কেরানীগঞ্জ, নবাবগঞ্জ, দোহার ও ধামরাই উপজেলায় বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ

    198

    রাজধানীর পাশে কেরানীগঞ্জ, নবাবগঞ্জ, দোহার ও ধামরাই উপজেলায় বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। সরকারি হিসেবে, গত ৪৮ ঘণ্টায় ঢাকা জেলায় ১০৭ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে কেরানীগঞ্জে ডেঙ্গু আক্রান্ত দুই স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। এরা হলো- সৌরভ (১০) ও ফাহিম (১৫)। সৌরভ ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ইস্পাহানী এলাকার বাসিন্দা এবং তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। তার পিতার নাম ফিরোজ হোসেন। ফাহিম দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার শুভাঢ্যা উত্তর পাড়া এলাকার বাসিন্দা ফারুক আহমেদের ছেলে এবং নবম শ্রেণির ছাত্র। সৌরভ গত ৩১শে আগস্ট রাত ১০ টায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের ডেঙ্গু সেল শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
    হাসপাতালে উপ-পরিচালক নির্মল কুমার সেন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সৌরভের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। অপরদিকে, ফাহিম ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি ছিল। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় ৮ই জুলাই সে মারা যায়। ফাহিমের পিতা ঢাকার ডিসি অফিসের কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ জানান, তার ছেলে পুরান ঢাকার আহমেদ বাওয়ানি স্কুলে প্রভাতি শাখায় ৯ম শ্রেণিতে পড়তো। কেরানীগঞ্জ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোবারক হোসেন বলেন, কেরানীগঞ্জে এ পর্যন্ত ১২ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে।
    অপরদিকে, দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ ওই উপজেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। তবে পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আছে বলে জানিয়েছেন, দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জসিম উদ্দিন ও নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শহিদুল ইসলাম। দোহার পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউর রহমান জানান, সরকার সিটি করপোরেশনকে যেভাবে সহযোগিতা করে পৌরসভাকে তেমন সহযোগিতা করছে না। আমাদের জনবল, আর্থিক সংকট ও মশা স্প্রে করার যন্ত্রপাতির ঘাটতি রয়েছে। যে কারণে ডেঙ্গু মশা নিধনে কোনো অগ্রগতি নেই। সরজমিনে দেখা যায়, ডেঙ্গুবাহী এডিস মশা নিধনে তেমন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা দোহার, নবাবগঞ্জ ও কেরানীগঞ্জের কোথাও চোখে পড়েনি। সংশ্লিষ্ট পৌরসভা সূত্র জানায়, আর্থিক সংকটের কারণে মশা নিধনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছে না পৌরসভাগুলো। এদিকে, রাজধানী ঢাকার সঙ্গে এসব উপজেলার মানুষের প্রতিদিন যাতায়াত থাকার কারণে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন কেরানীগঞ্জ, নবাবগঞ্জ ও দোহার উপজেলার মানুষ। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, গত ২৪শে জুলাই থেকে ৪ঠা আগস্ট পর্যন্ত নবাবগঞ্জে ৩০ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এদের দুইজন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন এবং মনির হোসেন নামে রোগীর অবস্থা গুরুতর দেখে তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের ৭ জনের নাম জানা গেছে। এরা হলেন, আরিফ হোসেন (১০), রাহাত হোসেন (২০), মো. রুহুল আমিন (৪০), মেহনাজ রিয়া (২২), সদানন্দ (৭৫), আশা মনি (১৮) এবং লিমন (২৬)। নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শহিদুল ইসলাম ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের বিষয় নিশ্চিত করেছেন। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানান, ভর্তিকৃত রোগীরা বর্তমানে শঙ্কামুক্ত। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি না থাকায় প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে পরীক্ষা করিয়ে ডেঙ্গু নিশ্চিত করতে হয়। তিনি আরো বলেন, সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী কম খরচে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ক্লিনিক গুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নবাবগঞ্জ উপজেলা প্রাইভেট ক্লিনিক ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. আবদুস ছালাম বলেন, আমরা প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে ডেঙ্গু নির্ণয়ে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছি না। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী যে টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে আমরা সেই নির্দেশনা মেনে চলছি। এ ছাড়া, ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে গতকাল ৬ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করার পর তাদেরকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়। অন্যদিকে, ধামরাইয়ের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল থেকে তিনজন ডেঙ্গু রোগীকে ঢাকাতে রেফার্ড করা হয়েছে। এর আগে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজে পোলট্রি ব্যাবসায়ী জুয়েল ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যান। দ্রুত ঢাকার আশপাশের উপজেলাগুলোতেও পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ও বাংলাদেশের একমাত্র মশা গবেষক অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, শুধু সিটিতে ডেঙ্গু মশা নিধনে মনোযোগী হলে হবে না। ঢাকার পার্শ্ববর্তী উপজেলা গুলোতেও গুরুত্ব দিয়ে মশার ওষুধ স্প্রে করার ব্যবস্থা নিতে হবে। একইসঙ্গে এলাকাবাসীকে স্বউদ্যোগে মশা যেখানে উৎপন্ন হয়, সেসব স্থান ধ্বংস করতে হবে। যেহেতু উপজেলাগুলোতে ডেঙ্গু মশার ব্যাপকতা এখনো বৃদ্ধি পায়নি সেহেতু জনসচেতনতার মাধ্যমে মশা যাতে সৃষ্টি না হতে পারে সেজন্য বেশি বেশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাতে হবে।

    আপনার মতামত দিন