দুজনই রাষ্ট্র ও সমাজের মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করছেন দেশে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। তাদের প্রচেষ্টা ও অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ লাভ করছেন প্রশংসা ও পুরস্কার। এই দুই মহিয়সীর একজন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অন্যজন তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল। দুজনই সাম্প্রতিক সময়ে ভূষিত হয়েছেন আন্তর্জাতিক সম্মাননায়। অভিনন্দন মহিয়সী মাতা-কন্যাকে।

১. প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউ ইয়র্কের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন থেকে ফিরে ছুটে গেছেন ভারতের নয়াদিল্লি সফরে। সফরের প্রথম দুই দিন তিনি ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে একাধিক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিয়েছেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশের কথা তুলে ধরেন। নিউ ইয়র্কেও জাতিসংঘ অধিবেশনের ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধান ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সাক্ষাতে একই আহ্বান জানান।

বিদেশি বড় বিনিয়োগ আরও সমৃদ্ধি এনে দেবে বাংলাদেশের অগ্রসরমাণ অর্থনীতিতে। নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। দক্ষতা বাড়বে জনশক্তির। খুলে যাবে বৈদেশিক বাণিজ্যের নতুন দিক। বর্তমান সরকার বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলেছে, আরও হচ্ছে। বিনিয়োগে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আগের চেয়ে অনেকটা কমেছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য আইনি সুরক্ষা, উদার রাজস্ব ব্যবস্থা, মেশিনপত্র আমদানিতে বিশেষ ছাড়, আনরেস্ট্রিকটেড এক্সিট পলিসি এবং সম্পূর্ণ বিনিয়োগ ও পুঁজি নিয়ে ফিরে যাওয়ার সুবিধাও বিদ্যমান।

অন্য খবর  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষকে নিয়ে ভাবেনঃ নবাবগঞ্জে মির্জা আজম

দেশের অর্থনীতির বড় প্রবৃদ্ধির জন্য এসব খুবই ইতিবাচক পদক্ষেপ। সরকারপ্রধানের পক্ষ থেকে এ ধরনের আশ্বাস ও আহ্বান বিনিয়োগকারীদের আস্থাশীল করবে নিশ্চয়। বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্ভাবনা অন্যান্য দেশের চেয়ে অনেক বেশি। ভৌগোলিক দিক থেকে বাংলাদেশ হতে পারে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এই সম্ভাবনা আমাদের আছে।

বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি বিভিন্ন দেশে নিয়োজিত রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনাররাও ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখতে পারেন। বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের জন্য আমাদের উদার নীতির বিষয়টি তুলে ধরতে পারেন তারা। এতে উন্নত বিশ্বে বাংলাদেশ নতুন করে পরিচিতি পাবে। এ জন্য দেশের বাইরে বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিয়ে প্রদর্শনী ও বিভিন্ন ধরনের কনফারেন্স আয়োজন করা যেতে পারে। এটি হতে হবে সুপরিকল্পিত।

বিদেশি মিশনগুলোর এ নিয়ে আরও সুসংগঠিতভাবে কাজ করার সুযোগ আছে। অনেক বিনিয়োগকারী বাংলাদেশ সম্পর্কে জানেন না। তাদের জানার সুযোগ যত বাড়বে, আমাদের সম্ভাবনাও ততটা কাজে আসবে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের কথা বলা যায়। ভারতে বিগত কয়েক দশকে বিদেশি বড় বিনিয়োগ এসেছে। এসব বিনিয়োগকারী ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশের বাজারের ভোক্তাশ্রেণিকে মাথায় রেখে পণ্য উৎপাদন করছে। বাংলাদেশে শিল্প বিনিয়োগ করেও যে ভারতের বাজার ধরা সম্ভব, এটিও বিনিয়োগকারীদের বোঝাতে হবে। বরং এখানে তাদের উৎপাদন খরচ কম হবে। সুবিধাও মিলবে অন্য দেশের চেয়ে বেশি। এসব ইতিবাচক সুযোগ-সুবিধা যেখানে রয়েছে সেখানে বিনিয়োগে আগ্রহ না দেখানোর কোনো কারণ নেই। প্রয়োজন কেবল আমাদের নিজেদের সার্বিক বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের কথা তাদের কাছে তুলে ধরা।

অন্য খবর  বাল্কহেডের ধাক্কায় একটি ভ্রমণের ট্রলারডুবি, নিখোঁজ ৬

দুই. বিরল সম্মানে ভূষিত হয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞ এবং প্রধানমন্ত্রীকন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল। বৈশ্বিক মানসিক স্বাস্থ্যে উদ্ভাবনী ১০০ নারীর তালিকায় উঠে এসেছেন তিনি। তাকে অভিনন্দন। দীর্ঘদিন থেকেই মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কাজ করছেন পুতুল। এর স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৪ সালে তাকে ‘এক্সেলেন্স ইন পাবলিক হেলথ অ্যাওয়ার্ড’ দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সারা বিশ্বে অটিজম নিয়ে তার ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে।

পুতুলের উদ্যোগে ২০১১ সালে ঢাকায় প্রথমবারের মতো অটিজমের মতো অবহেলিত একটি বিষয় নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে বাংলাদেশে ‘নিউরোডেভেলপমেন্ট ডিজঅ্যাবিলিটি ট্রাস্ট অ্যাক্ট ২০১৩’ পাস করা হয়। বাংলাদেশে অটিজম বিষয়ক বিভিন্ন নীতি নির্ধারণে উল্লেখযোগ্য সাফল্য লাভের পর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে অটিজম বিষয়ক ‘শুভেচ্ছা দূত’ হিসেবে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল কাজ করছেন।

অটিজমের মতো অবহেলিত একটি বিষয়কে তিনি যেভাবে বিশ্ব নীতিনির্ধারকদের সামনে তুলে ধরেছেন, তা নিঃসন্দেহে অসামান্য প্রচেষ্টা। তিনি সফল হয়েছেন। তার এই অর্জন বাংলাদেশকেও গর্বিত করেছে।

আপনার মতামত দিন