রাজধানীতে ভুল চিকিৎসায় দোহারের গৃহবধূর মৃত্যু

987

চিকিৎসকের অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় ঢাকার দোহার উপজেলার জয়পাড়ার গৃহবধূ কোহিনুর বেগমের মৃত্যুর অভিযোগ করেছেন তার স্বজনরা।

রাজধানীর সাত মসজিদ রোডের লিভার গ্যাস্ট্রিক জেনারেল হাসপাতাল ও রিসার্চ ইন্সটিটিউটে অপারেশনের পর কোহিনুর আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তার মৃত্যু হয়। প্রফেসর ডা. মো. সহিদুর রহমানের ভুল চিকিৎসায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে স্বজনরা দাবি করেছেন। দায়ী চিকিৎসকের বিচার দাবি করেছেন তারা। বিষয়টি আদালতে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার পরিবার।

এদিকে, বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার হুমকি দিয়েছেন চিকিৎসক ডা. সহিদুর।

কোহিনুরের স্বজনরা জানান, সাত মসজিদ রোডের (ধানমণ্ডি) বাড়ি নং # ৭৫. রোড নং # ৫/এ-এর র‌্যাংগস নিলু স্কয়ারে লিভার, গ্যাস্ট্রিক জেনারেল হাসপাতাল ও রিসার্চ ইন্সটিটিউটে ১৮ মার্চ কোহিনুরকে রোগী ভর্তি করা হয়। ওইদিন রাত ৯টার দিকে ইন্সটিটিউটের পরিচালক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. মো. সহিদুর রহমান ও তার সহযোগী ডা. আলমগীর হায়দারের তত্ত্বাবধানে কোহিনুরের পিত্তথলির পাথর অপারেশন করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী আধুনিক মেশিনের সাহায্যে অপারেশন করার কথা থাকলেও তারা সেটা না করে রোগীর পেট কেটে অপারেশন করেন। এতে প্রায় ৬ ঘণ্টা সময় লাগে। এরপর রোগীকে সঠিক চিকিৎসা দিতে চিকিৎসকরা অবহেলা ও নানা টালবাহানা করেন। এর ফলে ২৩ মার্চ কোহিনুর মারা যায় বলে স্বজনদের দাবি।

অন্য খবর  দীর্ঘ দিন পর নবাবগঞ্জবাসী পেল এ্যাম্বুলেন্স

কোহিনুরের অভিভাবক ইলিয়াস উদ্দিন সবুজ বলেন, ডা. মো. সহিদুর প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। অপারেশনের আগে রোগীর অভিভাবকদের কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেয়া হয়নি। এ ছাড়া বিভিন্ন পরীক্ষার নামে প্রায় তিন লাখ টাকা নিয়েছে ডা. সহিদুর। যদিও চিকিৎসা ব্যয়ের চুক্তি ছিল মাত্র ৪০ হাজার টাকার। সবুজ বলেন, এই রোগীর অপারেশনে কোনো রক্তের প্রয়োজন না থাকলেও অপারেশন করার পর সাত ব্যাগ রক্ত নেয়া হয়েছে। এরপর রোগীর অবস্থার অবনতি হলে তাকে রাজধানীর ইডেন মাল্টিকেয়ার হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। সেখানে ডা. সহিদুরের নির্দেশে আইসিওতে কোহিনুরকে ভর্তি করানো হয়।

ইডেন মাল্টিকেয়ার হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, অপারেশনের সময় রোগীর রক্তনালী কেটে ফেলায় এত রক্ত লাগছে। ডা. সহিদুরকে বিষয়টি জানানো হলে তিনি বাজে কথা বলে উড়িয়ে দেন এবং কারও কথায় কান না দিতে বলেন। এরপর ইডেন মাল্টিকেয়ার হাসপাতাল থেকে কোহিনুরকে জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে ভর্তির কথা বলেন তিনি। কিন্তু রোগীর অবস্থা খারাপ দেখে আমরা ২৩ মার্চ তাকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে ভর্তি করি। হলি ফ্যামিলির চিকিৎসকরা রোগীকে আইসিওতে নিয়ে যান এবং কিছুক্ষণ পর রোগীকে মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসকরা আরও জানান, নার্ভ কেটে ফেলায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

অন্য খবর  গরমে পুড়ছে দেশঃ দোহার – নবাবগঞ্জে তাপমাত্রা ৩৬º, গরম অনুভুত ৪৪º

ইলিয়াস উদ্দিন সবুজ আরও বলেন, এরপর ডা. সহিদুরের সঙ্গে যোগাযোগ করলে বিষয়টি নিয়ে কোনো কথা না বলে গ্রামে চলে যেতে বলেন। বেশি বাড়াবাড়ি করলে পুলিশে দেয়ারও হুমকি দেন তিনি। দুই শিশুকন্যার জননী কোহিনুরের মৃত্যুর জন্য দায়ী ডা. সহিদুরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তার পরিবার।

কোহিনুরের অপারেশন ও মৃত্যু সম্পর্কে প্রফেসর ডা. মো. সহিদুর রহমান মোবাইল ফোনে বলেন, বিষয়টি সঠিক নয়। অপারেশনের পর স্বজনরা হঠাৎ কোহিনুর বেগমকে অন্য ক্লিনিকে নিয়ে যায় এবং আমাদের প্রতিষ্ঠানের বিল পরিশোধ করতে অপারগতা প্রকাশ করে। আমার মধ্যস্থতায় মাত্র ২০ হাজার টাকা দিয়ে তারা রোগীকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যায়। এখন সেখানে অথবা রাস্তায় সমস্যা হতে পারে অথবা অন্য কোনো কারণে রোগীর মৃত্যু হতে পারে। এ জন্য আমি বা আমার হাসপাতাল দায়ী নয়।

আপনার মতামত দিন