দোহারে আশা ক্লিনিকের বিরুদ্ধ নবজাতক মৃত্যুর অভিযোগ

309

দোহারে বেসরকারি ক্লিনিকের ভুল চিকিৎসদোহার উপজেলার লটাখোলা এলাকায় ‘আশা ক্লিনিকে’ ভুল চিকিৎসার কারনে নবজাতকের মৃত্যুর ঘটে। শনিবার( ১৮ জুলাই) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ মৃত নবজাতককে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্র কোন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে বলা হয় বলে অভিযোগ করেছেন ভূক্তভোগী পরিবার।

ভুক্তভোগী সামসুন্নাহার জানান, গতকাল শুক্রবার দোহার উপজেলার বাস্তা এলাকা থেকে রাতে প্রসবজনিত ব্যাথা নিয়ে ভর্তি হন আশা ক্লিনিকে। সে সময় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তাদেরকে আলট্রা করতে বলেন। আমরা আলট্রা করলে তারা বলে যে বাচ্চা বের করার জন্য তাকে দ্রুত অপারেশন করার কথা বলেন। আজ সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে অপারেশন করেন ডা. বিরেন্দ্র কুমার বিশ্বাস। তিনি আরও বলেন, অপারেশনের কিছুক্ষন পর আমার বাচ্চা মারা যায়। আমার বাচ্চা জীবিত থাকা অবস্থায় কোন প্রকার চিকিৎসা না দিয়েই তারা আমার মৃত বাচ্চাটিকে অন্যত্র নিয়ে যেতে বলেন।

সামসুন্নাহারের মা রেনু বেগম জানান, আমার মেয়ের অপারেশন শেষ হলে, আমরা বাচ্চার কান্নার শব্দ শুনতে পাই। পরে অপারেশনের আধাঘন্টা পর আমার নাতনীকে আমার কোলে দেয় এক নার্স। এসময় আমার নাতনী কোনো সারা শব্দ না দেয়ায় আমি তাদের বলি বাচ্চা নীল হয়ে গিয়েছে কেন , কোনো সারা দিচ্ছেনা কেন? আমার নাতনী তো মারা গেছে । এসময় ক্লিনিকের লোকজন আমাকে বাচ্চা নিয়ে অন্যত্র চিকিৎসা দিতে বলেন। আমরা তখন তাড়াতাড়ি করে দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে ডাক্তার জানায় বাচ্চাটি অনেক আগেই মারা গেছে। সঠিক চিকিৎসা না দেয়ার কারনে এই বাচ্চাটি মারা গেছে। তারা আমাদের মৃত বাচ্চাকে নিয়ে কেন এত হয়রানি করলো। আমরা গরীব বলে এর বিচার কি পাব না।

অন্য খবর  সরকারি পদ্মা কলেজের পক্ষ থেকে নবনিযুক্ত ইউএনও কে শুভেচ্ছা

এদিকে ক্লিনিকের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও অপারেশন রুমে ঘুরে দেখা যায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলছে চিকিৎসা সেবা।

এবিষয়ে আশা ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহাদাৎ হোসেন মোল্লা জানান, বাচ্চাটির বয়স ছিলো মাত্র ৩৫ মাস। অক্সিজেন কম পাওয়ায় আমরা দ্রুত অপারেশন করতে বলি। অপারেশনের পর বাচ্চা জীবিত ছিলো কিন্তু অবস্থা খারাপ থাকায় অন্যত্র নিয়ে যেতে বলি আমরা।

সে সময় তার আরেক আত্মীয় শামীম হোসেন জানান যে আমার মামির অপারেশন করার পর তারা বলে তাকে রক্ত দিতে হবে তাড়াতাড়ি রক্তের ব্যাবস্থা করেন আমি তখন আমার রক্ত দেই কিন্তু রক্ত দেওয়া ৪৫ মিনিট পার হয়ে যায় তারা আমার মামিকে রক্ত দেয় না তখন আমি কাউন্টার এ যোগাযোগ করলে তারা বলে যে আমরা কিছু জানি না ডাক্তার বলতে পারবে তখন আমি ডাক্তার এর কাছে গেলে ডাক্তার বলে আমি তো তাদেরকে বলে দিয়েছে রক্ত দেওয়ার জন্য এ ভাবে তারা আমাদের কে ১৫ মিনিট ঘুরায় তার পর অবশেষে তারা ১ ঘন্টা পরে রক্ত দেয় আমার মামিকে।

