নবাবগঞ্জের ভাঙাভিটায় বাঙ্গির হাট

2058

নবাবগঞ্জ উপজেলার কৈলাইল ইউনিয়নের ভাঙাভিটা গ্রাম মৌসুমী ফল ব্যাঙ্গির জন্য বিখ্যাত। ভাঙাভিটা এলাকার মানুষ অর্থকারী ফসল হিসেবে বেছে নেয় বাঙ্গিকে। এখানকার উর্বরা জমি বাঙ্গির চাষের জন্য খুবই উপযোগী। তাই জীবন জীবিকার জন্য প্রধান ফলস হিসেবে এখানে প্রায় দেড়শ বছর ধরে বাঙ্গির চাষ হয়ে আসছে। বাঙ্গি চাষ করে অথনৈতিকভাবে জীবনের চাকাকে ঘুরিয়েছেন এ এলাকার অনেক বাঙ্গি চাষীরা। তাই কৃষি কাজে নিজের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য প্রতিনিয়ত  প্রাণপন লড়াই-সংগ্রাম করে মাটির  বুক চিড়ে উৎপন্ন করছেন সোনালী ফলস বাঙ্গি। এখানে বাঙ্গির পাশাপশি লাউ, কুমড়া, বেগুন  খিরাইসহ অন্যান্য ফসল চাষাবাদ করা হলেও মাটির গুনাগুনের উপর ভিত্তি করে প্রধান ফসল হিসেবে দেড়শ বছর ধরে চাষ করা হচ্ছে বাঙ্গি। সেই থেকে  ভাঙাভিটার বাঙ্গির সুনাম রয়েছে দেশজুড়ে। আমাদের দেশে বিভিন্ন প্রজাতির বাঙ্গি দেখা মিললেও এই ভাঙ্গাভিটার বাঙ্গির রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য । স্বাদে গন্ধে অতুলনীয় ভাঙাভিটার বাঙ্গি।  যে কারনে সারাদেশের মানুষের কাছে ভাঙ্গাভিটার বাঙ্গির চাহিদাও বেশ। ভাঙ্গাভিটা এলাকায়  শীতকালে বাঙ্গি চাষের জন্য বীজ বপন করা হলেও  গ্রীস্মকালীন ফল হিসেবে হাট-বাজার গুলোতে দেখা মিলে হলুদ বর্ণের মিষ্টি জাতীয় রসালো ফল বাঙ্গি। অন্য ফলের চেয়ে নাম কম  এবং পুষ্টিগুন বেশি থাকায় বছরের অন্তত একবার এ ফলে স্বাদ নিয়ে থাকেন সবাই।

অন্য খবর  নবাবগঞ্জে ৭জনের শরীরে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এ বছর ভাঙাভিটা এলাকায় প্রায় ২ হাজার বিঘা জমিতে বাঙ্গি চাষ করা হয়েছে।  ফলনও খুব ভাল হয়েছে এ বছর। বেশির ভাগ কৃষকই কমপক্ষে ১০ থেকে ২০ বিঘা জমিতে বাঙ্গি চাষ করে থাকেন। আর ভাঙ্গাভিটার বাঙ্গি পাইকারদের মাধ্যমে পৌছে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এখানে উৎপাদিত ভাঙির হাট বসে নদীর কুলে প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল ১০ টা পর্যন্ত। পাইকাররা বাঙ্গি কেনার উদেশ্যে ট্রলার নিয়ে হাজির হন এই ঘাটে। আর বাঙ্গি কিনে সাজাতে থাকেন যার যার ট্রলারে। এভাবে সারি সারি ট্রলারে বাঙ্গি সাজানো হলে  হদুল রঙের আভা আকৃষ্ট করে ক্রেতাবিক্রেতাদের। কৃষকের মননে উদ্বেলিত করে  ফসলের হাসি। এমন মনকাড়া দৃশ্য দেখতে চাইলে আপনাকে যেতে হবে ভাঙ্গির গ্রাম ভাঙাভিটায়। বাঙ্গি চার্ষীরা আগের দিন ক্ষেত থেকে ভাঙ্গি তুলে চারী ভর্তি করে রাখেন এবং পরের দিন সকালে নিয়ে আসেন হাটে। প্রতিটি চারীতে ছোট বড় মিলিয়ে ৩০/৩৫টি বাঙ্গি থাকে। আগ্রহি ক্রেতারা দুরদুরান্ত থেকে বাঙ্গি কেনার জন্য ট্রলারযোগে এই হাটে আসেন।

কথা হয় ভাঙাভিটা এলাকার বাঙ্গি চার্ষী রবীন্দ্র সরকারের সাথে। তিনি এ বছর ১২ বিঘা জমিতে বাঙ্গির চাষ করেছেন। ফলনও অনেক ভাল হয়েছিল। কিন্তু গত সপ্তাহে শিলাবৃষ্টির কারনে উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শিলাবৃষ্টিতে পচন ধরায় এবছর বাঙ্গি বেশি দিন স্থায়ী না হওয়ায় বাঙ্গি বিক্রি করেও খুব বেশি লাভবান হতে পারবেন না বলে মনে করেন তারা। এছাড়া কৃষি কর্মকর্তা বাঙ্গির আবাদ কারীদের কোন ধরনের সহযোগিতা করেননি বলে তারা অভিযোগ করেন। বাঙ্গি চাষিরা টাইম’স ওয়ার্ল্ডকে বলেন, নানা প্রতিকূলতাকে উপক্ষো করে প্রতিবছরই এখানকার কৃষক বাঙ্গি চাষ করে আসছে। কিন্তু আমরা এ পর্যন্ত সরকারীভাবে কোন সাহায্য সহযোগিতা পায়নি। আমাদের এ চাষে সহায়তার জন্য সহজ শর্তে ঋণ পাওয়ার কথা থাকলে কৃষি কর্মকর্তারা আমাদের খোঁজ খবর রাখেন না। তবে আশার কথা হলো, নিজেদের  ঐতিহ্যর ফলস এবং জীবনের চাঁকা ঘুরাতে আগামী দিনগুলোতে ভাঙাভিটা এলাকার মানুষজন বাঙ্গি চাষ করে যাবেন বলে জানান।

অন্য খবর  অবৈধ সরকারকে হঠাতে তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে - নবাবগঞ্জে মির্জা ফখরুল

 

আপনার মতামত দিন