জনতার কাতারে নেওয়ার অঙ্গীকার – ট্রাম্প

    316

    মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রথম ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। অভিষেক ভাষণে তিনি বলেছেন, ‘এই দিনটি আপনাদের। এই বিজয় আপনাদের, যুক্তরাষ্ট্রের।’ ক্ষমতাকে জনতার কাতারে নেওয়ার অঙ্গীকার করেন তিনি। জানান, প্রেসিডেন্ট হাউসের ক্ষমতাকে তিনি প্রত্যেক মার্কিনির কাছে নিয়ে যাবেন। তবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম ভাষণেই বিভক্ত আমেরিকার পক্ষে নিজের সম্ভাব্য ভূমিকার কথা জানিয়েছেন ট্রাম্প। নেটিভ আমেরিকানদের প্রতি পক্ষপাত স্পষ্ট হয়েছে তার বক্তব্যে।
    এর আগে ক্যাপিটল হিলে প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস ট্রাম্পকে শপথ বাক্য পাঠ করান। আর এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাম্প যুগের সূচনা হয়।
    ক্ষমতা গ্রহণের ভাষণে ২০ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখটিকে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ স্মরণে রাখবে বলে মন্তব্য করেন ট্রাম্প। সে সময় তিনি বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং ফার্স্টলেডি মিশেল ওবামাকে ধন্যবাদ জানান। তিনি তাদের চমৎকার মানুষ হিসেবে বর্ণনা করেন।
    গত নভেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ট্রাম্প। শপথ নেওয়ার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করলেন তিনি। ট্রাম্পের আগে নতুন ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন মাইক পেন্স।
    শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা, সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ, দেশটির উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষের প্রতিনিধিরা, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও সামরিক বেসামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা যোগ দেন। লাখো মানুষ ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করে।
    তবে ক্ষমতা গ্রহণের ভাষণে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভও হয়েছে। সেই বিক্ষোভ রূপ নিয়েছে সংঘর্ষে। নতুন প্রেসিডেন্টের শপথের দিনেই রক্তাক্ত হয়েছে মার্কিন জনতা।
    তা সত্ত্বেও ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য লড়াই করবেন। তার প্রশাসনের প্রতিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণে সবার আগে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।
    ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানকে ঘিরে ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। ওয়াশিংটনকে রীতিমতো দুর্গে পরিণত করা হয়। মোতায়েন করা হয় বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর হাজার হাজার সদস্য। ক্ষমতা গ্রহণের কিছু সময় আগে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঐক্যবদ্ধ আমেরিকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ট্রাম্প বলেছেন, সবাইকে নিয়ে তিনি আমেরিকাকে আবারও মহত করে তুলবেন। শপথের পরেও তিনি সব মানুষের রক্ত এক বলে মন্তব্য করেন।

    অন্য খবর  ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি সালমান এফ রহমানের সংবর্ধনা; আসছে জেমস

    তবে ট্রাম্পের প্রতি বিশ্বাস নেই অনেক আমেরিকানের। কৃষ্ণাঙ্গদের, মেক্সিকানদের আর মুসলমানদের তিনি পৃথক করেছিলেন নির্বাচনী প্রচারণার কাল থেকেই। সামনে এনেছিলেন জাতি-বর্ণ-ধর্মে বিভক্ত হয়ে থাকা আমেরিকাকে। তাই ট্রাম্পের ঐক্যের অঙ্গীকার সত্ত্বেও ওয়াশিংটনে ঢল নেমেছে প্রতিবাদীদের। ট্রাম্পের প্রতি তীব্র অনাস্থার কথা প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে জানিয়ে দিতে চাইছে তারা। শপথ অনুষ্ঠানের সময় ঘনিয়ে আসতেই সেই বিক্ষোভ জোরালো হয়। অনুষ্ঠান শেষ না হতেই বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের খবর দিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান।
    অভিবাসীদের প্রশ্নে তিনি বলেছেন, ‘আমরা দুটি সাধারণ নীতি অনুসরণ করবো। এটা হচ্ছে, বাই আমেরিকান, হায়ার আমেরিকান।’ এর মাধ্যমে মূলত যুক্তরাষ্ট্রের চাকরির বাজারে অভিবাসীদের চাইতে আমেরিকানদের প্রাধান্য দেওয়ার ইঙ্গিত দিলেন ট্রাম্প। ক্ষমতা গ্রহণের পর দেওয়া ভাষণে ইসলামি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধেরও ঘোষণা দেন ট্রাম্প।
    ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ স্লোগানকে নির্বাচনি প্রচারণার অস্ত্র করেছিলেন ট্রাম্প। তার এই মহান আমেরিকা দিয়ে তিনি সেই কলম্বাসের আবিষ্কৃত আমেরিকাকে বুঝিয়ে থাকেন; যা শ্বেতাঙ্গ আাধিপত্যেরই নামান্তর। কালজয়ী ঐতিহাসিক হাওয়ার্ড জিন তার ‘পিপলস হিস্টরি অব আমেরিকা’য় লিখেছেন কিভাবে আদিবাসীদের ওপর হত্যা-নির্যাতন চালিয়ে, তাদের সম্পদ লুণ্ঠন করে এই কথিত আমেরিকায় শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য কায়েম করা হয়েছিল আর তার নাম দেওয়া হয়েছিল আমেরিকা আবিষ্কার। সেই শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যের রাজনীতির বিপরীতে বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠী ও শ্রেণি-পেশার মানুষকে স্থাপন করেছেন ট্রাম্প। তাদের মধ্যকার বিভক্তিকে সামনে আনতে চেয়েছেন। ক্ষমতা গ্রহণের ভাষণে ঐক্যের কথা বলেও সেই বিভক্তিকে আড়াল করতে পারেননি তিনি।

    আপনার মতামত দিন