জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান ঘোষণার প্রস্তাব সালমান এফ রহমানের

423

জয় বাংলা স্লোগানকে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব দিয়েছেন ঢাকা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। সংবিধান সংশোধন করে এ প্রস্তাব বাস্তবায়নের পরামর্শ দেন তিনি। গতকাল সংসদে প্রেসিডেন্টের ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ প্রস্তাব দেন। প্রায় ২০ মিনিটের বক্তব্যে সালমান এফ রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধুকে যেভাবে জাতির পিতা হিসেবে সংবিধান সংশোধন করে ঘোষণা করেছি তেমনি জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান হিসেবে সংবিধান সংশোধন করে ঘোষণা করি। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ
দিতে চাই- উনি উনার ভাষণে বাংলাদেশ বর্তমানে যেখানে আছে সেটার বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরেছেন। আমি বিশেষ করে রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাতে চাই যে উনি জয় বাংলা বলে উনার ভাষণটা শেষ করেছেন।

সালমান এফ রহমান বলেন, আমার নির্বাচনের সময় বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দ ও কর্মীরা আমাকে সমর্থন করেছিল। তারা যখন তাদের বক্তব্যটা শেষ করলো তখন উপস্থিত আওয়ামী লীগের যেসব নেতৃবৃন্দ ছিল তারা বললো জয় বাংলা বলো, জয় বাংলা বলো। আমি দেখলাম, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির নেতারা- যারা আমাকে সমর্থন করলো তারা লজ্জা পাইলো, দ্বিধা করলো।

কিন্তু চাপে জয় বাংলাটা বললো। আমার যখন সময় আসলো বক্তব্য দেয়ার তখন বললাম আমি আশ্চর্য হচ্ছি- যে আপনারা জয় বাংলা বলতে লজ্জা পাচ্ছেন কেন? আপনারা জয় বাংলা বলতে দ্বিধা করছেন কেন? জয় বাংলা কিন্তু আওয়ামী লীগ অথবা দলীয় কোনো স্লোগান নয়। জয় বাংলা জাতীয় স্লোগান। তিনি বলেন, আমরা যখন ছাত্র আন্দোলন করেছিলাম তখন জয় বাংলা স্লোগানের ওপরে আন্দোলন করেছি। মুক্তিযুদ্ধের সময় যখন মুক্তিবাহিনী জোর গলায় জয় বাংলা বলতো তখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বুক কাঁপতো। তারা বলতো- মুক্তি আগেয়া, মুক্তি আগেয়া।

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের বক্তব্য জয় বাংলা বলে শেষ করেছেন। আমি বুঝি না জয় বাংলা দলীয় স্লোগান কেমনে হইলো। জয় বাংলা স্লোগানের ওপর আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। জয় বাংলা হলো আমাদের দেশের স্লোগান, আমাদের জাতীয় স্লোগান। সালমান এফ রহমান বলেন, অনেক সময় আমরা সরকারি অনুষ্ঠানে দেখি, আমরা যারা রাজনীতিবদরা আছি তারা জয় বাংলা বলে বক্তব্যটা শেষ করি। কিন্তু যারা সরকারি কর্মকর্তা আছেন তারা কিন্তু জয় বাংলা বলেন না। আমি জিজ্ঞেস করেছি যে, আপনারা জয় বাংলা বলেন না কেন। তারা বলেন- আমরা তো সরকারি কর্মকর্তা আমাদের তো নিরপেক্ষ থাকতে হবে। আমরা যদি জয় বাংলা বলি তাহলে দলীয় হয়ে যাবো। আমরা তো নির্দলীয়। আমার কাছে এটা আশ্চর্য লাগে। যে দেশটা জয় বাংলা স্লোগানে স্বাধীন হয়েছে, যে দেশটা না হলে উনারা পদে থাকতেন না। উনারা কীভাবে বলেন যে, এটা দলীয় স্লোগান, এটা নির্দলীয় স্লোগান না। আমি যে কথাটি বলতে চাচ্ছি- মাননীয় রাষ্ট্রপতিও তার ভাষণটা শেষ করেছেন জয় বাংলা বলে।

