কবর থেকে তোলা সানিয়ার লাশ ৫ দিন ধরে ঢামেক মর্গে

509

 

পুনঃময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে উত্তোলনের পর নবাবগঞ্জের গৃহবধূ সানিয়ার (২৩) মরদেহ ৫ দিন ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে পড়ে আছে। পুলিশের গাফিলতিসহ নানা জটিলতায় ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকরা লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করতে পারছেন না।

ফরেনসিক সূত্র জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিতে পুলিশের অসহযোগিতার কারণেই এমন ভোগান্তি।

এদিকে সানিয়ার পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ শুরু থেকেই তাদের সঙ্গে নানা ছলচাতুরী করে আসছে। পরিকল্পিতভাবে হত্যার ঘটনাকে আত্মহত্যায় রূপান্তর করা হয়েছে। এমনকি সানিয়া আত্মহত্যা করেছে মর্মে তার বাবা ছানু শেখের নামে ভুয়া কাগজ তৈরি করেছেন নবাবগঞ্জ থানার এসআই আজহারুল ইসলাম।

জানা গেছে, ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ থানার শংকরখালী গ্রামের ছানু শেখ মেয়ে সানিয়াকে প্রায় চার বছর আগে একই গ্রামের হালেমের ছেলে রাসেলের সঙ্গে বিয়ে দেন। বিয়ের পর রাসেল বিদেশে চলে যায়। এরপর থেকে শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গেই ছিল সানিয়া। ২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবর রাতে গলায় ওড়না পেঁচানো সানিয়ার লাশ উদ্ধার করা হয়। তাকে যে রুম থেকে উদ্ধার করা হয়, সেই রুমের দরজা বাইরে থেকে খোলা ছিল। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

সানিয়ার মা লাকি আক্তারের অভিযোগ, যৌতুকের জন্য সানিয়াকে তার শাশুড়ি রাশেদা নির্যাতন করতেন। মেয়ের শান্তির জন্য তারা ৫০ হাজার টাকাও দেন। এরপরও নির্যাতন থামেনি। ঘটনার দিন সানিয়াকে তার শাশুড়ি রাশেদা, দেবর সোহেলসহ অন্যরা মিলে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। এরপর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে আত্মহত্যার নাটক করে। নবাবগঞ্জ থানার এসআই আজহারুল ইসলামকে বশীভূত করে সানিয়ার শ্বশুর পক্ষের লোকজন। এসআই আজহারুল তাদের পক্ষ নিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চাতুরীর আশ্রয় নেন। তিনি সানিয়া আত্মহত্যা করেছে মর্মে একটি কাগজে তার বাবা ছানু শেখের সই নেন। ছানু শেখ বলেন, ‘আমি বেশি লেখাপড়া না-জানা লোক। পুলিশ কী লিখে নিয়ে কিসে আমার স্বাক্ষর নিয়েছে আমি বুঝতে পারিনি।’

অন্য খবর  শান্তির অভিযাত্রী ছাত্র ও সমাজকল্যাণ সংগঠন এর ঈদ সামগ্রী বিতরণ

এদিকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ থেকে সানিয়া আত্মহত্যা করেছে মর্মে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। এ রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করে আদালতে আবেদন করায় পুনঃময়নাতদন্তের জন্য সানিয়ার মরদেহ প্রায় আড়াই মাস পর গত বৃহস্পতিবার কবর থেকে তোলা হয়েছে। ওই দিনই মরদেহ ঢামেক হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। এদিকে এ মামলা তদন্ত করছেন গোয়েন্দা পুলিশ ঢাকা দক্ষিণের এসআই হাবিবুর রহমান। লাশ উত্তোলন করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তিনি ঢামেক ফরেনসিক বিভাগে দেননি। তাই চিকিৎসকরা লাশের পুনঃময়নাতদন্ত সম্পন্ন করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন ঢামেক ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ।

তিনি বলেন, ‘পুলিশের পক্ষ থেকে অসহযোগিতা করা হচ্ছে। আদালতের আদেশনামাসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না দেয়ায় লাশের পুনঃময়নাতদন্ত করতে দেরি হচ্ছে।’ সোমবার বিকালে তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ কাগজপত্র জমা দিলে আমরা মঙ্গলবার বোর্ড গঠন করে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করব।’

এদিকে গোয়েন্দা পুলিশের এসআই হাবিবুর রহমান বলেন, কাগজপত্রের বাহানায় ফরেনসিক বিভাগ হয়রানি করছে। তিনি বলেন, ‘সদিচ্ছা থাকলে যেসব কাগজপত্র জমা দিয়েছি তা দিয়েই লাশের পুনঃময়নাতদন্ত করা সম্ভব।’

 

সানিয়ার নামে সনিয়ার ময়নাতদন্ত রিপোর্ট : সানিয়ার বাবা ছানু শেখ অভিযোগ করে বলেন, গত বছরের ৮ আগস্ট নবাবগঞ্জে সনিয়া নামে আরেক নারী আত্মহত্যা করে। অবৈধ সুবিধা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা ওই নারীর ময়নাতদন্ত রিপোর্ট সানিয়ার নামে চালিয়ে দিয়েছেন। নিহত সানিয়ার স্বামী রাসেলের পরিবারের সঙ্গে আঁতাত করে এমন সব অপকর্ম করেছেন নবাবগঞ্জ থানার এসআই আজহারুল ইসলাম।

অন্য খবর  নবাবগঞ্জে বিকাশ এজেন্ট অফিসে দিন দুপুরে চুরির চেষ্টা

এ ব্যাপারে এসআই আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘সানিয়া আত্মহত্যা করেছে মর্মে আমরা আদালতে ফাইনাল রিপোর্ট দিয়ে দিয়েছি।’ সনিয়া আত্মহত্যা করেছিল কিনা, তার ময়নাতদন্ত রিপোর্ট সানিয়ার বলে চালানো হয়েছে কিনা- এ বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান। ছানু শেখের অন্যান্য অভিযোগের বিষয়গুলোও এড়িয়ে যান এসআই আজহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, এখন মামলার তদন্ত করছেন ডিবি দক্ষিণের এসআই হাবিবুর রহমান। এসব বিষয় তিনি ভালো বলতে পারবেন।

আপনার মতামত দিন