এসময় ডা. বিরেন্দ্র কুমার বিশ্বাস কে তার চিকিৎসক সনদ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাক্তার, তার কাছে তার কাগজ পত্র চাওয়া হলে তিনি তা দেখাতে পারেন না এমনকি তার কাছে তার ভিজিটিং কার্ড চাইলেও তিনি না করেন যে আমার কোন ভিজিটিং কার্ড নাই।

তারপর ক্লিনিকের বৈধ কাগজপত্র চাইলে ডাক্তারের শুধুমাত্র বিএমডিসির সার্টিফিকেট দেখাতে পারলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২০১৭ সালের ক্লিনিকের নবায়নকৃত একটি সার্টিফিকেট দেখাতে পারেন না।

এসময় তিন বছর ধরে সার্টিফিকেট কেন নবায়ন করেননি জানতে চাইলে শাহাদাৎ হোসেন মোল্লা বলেন, আমার গত বছর নবায়ন করতে দিয়েছি। সেই সময় তার কাছে নবায়েনের আবেদনের কপি চাইলে সেটিও তিনি দেখাতে পারেননি।

অন্য খবর  দোহার স্বাস্থ্যবিধি ও লকডাউন বাস্তবায়নে উপজেলা প্রশাসনের মতবিনিময়

এবিষয়ে দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এফ এম ফিরোজ মাহমুদ জানান, আমার খুব শীঘ্রই দোহারের ক্লিনিকগুলোতে অভিযান পরিচালনা করবো। এছাড়া আশা ক্লিনিকে যদি কোনো ভুল চিকিৎসা দিয়ে থাকে ও লাইসেন্স নবায়ন না থাকে আমরা সেই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

উল্লেখ ২৫/৫/২০১৮ সালে তারা এই ধরনের আরেকটি ঘটনা ঘটায়। দুবলী থেকে দেলোয়ার হোসাইন তার স্ত্রী কে নিয়ে আসেন লোটা খোলা আশা ক্লিনিক এ তারা বলেন তার কিছু পরীক্ষা করতে তিনি তার স্ত্রীর সেই পরিক্ষা গুলো করেন তারপর তারা বলেন তার স্ত্রীর পেটে যে বাচ্চা আছে সেটি মরে গিয়েছে তাই সেই বাচ্চা ফেলে দিতে হবে। তখন দেলোয়ার হোসেইন বললেন যে আচ্ছা তাহলে আপনারা যেটা ভাল হয় সেটা করেন তখন তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে তারা তার স্ত্রীর বাচ্চা ফেলে দেন। কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই তার স্ত্রীর পেটে আবার ব্যাথ্যা শুরু হয় তখন দেলোয়ার হোসেইন তার স্ত্রী কে অন্য হাসপাতালে নিলে তারা বলেন যে তার পেটে বাচ্চা রয়েছে। তখন দেলোয়ার হোসেইন আশা ক্লিনিক এ জানতে চাইলে তারা কিছু বলেন না বলেন অপারেশন করতে হবে তখন তিনি বলেন আচ্ছা তাই করেন। তখন ডাঃ লাকি রহমান অপারেশনের করেন। তারপর অপারেশন শেষ দেলোয়ার কে জানানো হয় যে তার স্ত্রী মৃত সন্তান জন্ম দিয়েছেন। কিন্তু তখন তিনি বলেন যে আমার বাচ্চা টি তো জীবিত ছিল। তখন হাসপাতাল থেকে তাকে কিছু বলেন না পরবর্তীতে তিনি জানান যে এটি মিমাংসা করে দেওয়া হয়েছে ক্ষতি পূরনের মাধ্যমে।

আপনার মতামত দিন