অন্য খবর  আব্দুল মান্নানের বাসায় ককটেল নিক্ষেপ

তাহলে উনারা কি বলতে চান রাষ্ট্রপতি দলীয় হয়ে গেলেন। উনি শুধু আওয়ামী লীগের রাষ্ট্রপতি? দেশের রাষ্ট্রপতি নন? তিনি তো সারা দেশের রাষ্ট্রপতি। বক্তব্যে সালমান এফ রহমান বলেন, গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। যার নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতাটা পেয়েছি। গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি ৩০ লাখ শহীদদের। যাদের রক্তের বিনিময়ে এবং ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমরা আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ পেয়েছি। তিনি বলেন, আমি নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে করি। বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠপুত্র শেখ কামালের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলাম। আমি ছাত্র আন্দোলনে শেখ কামালের সঙ্গে ছিলাম। স্বাধীনতার পরে যখন শেখ কামাল আবাহনী ক্রীড়াচক্র এবং স্পন্দন শিল্পগোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করলো আমি তার সঙ্গে ছিলাম। শেখ কামাল সৎ, দক্ষ, নিষ্ঠাবান এবং দেশপ্রেমিক ব্যক্তি ছিলেন। আমি নিজের চোখে দেখেছি, স্বাধীনতার পরে অনেক ব্যবসায়ী দেশি-বিদেশি তার কাছে তার অনুগ্রহের জন্য এসেছে। যদি সে তখন চাইতো কোটি কোটি টাকা বানাতে পারতো। যেহেতু সে সৎ ছিল, দেশপ্রেমিক ছিল তাই সে কিন্তু তাদের পাত্তা দেয়নি। আমি লন্ডন যাচ্ছিলাম। কামালকে জিজ্ঞেস করলাম তোমার জন্য কি আনবো? চাইলে একটি দামি ঘড়ি, একটা দামি কলম চাইতে পারতো। নিজের জন্য একটা শার্ট পর্যন্ত আনতে বলেনি। সে বললো- তুমি লন্ডন যাচ্ছো- আমার আবাহনীর খেলোয়াড়দের জন্য জার্সি এবং ক্যাপ নিয়ে আসো। আমি চাই আমাদের খেলোয়াড়রা যেন আন্তর্জাতিক মানের জার্সি এবং ক্যাপ পরে খেলে। তারপর আমি জাপান যাচ্ছিলাম।

জিজ্ঞেস করলাম- কিছু আনবো তোমার জন্য। আবার একই কথা। নিজের জন্য কিছু চায়নি। বললো, তুমি জাপান যাচ্ছো আমার স্পন্দনের জন্য কিছু নিয়ে এসো। তিনি বলেন, আমি যে বললাম শেখ কামাল সৎ, নিষ্ঠাবান আর দেশপ্রেমিক ছিল, কিন্তু কেন ছিল? আমি বিশ্বাস করি বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গমাতার গুণাবলীগুলো সে পেয়েছিল। ঠিক যেমনি শেখ কামাল বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতার গুণাবলি পেয়েছিল ঠিক তেমনি জননেত্রী শেখ হাসিনা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং তার ছোট বোন শেখ রেহেনা বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতার সেই গুণাবলি পেয়েছেন। তারাও সৎ, দক্ষ, নিষ্ঠাবান এবং দেশপ্রেমিক। তিনি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেকবার বলেছেন, সংসদেও বলেছেন- উনি যা কিছু করছেন দেশের জন্য করছেন, নিজের জন্য করছেন না। তিনি বলেছেন- তিনি যদি চাইতেন তাহলে অনেক সম্পদ গড়তে পারতেন। কিন্তু তিনি সবসময় বলেন, আমার একটিই সম্পদ সেটা হলো- আমার ছেলেমেয়েদেরকে ভালো শিক্ষা দিতে পেরেছি। জননেত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ইউনিভার্সিটি অব ব্যাঙ্গালোর ও ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস থেকে বিএসসি এবং কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং মাস্টার্স করেছেন। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স ইন এডমিনিস্ট্রেশনে পড়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা সজীব ওয়াজেদ জয়কে উনার আইসিটি উপদেষ্টা নিয়োগ করে বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ করার দায়িত্ব দিলো।

