য কথা তা হলো সাংবাদিকতা একটি মহৎ পেশা। এখানে যে কোন মহৎ লোক নাই তাও বলা যাবে না। তবে এ ধরনের কথা বা অলংকার যে শুধু স্বার্থগত তা একবারও ভেবে দেখার সুযোগ হয়নি।কারো প্রতি ব্যক্তিগত ঈর্শ্বা বা অশ্রদ্ধা থেকে আমার লেখার উদ্দেশ্য নয়। ঘাত প্রতিঘাতে মানুষ যখন কোন সমস্যায় পড়ে আশ্রয় নেয় আইন আদালত,পুলিশ ও সমাজের নেত্বত দেয় এমন কারো কাছে। সব শেষে যখন কোন সমাধানই তাকে আশার বানী শোনাতে পারেনা তখন দ্বারস্থ হয় কোন সংবাদকর্মী বা সংবাদ মাধ্যমের অফিসে। গ্রামের ভাষায় একটি প্রবাদ আছে,”শৃগালের ধাওয়া খেয়ে বাঘের গুহায় আশ্রয়”। আমি একটু শক্তভাবেই কথাগুলো বলার চেষ্টা করছি। কারণ যদি তাতে কিছু বোধ উদর হয় আমার সতীর্থদের। সংবাদ কর্মীর কাছে প্রথমে যে ভিকটিম যায় সে ভাবে একটি সমাধান হয়তো জুটবে। একদিন,দুদিন ভালোই যায়। তৃতীয় দিন ভুক্তভোগী মানুষটাকে নানা আইনের মারপ্যাঁচের কথা বলে সমস্যা সমাধানের লালসা দেখিয়ে কিছু টাকা সম্মানের সাথেই নেন সাংবাদিক বন্ধুরা।তবে সবাই যে এ কাজটি করেন তা বলার সুযোগ নেই। কারণ সাংবাদিকতা তো মহান পেশা,কিছু ভালো লোকের যদি এখানে উপস্থিতি না থাকে তাহলে মূল খুঁটিটা একটু নড়বড়ে হয়ে যাবে নয় কি ? কিছু সাংবাদিকের ভালো কাজকে পুঁজি করেই হলুদ সাংবাদিকতা ও অপসাংবাদিকতা আজ ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে। এতে সমাজের কারো কোন লাভ না হলেও নামধারী,অপেশাদার,অর্ধশিক্ষিত কিছু মানুষ সাংবাদিকতাকে পুঁজি করে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হচ্ছে। সেই সাথে সাংবাদিকতা পেশাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। কোন একটি পত্রিকার পরিচয় পত্র নিতে পারলেই হলো। তখন তারা থানা পুলিশ,অফিস আদালত,স্থানীয় প্রশাসন,জমির দালালি,গ্রাম গঞ্জের সহজ সরল মানুষগুলোকে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। কেউ কিছু বলছে না। কারণ তিনি সাংবাদিক। সংবাদ ছাপুক আর না ছাপুক কার্ডতো আছে। আমাদের দেশে সাধারণ মানুষ গুলোর মাঝেও সচেতনতার কিছু অভাব রয়েছে। সাংবাদিক পরিচয় পেলেই ভয়ে কুপোকাত। যাচাই করার চেষ্টা ও করেনা কোন পত্রিকা বা চ্যানেলে কাজ করে। কি তার পদবী। কিছু সুবিধাবাদী সাংবাদিক আছে তাদের পরিচিয় হলো আমি প্রেস ক্লাবের অমুক। সমাজে আজ সুসাংবাদিকতার অনেক সংকট তৈরি হয়েছে। এমন কি হলুদ সাংবাদিকতারও ছাড়িয়ে গেছে। হলুদ সাংবাদিকতাও এক ধরনের সাংবাদিকতা। যেখানে তথ্য পরিবেশনের ক্ষেত্রে রঙ লাগানো হয়। কিন্তু যারা নিজেকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে টাকার বিনিময়ে পত্রিকা অফিস কর্তৃক পুরানা পল্টন অথবা নীল ক্ষেত থেকে নামধারী কিছু মানবাধীকার সংস্থার কার্ড বানিয়ে নিজেকে রিপোর্টার বা সাংবাদিক পরিচয় দেন তারা কি সংবাদের সংজ্ঞা জানেন ? হটাত যদি জনতা তাকে ধরেই উত্তম মধ্যম দেয় তবে কি বলব সাংবাদিক গণধোলাই খেয়েছে। সাধারণ মানুষ না