প্রতিদিনের হাদিস

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৫,  আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খায়বারের যুদ্ধ হতে প্রত্যাবর্তনের সময় এক রাতে যাত্রা অব্যাহত রাখেন। আমরা নিদ্রালু হয়ে পড়ায় তিনি রাতের শেযভাগে বিশ্রামের উদ্দেশ্যে বাহন হতে অবতরণ করেন এবং বিলাল (রাঃ) -কে বলেনঃ তুমি জেগে থাক এবং রাতের দিকে খেয়াল রাখ। অতঃপর বিলাল (রাঃ) -ও নিদ্রাকাতর হয়ে পড়েন এবং তিনি নিজের উটের সাথে হেলান দেয়া অবস্হায় ঘুমিয়ে পড়েন। এমতাবস্হায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, বিলাল (রাঃ) এবং সহগামী সাহাবীদের কেউই জাগরিত হন নাই যতক্ষণ না সূর্যের তাপ তাদেরকে স্পর্শ করে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই সর্বপ্রথম ঘুম হতে জাগরিত হন এবং অস্হির হয়ে পড়েন অতঃপর তিনি বিলাল (রাঃ) -কে বলেনঃ হে বিলাল! জবাবে বিলাল (রাঃ) ওজর পেশ করে বলেন! ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমার মাতা-পিতা আপনার জন্য উৎসর্গিত হোক। যে মহান সত্তা আপনার জীবন ধরে রেখেছিলেন সেই মহান সত্বা আমার জীবনও ধরে রেখেছিলেন। অতঃপর তারা উক্ত স্থান পরিত্যাগ করে কিছু দূর যাওয়ার পর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উযূ (ওজু/অজু/অযু) করেন এবং বিলাল (রাঃ) -কে নামাযের ইকামত দিতে বলেন। তিনি সকলকে নিয়ে নামায আদায় করেন। নামায শেষে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি নামায (আদায় করতে) ভুলে যাবে সে যেন স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে তা আদায় করে। কেননা আল্লাহ্তা’আলা ঘোষণা করেছেনঃ “তোমরা আমার স্মরণের জন্য নামায কায়েম কর”- (মুসলিম, ইবনু মাজাহ, তিরমিযী, নাসাঈ)।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৬, মূসা ইবনু ইসমাঈল …………. আবূ হুরায়রা (রাঃ) পূর্বোক্ত হাদীছের বর্ণনা পরস্পরায় বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ যে স্হানে তোমরা গাফ্লতিতে নিমজ্জিত হয়েছ- সে স্থান ত্যাগ কর। রাবী বলেন, উক্ত স্থান ত্যাগের পর অন্য স্হানে পৌছে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলাল (রাঃ) -কে নির্দেশ দেওয়ায় তিনি আযান ও ইকামত দেন এবং তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকলকে নিয়ে নামায আদায় করেন। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, উক্ত হাদীছ মালেক, সুফিয়ান, আওযাঈ, আব্দুর রাযযাক- সকলে মা’মার ও ইবনু ইসহাক হতে বর্ণনা করেছেন। তাদের বর্ণনায় কেউই আযানের কথা উল্লেখ করেননি।

অন্য খবর  ইসলামে জুলুম-অত্যাচার জঘন্য অপরাধ

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৭,  মূসা ইবনু ইসমাঈল ………. আবূ কাতাদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক সফরে ছিলেন। তিনি একদিকে মনোনিবেশ করলেন এবং আমিও তাঁর সাথে মনোনিবেশ করলাম। অতঃপর তিনি বলেনঃ লক্ষ্য কর। তখন আমি বলি এই একজন আরোহী, এই দুইজন আরোহী, এই তিনজন আরোহী- এইরূপে আমরা গণনায় সাত পর্যন্ত পৌছাই। অতঃপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা আমাদের ফজরের নামাযের প্রতি দৃষ্টি রাখ। অতঃপর রাবী বলেন যে, তাদের কান বন্ধ হয়ে গিয়েছিল (সকলে ঘুমিয়ে পড়েছিল) এবং রৌদ্রের তাপ গায়ে লাগার পূর্বে কেউই ঘুম হতে উঠতে- পারেননি। ঘুম হতে বেলা উঠার পর জাগ্রত হয়ে তারা উক্ত স্হান ত্যাগ করে সামান্য দূর যাওয়ার পর অবতরণ করে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করেন। অতঃপর . বিলাল (রাঃ) আযান দেওয়ার পর তারা প্রথমে ফজরের দুই রাকাত সুন্নাত, অতঃপর দুই রাকাত ফরয নামায আদায় করে- উক্ত স্থান ত্যাগ করেন। অতঃপর তাঁরা পরস্পর বলাবলি করতে থাকেন, আমরা নির্ধারিত সময়ে নামায আদায় না করে গুনাহ্গার হয়েছি। এতদ্শ্রবণে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ অনিচ্ছাকৃত ভাবে নির্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে কেউ যদি নামায কাযা করে- তবে তা অন্যায় নহে। অবশ্য জাগ্রত থাকাবস্হায় ইচ্ছাকৃতভাবে নামায কাযা করলে অন্যায় হবে। অতএব তোমাদের কেউ যখন নামায আদায়ের কথা ভুলে যায়- সে যেন স্মরণ হওয়া মাত্রই তা আদায় করে এবং পরবর্তী দিন উক্ত সময়ের নামাযটি তার নির্ধারিত সময়ে যেন আদায় করে ২- (মুসলিম, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, তিরমিযী)।

