ঈদ উপলক্ষে দোহার – নবাবগঞ্জে পরিবহন সেক্টরে চরম নৈরাজ্যঃ প্রশাসনের কথা শোনে না পরিবহন সেক্টর

    817

    জোবায়ের শরিফ, তৌহিদ আহমেদ, সজল রহমান; নিউজ৩৯ঃ ঢাকার দোহার-নবাবগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে দীর্ঘদিন ধরে গণপরিবহনে নৈরাজ্য চলছে। একটি যাত্রীবাহী বাসের সামনে দাঁড়িয়ে ব্যারিকেড সৃষ্টি করছে অন্য বাস। ফলে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারছে না বাসে যাতায়াতকারী জনসাধারণ।আর যাত্রী সাধারণের দাবী এসবে নির্বিকার প্রশাসন, মাঝে মাঝে তারা অভিযান চালালেও তাদের কথা শোনে না পরিবহন সেক্টর। আর এখন ঈদকে সামনে রেখে তা চরম আকার ধারণ করেছে। ঢাকাগামী বাসগুলো প্রথমে ধীর গতিতে চলে, এরপর তারা তীব্র গতিতে প্রতিযোগিতা করতে করতে যায়, এতে সড়ক দূর্ঘটনার প্রবল ঝুকিতে রয়েছে যাত্রী সাধারণ। আর সামনে ঈদ উপলক্ষে ভাড়া বাড়তে পারে কয়েকগুণ।

    ঢাকা থেকে দোহার উপজেলায় দূরত্ব রয়েছে মাত্র ৫৫ কি. মি.। দোহারের মানুষকে শহরে যাতায়াতের জন্য চালু রয়েছে দুটি বাস পরিবহন সার্ভিস। একটি আরাম অন্যটি নগর পরিবহন। এই দুটি পরিবহনের চাপাকলে পিশে মরছে দোহারের শিক্ষার্থী ও সাধারণ যাত্রীগণ।

    এতে বাস মালিকদের দৈনিক টার্গেট পূরণ হলেও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার যাত্রী সাধারণ। বিরতিহীন সিটিং সার্ভিসের নামে চলছে ‘চিটিং’ সার্ভিস। আর এসব পরিবহনে নবাবগঞ্জ থেকে রাজধানীর গুলিস্তান পর্যন্ত মাত্র ৩৭ কিলোমিটার রাস্তা যেতে সময় লাগছে প্রায় আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা। কয়েক যুগের এ সমস্যার জন্য পরিবহন মালিকদের খামখেয়ালিপনা ও প্রশাসনের উদাসীনতাকেই দায়ী করছে স্থানীয় যাত্রীরা। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে চায় নবাবগঞ্জবাসী।

    সরেজমিনে দেখা যায়, বান্দুরা ও দোহারের মিনি কক্সবাজার থেকে এন মল্লিক পরিবহন, যমুনা সার্ভিস ও দ্রুত পরিবহনের বাসগুলো ছেড়ে আসে। এগুলো পাল্লাপাল্লি করে যানজট তৈরি করে রাখছে। এতে মাত্র ৩৭ কি.মি রাস্তায় সময় লাগছে প্রায় আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা। ফলে যাত্রীরা পড়ছেন ভোগান্তিতে। নির্দিষ্ট সময়ে অফিস বা ব্যবসার কাজে যেতে পারছে না।

    ঢাকা-নবাবগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে চলাচলরত যাত্রীবাহী পরিবহন সংস্থার অনেক গাড়ির সঠিক কাগজপত্র নেই। নেই চালকদের সঠিক প্রশিক্ষণ ও গাড়ির ফিটনেস। যাত্রীসেবার নামে পরিচালিত এসব পরিবহনের কোনো জবাবদিহিতার প্রয়োজন মনে করছে না। ঈদকে সামনে রেখে বাস ভাড়া ৪ গুণ বৃদ্ধি করলেও তাদের কিছু যায়-আসে না। শুধু ভোগান্তির কবলে পড়ে পকেট কাটা যায় সাধারণ যাত্রীদের। প্রশাসন মাঝেমধ্যে লোক দেখানো মোবাইলকোর্ট করে তাদের সতর্ক করে দিলেও পরিবহন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ আইন মানছে না বলে অভিযোগ আছে। যাত্রীরা জানায়, বান্দুরা ভায়া নবাবগঞ্জ টু ঢাকা নামের এই সড়কটিতে যানবাহন চলাচলের নামে চলছে এক ধরনের অসম প্রতিযোগিতা। পরিবহনগুলো যাত্রী তোলার নামে যানজট সৃষ্টি করে দীর্ঘ সময় ব্যয় করায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে তাদের। সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারছে না বেশিরভাগ ঢাকাগামী বাসযাত্রী।