জেনে বললেও সচেতন কোন মানুষ তা বলবে এটা আমার কাছে অবিশ্বাস্য। কারণ সত্তিকার সাংবাদিক মার খেলে খুব কম। সেটা হতে পারে সংঘবদ্ধ কোন সন্ত্রাসী বা অপরাধী চক্রের হাতে। কোনো অপরাধ বিষয়ক প্রতিবেদনের জন্য। প্রশাসন ও জনতার চোখে ধোঁয়াশা দিয়ে মটর সাইকেল,প্রাইভেট কার, ও মাইক্রোবাসে প্রেস বা সংবাদপত্র লাগিয়ে সারাদেশ দাপিয়ে চলছে নামধারী অপসাংবাদিকরা। আবার অনেকে নিজেই জেলা প্রশাসক থেকে একটি পত্রিকার নিবন্ধন নিয় বা ভাড়ায় পত্রিকা এনে সম্পাদক প্রকাশক সেজে বসেন। এরপর শুরু হয় চাঁদাবাজির কাজ। ইদানিংকালে কিছু স্থানীয় পত্রিকার সম্পাদক বা রিপোর্টাররা কলার দোকান,রুটির কারখানাগুলোতেও হানা দিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন নগত টাকা। তবে তাদের লেখা সংবাদ কখনো কোন পত্রিকায় ছাপা হয়েছে এমন নজির নেই। এটাই হচ্ছে বর্তমান সময় সাংবাদিকতার আসল চেহারা। কিন্তু বর্তমান শিক্ষিত সমাজে এ ধরণের অপসাংবাদিকতার প্রতিকার না করতে পারলে সৎ,দায়িত্বশীল,পেশাদারিত্ব সাংবাদিকতার মৃত্যু ঘটবে, উৎসাহ নিয়ে শিক্ষিত কোন ছেলে মেয়ে এ পেশায় আসবে না। কারণ তেল আর জলে যদি মিশে যায় তবে ভাল কিছুর মূল্যায়ন রইলো কোথায় ? এ ধরণের অপবাদ থেকে রক্ষা পেতে হলে দায়িত্বশীল ও পেশাদার সংবাদ কর্মীকে আরো সক্রিয় হয়ে মোকাবেলায় নামতে হবে। তা না হলে একদিন অপসাংবাদিকতার কাছে জিম্মি হবে দেশ, জনতা। উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার। একজন সামান্য সংবাদকর্মী হিসেবে আমার পেশার বয়সও প্রায় দেড়যুগ পার হচ্ছে। কিন্তু যা পেলাম বা দেখলাম তাতে বর্তমান সমাজে ক্ষেত্র বিশেষে সাংবাদিক পরিচয় দেয়াটা লজ্জা পেতে হয়। দেশের সেরা একটি দৈনিকে কাজ করেও কখনো দাম্ভিকতা করতে শিখিনী।
কিন্তু স্টুডিও চালিয়ে।ভিডিও এডিটিং করে,বেবী চালক,মুদী দোকানী,সবজী বিক্রেতা হয়ে কিছু সাপ্তাহিক বা দৈনিক পত্রিকার কার্ড নিয়েই দাপটের সাথে মন্ত্রী।এমপি,প্রশাসন,জন প্রতিনিধি,রাজনীতিকদের সাথে ঘাড়ে মাথা রেখে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত দাবী করছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ আছেন যারা ধরাকে সরা জ্ঞান করে সমাজে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে।এদের বিরুধে রুখে দাড়াতে হবে। সমাজ পরিবর্তনে,গণতন্ত্র বিকাশে সংবাদপত্রের গুরুত্বকে জাগিয়ে রাখতে হবে। এদিকে বর্তমান সময়ে কিছু মানবাধিকার সংস্থার নামে কেউ কেউ পরিবেশ সাংবাদিক বা ক্রাইম রিপোর্টার হিসেবে পরিচয় দেন। তারা জমির বিচার,স্বামী স্ত্রীর পারিবারিক কলহের বিচারেও মানবাধিকার খাটান। আদৌ এতা ঠিক কিনা তা নিজেও জানেন না। জনগণ,প্রশাসন ও বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

অন্য খবর  বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনী : পরাজয় নয়, আছে জয়ের ইতিহাস

লেখক: আজহারুল হক

সাংবাদিক

আপনার মতামত দিন