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৮,আলী ইবনু নাসর ……….. খালিদ ইবনু সুমাইর হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবদুল্লাহ্ ইবনু রাবাহ্ আনসারী (রাঃ) মদ্বীনা হতে আমাদের নিকট আগমন করেন। মদ্বীনার আনসারগগ তাঁকে একজন বিশিষ্ট ফকীহ (ফিকাহ্ তত্ত্ববিদ আলেম) হিসাবে গণ্য করতেন। রাবী বলেন, আবদুল্লাহ্ আনসারী (রাঃ) আমাদের নিকট বর্ণনা করেন যে, . আবূ কাতাদা আল্-আনসারী (রাঃ) যিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘোড়া রক্ষক ছিলেন- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুতার যুদ্ধে সৈন্য প্রেরণ করেন…পূর্ববর্তী হাদীছের অনুরূপ। রাবী বলেন, সূর্যের রশ্মি আমাদের শরীর স্পর্শ করার পর আমরা ঘুম হতে জগ্রত হই। ঐ সময় আমরা আমাদের নামাযের জন্য অস্হির হয়ে পড়ি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামঃ এ স্থান ত্যাগ কর, ত্যাগ কর। তাঁরা ঐ স্থান ত্যাগ করে যাওয়ার পর যখন কিছুটা উপরে উঠল তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যারা সফরের সময় ফজরের নামাযের দুই রাকাত সুন্নাত আদায়ে অভ্যস্ত-তারা যেন তা আদায় করে নেয়। অতঃপর উপস্থিত সাহাবাগণ ফজরের দুই রাকাত (সুন্নাত) আদায় করেন। অতঃপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আযান দেওয়ার নির্দেশ দেন। আযানের পর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সলাম আমাদের ফজরের দুই রাকাত ফরয নামায আদায় করেন। নামায আদায়ের পর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সম্বোধন করে বলেনঃ তোমরা জেনে রাখ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। দুনিয়ার কোন কাজকর্ম আমাদের এই নামায আদায় করা হতে বিরত রাখেনি, বরং আমাদের আত্মাসমূহ আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে ছিল। অতঃপর তাঁর ইচ্ছানুযায়ী তা আমাদের নিকট ফেরত পাঠিয়েছেন। তোমাদের কেউ যখন আগামী দিনের ফজরের নামায ঠিক সময়ে পাবে তবে সে যেন এ ওয়াক্তের সাথে- এই কাযা নামাযটিও আদায় করে।

অন্য খবর  সেই হাজিয়া সোফিয়ায় কোরআন তিলাওয়াত করলেন এরদোগান

হাদিস নম্বরঃ ৪৩৯, আমর ইবনু আওন আবূ কাতাদা (রাঃ) হতে পূর্বোক্ত হাদীছের অনুরূপ বর্ণিত। রাবী বলেন, অতঃপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ আল্লাহ্ তা’আলা তোমাদের আত্মাগুলিকে যতক্ষণ ইচ্ছা স্বীয় নিয়ন্ত্রণে রাখেন, অতঃপর তা ফিরিয়ে দেন। অতঃপর তিনি ঐ স্হান ত্যাগের নির্দেশ দেন। অতঃপর তিনি বিলাল (রাঃ) -কে আযান দিতে বলায় তিনি আযান দিলে-সকলে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করেন। ইতিমধ্যে সূর্য উপরে উঠে যায় এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের নিয়ে ঐ নামায আদায় করেন- (বুখারী, নাসাঈ)।

হাদিসের মানঃ সহিহ

গ্রন্থঃ সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)

পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন

অধ্যায়ঃ ২/ সালাত (নামায) (كتاب الصلاة)

আপনার মতামত দিন