    অন্য খবর  দোহার - নবাবগঞ্জে বর্ণিল্ভাবে বিজয় দিবস উদযাপিত

    ঢাকা-নবাবগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে বান্দুরা থেকে এন মল্লিক পরিবহন এবং মৈনট ঘাট থেকে ছেড়ে আসা যমুনা বাস সার্ভিস মাঝিরকান্দা এলাকায় আসার পর কে কার আগে যাবে তা নিয়ে তাদের মধ্যে চলে সড়ক দখলের লড়াই। পরিবহনগুলো পুরো সড়ক দখল করে চলতে থাকে। মাঝিরকান্দা থেকে কেরানীগঞ্জের কদমতলী পর্যন্ত এসব পরিবহন পুরো সড়ক দখলের কারণে পথচারীদের পড়তে হয় নানা সমস্যায়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হতে হয়। এভাবেই দিনভর দাপিয়ে বেড়ায় নবাবগঞ্জ থেকে রাজধানীর গুলিস্তানগামী এসব পরিবহনের বাসগুলো। নিয়মিত ঢাকাগামী যাত্রীদের অভিযোগ, উপজেলা প্রশাসনের মাসিক মিটিংয়ে এ বিষয়টি নিয়ে অনেকবার আলোচনা হলেও কোনো অগ্রগতি নেই। ফলে নবাবগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন স্ট্যান্ডে যাত্রী ওঠানোর নামে যানজট ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করলেও দেখার কেউ নেই। কৈলাইল এলাকার বাসিন্দা বাসযাত্রী মাসুদ পারভেজ বলেন, বান্দুরা থেকে ঢাকা যেতে প্রায় ২ থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় লাগে। টিকিটে ১০০% সিটিং সার্ভিস লেখা থাকলেও এসব পরিবহন যেখানে-সেখানে থেমে থাকেন। এতে করে গুলিস্তান যেতে আমাদের বেশি সময় লাগে। সময়মতো পৌঁছতে না পারায় ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

    নবাবগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের সুপারভাইজার পরিবহন শ্রমিক নেতা আবদুল জলিল বলেন, শুধু বাস নয়, যানজটের জন্য ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, অটোরিকশাগুলোও সমানভাবে দায়ী। যাত্রী কম হওয়াতে বাসগুলো বিভিন্ন জায়গায় দেরি করতে পারে।

    নবাবগঞ্জের বাসিন্দা আহমেদ সোহেল বলেন, যখন ইছামতি ও ধলেশ্বরী নদীতে ফেরি চলাচল করত ঠিক তখনও যে সময় লাগত এখন তার চেয়ে কম লাগে না। বাস চালকদের রাস্তা আটকে অন্য বাসকে যেতে না দেয়ার প্রবণতাই এ জন্য দায়ী। যাত্রীদের এ সমস্যা নিরসনে প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিত।

    ঢাকা-নবাবগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে চলাচলরত এন মল্লিক পরিবহনের চেয়ারম্যান নারগিস মল্লিক বলেন, তার পরিবহনের কোনো সমস্যা নেই। এন মল্লিক যাত্রী ভর্তি থাকলেও যমুনা ও দ্রুত পরিবহন তার গাড়িকে আটকে দিয়ে সময়ক্ষেপণ করায়। এন মল্লিকে কোনো যাত্রী দাঁড়িয়ে নেয়া হয় না।

    নবাবগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) মুহাম্মদ গোলাম নবী শেখ বলেন, আমাদের পুলিশ সদস্যরা যানজট নিরসনে নিয়মিত কাজ করছে। সমস্যার সমাধানে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। বাস মালিকদের আন্তরিকতা না থাকায় মূলত এ সমস্যা হচ্ছে। নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এইচএম সালাউদ্দিন মনজু বলেন, যাত্রীদের ভোগান্তি ও যানজট নিরসনে পদক্ষেপ নেয়া হবে। এ বিষয়ে যাত্রী, চালক ও পরিবহন সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

