ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ওই ৪টি ধারায় যা আছে

    429

    ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৪টি ধারা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও ১০টি দেশ। তারা বলেছে, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এই ধারাগুলো জনগণের মুক্ত বাক-স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবে। এই আইনের শাস্তি, জামিন অযোগ্য ধারা  এবং এই আইনের অপব্যবহার—এই তিনটি বিষয় নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। রবিবার (২৫ মার্চ) সচিবালয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসব দেশের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিরা যে চারটি ধারার বিষয়ে তাদের উদ্বেগ জানিয়েছেন সে চারটি ধারা হচ্ছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ধারা ২১, ধারা ২৫, ধারা ২৮ এবং ধারা ৩৫।

    রবিবার আইনমন্ত্রীর সঙ্গে ওই বৈঠকে রাষ্ট্রদূতদের প্রতিনিধি দলটির নেতৃত্ব দেন ঢাকায় নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত ড. থমাস প্রিন্স। প্রতিনিধি দলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), সুইডেন,যুক্তরাষ্ট্র, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, কানাডা, ইউকে, স্পেন, নরওয়ে এবং সুইজারল্যান্ডের  রাষ্ট্রদূতের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

    বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী জানান,‘আমাদের আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। এখন আমরা নিজেরা বসে  আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবো।’

    চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি জেল জরিমানার বিধান রেখে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন—২০১৮-এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিপরিষদ। আইনটি সংসদে পাস হলে বর্তমানে বলবৎ থাকা তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭ ও ৬৬ ধারা পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে হবে। এ আইনটির প্রয়োজনীয়তা ব্যক্ত করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ‘ সম্প্রতি দেশে সাইবার অপরাধের আধিক্য এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মতো ঘটনা ঘটেছে। ফলে এ আইন করার প্রয়োজন হয়েছে। আগে সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে দেশে কোনও আইন ছিল না। এখন এই জাতীয় সব অপরাধের বিচার এই আইনের আওতাভুক্ত করা হয়েছে।’

    ‘আইনে ডিজিটালের সংজ্ঞা,ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব করা,ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম গঠন,প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠনের কথা বলা হয়েছে। নতুন আইনের ১৭ থেকে ৩৮ ধারায় বিভিন্ন অপরাধ ও শাস্তির বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।’ এই ধারাগুলোর মধ্যে ২১,২৫,২৮ ও ৩৫ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন রাষ্ট্রদূতরা।

    কী আছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১ ধারায় ?

    ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এর ২১ ধারায় বলা হয়েছে, ‘মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা জাতির পিতার বিরুদ্ধে কোনও প্রকার প্রপাগান্ডা বা প্রচারণার দণ্ড। (১) যদি কোন ব্যক্তি ডিজিটাল মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা জাতির পিতার বিরুদ্ধে কোনও প্রকার প্রপাগান্ডা বা প্রচারণা চালায় বা তাতে মদত প্রদান করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ। (২) যদি কোনও ব্যক্তি উপধারা (১) এর অধীন কোনও অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ১৪ (চৌদ্দ) বৎসর কারাদণ্ডে বা অনধিক ১ (এক) কোটি টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন। (৩) যদি কোনও ব্যক্তি উপ ধারা ১ (এক) এ উল্লেখিত অপরাধ দ্বিতীয়বার বা পুনঃ পুনঃ সংঘটন করেন তাহা হইলে তিনি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে বা অনধিক ৩ (তিন) কোটি টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।’

    অন্য খবর  নাজমুল হুদার পর ঢাকা-১৭ আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম নিলেন এরশাদ

    ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এর ২৫ ধারায় বলা হয়েছে, ‘আক্রমণাত্মক, মিথ্যা বা ভীতি প্রদর্শক, তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ ইত্যাদি। এর উপধারাগুলোতে বলা হয়েছে,(১) যদি কোনও ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনও ইলেকট্রিক বিন্যাসে,(ক) ইচ্ছাকৃতভাবে বা অজ্ঞাতসারে,এমন কোনও তথ্য প্রেরণ করেন যাহা আক্রমণাত্মক বা ভীতি প্রদর্শক,বা (খ) এমন কোনও তথ্য সম্প্রচার বা প্রকাশ করেন, যাহা কোনও ব্যক্তিকে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ করিতে পারে বা (গ) মিথ্যা বলিয়া জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও কোনও ব্যক্তিকে বিরক্ত, অপমান, অপদস্ত বা হেয় প্রতিপন্ন করিবার অভিপ্রায়ে কোনও তথ্য উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ,কিংবা সম্প্রচার করেন, বা (ঘ) রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুণ্ন করিবার  বা  বিভ্রান্তি ছড়াইবার উদ্দেশ্যে, অপপ্রচার বা মিথ্যা বলিয়া জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও কোনও তথ্য সম্পূর্ণ বা আংশিক বিকৃত আকারে প্রকাশ, প্রচার বা সম্প্রচার করেন বা করিতে সহায়তা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ। (২) যদি কোনও ব্যক্তি উপধারা (১) এর অধীন কোনও অপরাধ সংঘটন করেন তাহা হইলে তিনি অনধিক ৩ (তিন) বৎসর কারাদণ্ডে বা অনধিক ৩ (তিন) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দন্ডে দণ্ডিত হইবেন। (৩) যদি কোনও ব্যক্তি উপধারা (১) এ উল্লিখিত অপরাধ দ্বিতীয় বার বা পুনঃ পুনঃ সংঘটন করেন তাহা হইলে তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ডে বা অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

    অন্য খবর  জঙ্গিবাদ আদর্শিক নয়, সন্ত্রাসীদের মতবাদ - অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম

    ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এর ২৮ ধারায় বলা হয়েছে,‘ওয়েবসাইটে বা কোনও ইলেকট্রিক বিন্যাসে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভুতিতে আঘাত করে এমন কোনও তথ্য প্রকাশ, সম্প্রচার, ইত্যাদি। – (১) যদি কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করিবার অভিপ্রায়ে ওয়েবসাইট বা অন্য কোনও ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার, করেন বা করান যাহা ধর্মীয় অনুভূতি বা ধর্মীয় মূল্যবোধের ওপর আঘাত করে তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ। – (২) যদি কোনও ব্যক্তি উপধারা ১ (এক) এর অধীনে কোনও অপরাধ সংঘটন করেন তাহা হইলে তিনি অনধিক সাত বছরের কারাদণ্ডে বা অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন। (৩) যদি কোনও ব্যক্তি উপধারা ১ (এক) এ উল্লিখিত অপরাধ দ্বিতীয়বার বা পুনঃ পুনঃ সংঘটন করেন তাহা হইলে তিনি অনধিক ১০ (দশ) বৎসর কারাদণ্ডে বা অনধিক ২০ (বিশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।’

    ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এর ৩৫ ধারায় বলা হয়েছে,‘অপরাধ সংঘটনে সহায়তা ও উহার দণ্ড। (১) যদি কোনও ব্যক্তি এই আইনের অধীন কোনও অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করেন তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ। (২) অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করিবার ক্ষেত্রে মূল অপরাধটির জন্য যে দণ্ড নির্ধারিত রহিয়াছে কোনও ব্যক্তি সেই দণ্ডেই দণ্ডিত হইবেন।’

    এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাসুদ মিয়া জানিয়েছেন,এ আইনের ফলে মানুষের কাজের জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত করবে। কাজের পরিধি ও উদ্যোগকে নিয়ন্ত্রণ করবে।

    ঢাকা জজ কোর্টের অ্যাডভোকেট গোলাম ফারুক বলেছেন, এ আইন মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করবে।

    আপনার মতামত দিন