সফল নার্সারী ব্যবসায়ী দোহারের মোতালেব শেখ

408

নার্সারীর ব্যবসা করে নিজের ও পরিবারের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন ঢাকার দোহার উপজেলার উত্তর ইউসুফ গ্রামের মৃত শেখ আনিছের ছেলে মোতালেব শেখ। নার্সারীর করে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে সবার পরিচিত মুখ তিনি। এক সময়ে অর্থ কষ্টের মধ্য দিয়ে জীবন যাপন করলেও স্ত্রী ও ছেলে মেয়ে নিয়ে স্বচ্ছলভাবে জীবন যাপন করছেন। ১৯৭৭ সালে দিকে মোতাবেল শেখের বয়স তখন ২০ অথবা ২১ বছর। বাড়ির জমিতে গাছ লাগানোর জন্য স্থানীয় জয়পাড়া হাটে যান কিছু ফলজ ও বনজ গাছ কেনার জন্য। ৩০টি চারা দরদাম করার পর বিক্রেতা সবগুলো চারা গাছ তাকে অল্প দামে দিয়ে যান। মোতালেব শেখ সেই চারা ১ হাজার টাকা বিক্রি করার পরও বাদবাকি চারা গাছ বাড়িতে এনে রোপন করেন।

এরপর থেকে কিছু দিন অন্যের কাছ থেকে চারা গাছ কিনে এনে বিক্রি করতে থাকেন। আর ফাঁকে ফাঁকে জেনে নেন নার্সারী করার নিয়ম -কানুন। ১৭৭৯ সালে বাড়ির পাশে এক একর ও গাজী কান্দা এলাকায় ৪০ শতাংশ জমিতে শুরু করেন নার্সারী ব্যবসা। এরপর আর মোতালেব শেখকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দোহার উপজেলা বনায়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছেন। ৪০ বছর ধরে নিজের হাতে চারা তৈরি করে সরবরাহ করছেন দোহার উপজেলা সহ অন্যান্য বেশ কয়েকটি জেলায়।

অন্য খবর  দিনে ওরা রিকশা চালক, রাতে ভয়ংকর ডাকাত

অনেকেই মুগ্ধ হয়েছেন তার হাতে গড়া সবুজের সমারোহ দেখে। আবার কেউ কেউ মোতালেব শেখের মত নার্সারী করে স্বাবলম্বী হবার চেষ্ট করছেন। অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারী ব্যবসায়ীরা তার কাছ থেকে চারা সংগ্রহ করে বিক্রি করছেন স্থানীয় হাটবাজারগুলোতে।

মোতাবেব শেখ জানান, প্রথম দিকে অনেক শ্রম দিতে হয়েছে নার্সারীর পেছনে। অভিজ্ঞতার কারনে এখন আর খুব বেশি চিন্তা করা লাগে না। তার নার্সারীতে ৩ জন শ্রমিক রয়েছে । তারাই নার্র্সারীর পরিচর্যা করে থাকেন। বীজ থেকে চারা তৈরির ক্ষেত্রে প্রথমে পলিব্যাগে মাটি প্রস্তুতু করে বীজ অথবা চারা রোপন করতে হয়। এ জন্য মাটিতে পরিমিত টিএসপি, গোবর, পটাস, খৈল দিয়ে ১ সপ্তাহ রাখতে হয়। সাধারণত ফুল, ফল ও পাতাবাহার গাছ ২০ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে বিক্রির উপযোগী হয়ে উঠে। ছোট, মাঝারি ও বড় সব ধরনের গাছের চারাই এখানে পাওয়া যায়। বীজের মাধ্যমে ও কলম এই দুই ধরনের চারা সাধারণত উৎপাদিত হয়ে থাকে । প্রতি বছর প্রায় ২ লাখ বিভিন্ন প্রজাতির চারা করা হয় এ নার্সারী থেকে উৎপাদন করে বিক্রি করা হয়।

এর মধ্যে রয়েছে আম, জাম, লিচু, জামরুল, আমড়া, পেয়ারা, জলপাই, কতবেল, আমলকি, লেবু, মাল্টা, বড়ই, কামরাঙ্গা, ডালিম ইত্যাদি। এছাড়া ফুলের গাছগুলো

অন্য খবর  দোহার মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় এনজিও কর্মী নিহত

ফুলের মধ্যে রয়েছে গোলাপ, রজনীগন্ধা, বেলী, হাসনাহেনা, বকুল, শিউলী, গাধা, গন্ধরাজ, মোসেন্ডা, টগর, জুঁই, কচমু, সিলপিয়া, ডালিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের গাছের চারা। বনজ গাছের মধ্যে রেইনট্রী, মেহগনী, আকাশমনী, চাম্মুল, নারকেল, সুপারী, লাম্মু ইত্যাদী। ওষুধি গাছ রয়েছে নিম, হরতকি, বয়রা, অর্জুন, এলোভেরা ইত্যাদি।

চারা উৎপাদন আর বিক্রি করে বছরে বেশ ভাল আয় হবে থাকে। মোতালেবের সংসারে এখন কোন অভাব নেই। এক সময়ের অভাব অনটনের সংসারে ফিরে এসেছে আর্থিক স্বচ্ছতা। তাই মোতালেব মহান আল্লাহর দরবারে শেখ শুকরিয়া আদায় করে বলেন, যা চেয়েছি তার চেয়ে বেশি পেয়েছি। এখন জীবনের বাকি দিন গুলি ইবাদত বন্দেগী করে কাটাতে চাই।

মোতালেব শেখ দোহার , নবাবগঞ্জ ও শ্রীনগরের উপজেলায় বৃক্ষ ও ফলজ মেলায় অংশগ্রহন করে একাধিকবার উপজেলার শ্রেষ্ঠ নার্সারীর মালিক হিসেবে তাকে পুরস্কৃত করা হয়েছেন।

এ ব্যাপারে দোহার উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা আফরোজা আক্তার রিবা জানান, আমি ইতমধ্যেই জেনেছি দোহারে মোতালেব শেখের নার্সারীতে উৎপাদীত চারার বেশ সুনাম রয়েছে। এ ধরনের উদ্যোক্তারা যাতে করে ব্যবসায়ী হিসেবে টিকে থাকতে পারে এবং দেশের বনায়নে ভূমিকা রাখতে পারেন এজন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।

আপনার মতামত দিন