অন্য খবর  মুকসুদপুর ইউনিয়নে বাজেট ঘোষণা

আমরা সবাই জানি, সজীব ওয়াজেদ জয় সেই দায়িত্বটা সফলতার সঙ্গে বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ করতে সক্ষম হয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল আমেরিকা থেকে উচ্চ ডিগ্রী অর্জন করেছেন। আমরা সবাই জানি, উনি বাংলাদেশে যে অটিজমের ওপর কাজগুলো করেছেন, তার স্বীকৃতিতে জাতিসংঘ উনাকে আন্তর্জাতিক দূত হিসেবে নিয়োগ করেছে। ঠিক যেমনি জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন যে, তার ছেলেমেয়েকে তিনি শিক্ষা দিতে পেরেছেন। তারাই হলো তার সবচেয়ে বড় সম্পদ। ঠিক তেমনি শেখ রেহানা আমাকে অনেকবার বলেছেন তিনিও যদি চাইতেন অনেক সম্পদ তৈরি করতে পারতেন। কিন্তু তিনিও আমাকে অনেকবার বলেছেন- আমার সম্পদটা হলো আমার ছেলেমেয়েদেরকে আমি শিক্ষা দিতে পেরেছি এবং তাদের মানুষ করতে পেরেছি। রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি শেখ রেহেনার ছেলে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস থেকে ব্যাচেলর ও মাস্টার্স করে ইউএনডিপিতে চাকরি করছেন।

ববি কিন্তু ঢাকায় গত ৭ বছর ধরে থাকছেন। কিন্তু কোনো মন্ত্রী, কোনো সচিব, কোনো কর্মকর্তা বলতে পারবে না যে, ববির কাছ থেকে একটি টেলিফোন তারা পেয়েছেন কোনো তদ্বিরের জন্য, কোনো ব্যবসার তদ্বিরের জন্য অথবা কোনো বদলির তদ্বিরের জন্য। শেখ রেহানার বড় মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ইউনিভার্সি অব লন্ডন থেকে গ্রাজুয়েট হয়ে কিংস কলেজ অব লন্ডন থেকে দুই-দুইটা মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়েছেন। আপনারা সবাই জানেন উনি আজকে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। শেখ রেহানার ছোট মেয়ে রুপন্তী অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে গ্রাজুয়েট হয়েছেন। তিনি এখন একটি আন্তর্জাতিক কনসালটেন্ট কোম্পানিতে চাকরি করছেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গমাতার গুণাবলি শুধু শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা পান নাই, উনার ছেলেমেয়েরাও পেয়েছেন। তাদের শিক্ষা-দীক্ষায় সেটাই প্রমাণ হয়েছে।

১০ বছর আগে যদি আমাকে কেউ বলতো যে আগামী ১০ বছরে বাংলাদেশ এই পর্যায়ে চলে আসবে আমি কিন্তু বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু বাস্তবে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ এমন জায়গায় পৌঁছেছে যেটা অকল্পনীয়। তিনি বলেন, অনেক লোকজন বলছে যে উনি বিদ্যুতের সমস্যার সমাধান করেছেন এজন্য আমরা এই অবস্থানে আসতে পেরেছি, অনেকে বলছেন আমরা কৃষিক্ষেত্রে আজ এত উন্নয়ন করতে পেরেছি। অনেকগুলো কারণে আমরা আজ এই জায়গায় আসতে পেরেছি। আমি বিশ্বাস করি, এই জায়গায় আসার মূল কারণ জননেত্রী শেখ হাসিনা। কারণ তিনি সৎ, দক্ষ,নিষ্ঠাবান ও দেশপ্রেমিক। তিনি বলেন, শেষ করার আগে আমি আমার একটি দুঃখের কথা বলতে চাই। সেটা হলো-এখনও কয়েকটি খবরের কাগজ আছে যারা বঙ্গবন্ধু শব্দটা ব্যবহার করে না। এমনকি একটি কাগজ আছে যে আমাদের বর্তমানে যেসব সংসদ সদস্য আছেন তাদের পরিবার ওটার মালিক তারাও কিন্তু বঙ্গবন্ধু শব্দটা ব্যবহার করে না। শুধু শেখ মুজিবুর রহমান লেখে। এটা খুবই দুঃখ জনক।

আপনার মতামত দিন