উচ্চাভিলাষী কিশোরের আত্মহত্যা; বন্ধুদের ধিক্কার

594
উচ্চাভিলাষী কিশোরের আত্মহত্যা; বন্ধুদের ধিক্কার

বাংলাদেশে আত্মহত্যার প্রবণতা দিনে দিনে বেড়েই চলছে। এর পেছনে কারণ হিসেবে সামাজিক বিচারহীনতা তো আছেই; সেইসঙ্গে যুক্ত হয়েছে এক শ্রেণির অকালপক্ক কিশোরের উচ্চাভিলাষ পূরণ না হওয়ার ‘রাগ’। সন্তানকে সবসময় চাহিদার সীমানা নির্ধারণ করে দিতে হয়; ভালো-মন্দের পার্থক্য শেখাতে হয়। অতি আদরে অধিক প্রশ্রয় দিলে কী অবস্থা হয় তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন ঝিনাইদহ পৌরসভার কাঞ্চনপুর দক্ষিণ পাড়া গ্রামের বাদশা মিয়া দম্পতি। তাদের ছেলে আহাদ হাসান গত ৭মে আত্মহত্যা করেছে।

ঘটনা অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাবার কাছে মোটরবাইক কেনার আবদার করেছিল সদ্য এসএসজি পাশ করা আহাদ। সেই আবদার পূরণ না হওয়ার এএসসির ফল ঘোষণার একদিন পর সে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। এর আগে সে নিজের এসএসসি পাশের খবর ফেসবুকে জানিয়েছে। পরদিন দুটি ঘুমের বড়ির ছবিও দিয়েছে। শেষ দিনে ‘লাস্ট পোস্ট। সবাই ভালো থেকো। আব্বু-আম্ম খুব মিস করব তোমাদের।’ লিখে আত্মহত্যা করেছে।

পরীক্ষায় ফেল করে, ক্ষুধার জ্বালায়, দেনার দায়ে ডুবে, শ্লীলতাহানি-ধর্ষণ কিংবা গার্হস্থ্য নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যার ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাক। যে কোনো কারণেই হোক, আত্মহত্যা কখনই কাম্য নয়। আহাদের আত্মহত্যার ঘটনাটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সদ্য এসএসসি পাশ করা একটা কিশোর একটা বাইকের জন্য এতটাই আবেগপ্রবণ এবং বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল যে, সে নিজের আবেগ সামলাতে পারেনি। বাবা-মাকে একটা ‘শিক্ষা’ দিতে চেয়েছে। এই বয়সে তার বাইক দরকার- এমন ভাবনা কী করে মাথায় আসল, মা-বাবা কী ভূমিকা পালন করলেন; এসবের কোনো জবাব নেই।

অন্য খবর  হুমায়ূন আহমেদের শেষ দেশে ফেরা: একই বিমানে তিন ভূবনের তিনজন

আহাদের বন্ধু এবং স্কুলের শিক্ষকরা বলেছেন, আহাদ খুব রাগী ছিল। বাবা-মায়ের ওপর রাগ করে প্রায়ই নানা কাণ্ড ঘটাত। আহাদের শেষ দুটি স্ট্যাটাসে তার বন্ধুদের মন্তব্য লক্ষ্যণীয়। সেখানে শোক প্রকাশের চেয়ে ছিল বন্ধুর প্রতি ধিক্কার! যেমন মোঃ মহিউদ্দিন টিপু লিখেছেন, ‘তুমি মরেছ ভালো হয়েছে। তোমার মাথায় সমস্যা আছে। তার জন্য দায়ী তোমার বাবা-মা। তারা তোমাকে বেশি আদর দিয়ে নষ্ট করেছেন। ২০০০০ টাকা দিয়ে কক্সবাজার ঘুরে এসেছ, আরেকটু বড় হলে বাইকও পেতে। ওসব বুঝ হয়নি। ভালো হয়েছে তুমি মরেছো। তোমার মতো আরো যারা পাগল আছে তারাও মরে যাক।’

এখানেই শেষ নয়। আহাদের পরিচিতজনেরা আরও ভয়ংকর কথা লিখেছেন। যেমন শিশির সরকার লিখেছেন, ‘নিজের দোষে কেউ সুইসাইড করলে তার প্রতি দুঃখজনক অনুভূতি না আনাই ভালো। আত্মহত্যা কোনো সমস্যার সমাধান হতে পারে না।’ আশরাফ ইভান প্রান্ত লিখেছেন, ‘একটা পোলা যে কিনা জীবনের কিছুই এখনো দেখেনাই, চাইর আঙুল বয়স যার; সে অলরেডি এক্সামের ছুটিতে বাপ থেকে ২০০০০ টাকা নিয়ে কক্সবাজার ঘুরে আসছে, এরপর বাইক না পেয়ে সুইসাইড করছে; এইটা তো পুরাই একটা জোক!’

অন্য খবর  ফিশ কাটলেট তৈরির নিয়ম

তবে সবাই এমন নেতিবাচক কমেন্ট করেছেন তা নয়; অনেকেই এত কম বয়সী একটি ছেলের আত্মহত্যায় শোক জানিয়েছেন। সন্তানের দিকে খেয়াল রাখার জন্য বাবা-মায়ের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন অনেকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সঙ্গদোষে এমন বেপরোয়া জেদ পেয়ে বসে কিশোরদের। কোনো মুভি-নাটক দেখেও এমন জেদ চাপতে পারে। কিন্তু সন্তান এ পর্যায়ে যাওয়ার আগেই তাকে তার চাহিদার সীমানা নির্ধারণ করে শেখাতে হবে। নাহলে এভাবে অনেক মায়ের কোল খালি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিংবা সন্তান জড়িয়ে যায় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে।

আপনার মতামত দিন