    অন্য খবর  নবাবগঞ্জের ঐতিহ্য ৪০০ বছরের ভাঙা মসজিদ

    কিছুদিন পূর্বে এ বিষয়ে আলোচনার আয়োজন করে দোহারের শিক্ষার্থী ও সাধারণ যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ কমিটি। উক্ত মিটিংয়ে যে চিহ্নিত কিছু  সমস্যাসমূহ নিয়ে আলোচনা করা হয় তা নিন্মরুপঃ

    ১। যাত্রী ভাড়া সহনীয় পর্যায় নেই।

    ২।নিবন্ধনে সিটিং সার্ভিস থাকলেও, বাস্তবে সিটিং সার্ভিস নাই।

    ৩। নগর পরিবহন আরাম পরিবহনকে আটকিয়ে রাখে,  সাইড দেয় না। এতে সাধারণ মানুষ ভুগান্তির শিকার।

    ৪। জয়পাড়া থেকে মেঘুলা পর্যন্ত বাস চলে পিঁপড়ার গতিতে। নগর আরামকে পথ দেখিয়ে নেয়, যেন মা তার শিশুকে পথ দেখিয়ে নিচ্ছে!

    ৫।পর্যাপ্ত পরিমানে পরিবহন ব্যবস্থা নাই।

    ৬। শিক্ষার্থীদের সাথে ভাড়া নিয়ে দুর্ব্যবহার করে, স্টুডেন্ট ভাড়া দেওয়ায় অপমান ও অসদাচরণ করে।

    ৭। মহিলা, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের  ব্যবস্থা নাই।

    ৮। বাসের সিটে অসহনীয় দুর্গন্ধ, পরিষ্কার থাকে না।

    ৯। ঢাকা যাতায়তে স্টুডেন্টদের জন্য হাপপাশ নেই।

    ১০। সিডিউল মত বাস পাওয়া যায় না।

    ১১। বৃহস্পতিবার এবং উৎসবগুলোতে মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া বাড়ায়।

    ১২। কাউন্টারগুলোতে অযথা লেট করে।

    ১৩। মহিলা এবং শিক্ষার্থী দেখলে বাস থামাতে চায় না।

    এমতাবস্তায় মিটিংয়ে গৃহিত সিদ্ধান্ত ও পরামর্শঃ

    ১। স্থায়ী ভিত্তিতে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ গঠন করতে হবে।

    ২। দোহারের প্রতিটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের অবগত করে তাদেরকে সাথে নিয়ে সমস্যা সমাধান করতে হবে।

    ৩। উপজেলা ভিত্তিক কমিটির মাধ্যমে সবসময় যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ করতে হবে।

    ৪। প্রতিটি স্কুল ও কলেজে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে হবে।

    ৫। দোহারের প্রাণকেন্দ্র জয়পাড়াতে ও শ্রীনগরের বালাশুরে শিক্ষার্থী ও যাত্রীদের নিয়ে মানববন্ধন করতে হবে।

    ৬। যাত্রী অধিকারের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট পরিবহন কর্তৃপক্ষেকে অবহিত করতে হবে।

    ৭। উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও ও প্রশাসনকে সাথে নিয়ে,  তাদের সাথে আলোচনা করে পরিবহন সমস্যা সমাধান করবো।

    ৮। এ বিষয়ে ঢাকা-১( দোহার,নবাবগঞ্জ) আসনের সাংসদ সালমান এফ রহমান, মুন্সিগঞ্জ-১( শ্রীনগর ও সিরাজদিখান) আসনের সাংসদ মাহী বি চৌধুরী, কেরানীগঞ্জের সাংসদ কামরুল ইসলাম ও নসরুল হামিদ বিপুর এবং প্রত্যেকটি উপজেলা চেয়ারম্যানের নিকট স্মারকলিপির অনুলিপি প্রদান করতে হবে।

    ৯। সালমান এফ রহমানের সহয়তা নিয়ে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি প্রদানের মাধ্যমে বিআরটিসি বাস চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।

    আপনার মতামত দিন