শোভন-রাব্বানী অপসারিত

217

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দায়িত্ব নেওয়ার এক বছরের মাথায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কমিটির বাকি সদস্যরা স্বপদে বহাল থাকবেন। ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন কমিটির ১ নম্বর জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, আর সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে কমিটির ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে।

গতকাল শনিবার রাতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয় বলে জানিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

সভায় উপস্থিত একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা জানান, জয় ও লেখককে ছাত্রলীগের নতুন সম্মেলন করার দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে। তারা জানান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ফারজানা ইসলামকে দোষারোপ করে রাব্বানী প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়ায় এবং তা নিয়ে গণমাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়ায় ক্ষুব্ধ হন তিনি। তাই দ্রুতই তিনি শোভন-রাব্বানীর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন। ‘প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুটি নিরীহ ছেলে দেখে আমি নেতা বানিয়েছিলাম। তারা এখন দানব হয়ে গেছে। টাকার মালিক হয়েছে। এখন হেন কোনো অভিযোগ নেই তারা করেনি। শেখ হাসিনা আরও বলেন, তারা এখন নতুন করে ভিসি ফারজানাকে অপরাধী বানাতে চাইছে। ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত নেতারা আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চার নেতার পরামর্শে কাজ করবেন এবং সম্মেলনের প্রস্তুতি নেবেন।’

অন্য খবর  ঢাকার গুলিস্তানে যাত্রীবাহী বাসে আগুন

এদিকে নানা বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে দুই দিন আগেই ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের চার কেন্দ্রীয় নেতার কাছে  পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে রেখেছিলেন শোভন ও রাব্বানী।

গত বছর ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের সম্মেলন হওয়ার পর ৩১ জুলাই আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতিতে শোভনকে সভাপতি ও রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। সেদিন রাতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাদের নাম ঘোষণা করেন। তারপর দ্রুত সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার কথা থাকলেও প্রায় ১০ মাস পর ১৩ মে ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। দুই বছর মেয়াদি নতুন এই কমিটি ঘোষণার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘাতও সৃষ্টি হয়।

ক্ষমতাসীন দলটির একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতা জানান, সম্প্রতি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজে চাঁদা দাবিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙেও দিতে বলেন। তবে শিগগিরই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা নাও আসতে পারে বলে মনে করছিলেন তারা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করার পর সংগঠনের শীর্ষ দুই নেতাকে সরিয়ে দেওয়ার ঘটনা এই প্রথম। স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসীন হলে সেভেন মার্ডারের ঘটনায় আসামি হওয়ায় তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম প্রধানকে সংগঠন থেকেই বহিষ্কার করা হয়। এরপর ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে ছাত্রলীগের সভাপতির পদ ছেড়েছিলেন হাবিবুর রহমান হাবিব, যিনি এখন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা।

আপনার মতামত দিন