ইছামতি নদী, নবাবগঞ্জের প্রাণ, আজ নিথর, স্থবির। এই মরা নদী আজও ইতিহাসের গল্প বলে, তারই কিছু শুনব বলে।

“পশ্চিম ঢাকার নদীসমূহের মধ্যে ইছামতিই সর্বাপেক্ষা প্রাচীন। মি. এ.সি. সেনের রিপোর্ট অনুযায়ী জানা যায়, এই নদী জাফরগঞ্জের দক্ষিণে হুরা সাগরের মোহনার বিপরীত দিকে নাতপুরের ফ্যাক্টরির নিকট হতে উৎপন্ন হয়ে মুন্সীগঞ্জের সন্নিকটবর্তী যোগিনীঘাট পর্যন্ত বিস্তৃত। জাফরগঞ্জের উত্তরে ইছামতীর প্রবাহ নির্ণয় করা খুবই দুরূহ ব্যাপার।

মেজর রেনেলের জরিপের সময় গঙ্গানদী জাফরগঞ্জের নিকট দিয়েই প্রবাহিত হতো। ধলেশ্বরী তখন গঙ্গানদীর শাখানদী বলেই পরিচিত ছিল। এর প্রাচীন নাম ছিল গজঘাটা। এ প্রাবাহ এখন প্রায় শুষ্ক হয়ে গিয়েছে। এই নদীর উত্তরে একটা ক্ষুদ্র স্রোতস্বতী করতোয়া হতে বহির্গত হয়ে দিনাজপুরের মধ্য দিয়ে এসে ঢাকার ইছামতী নদী যে স্থানে শেষ হয়েছে, তার ঠিক বিপরীত দিকে ধলেশ্বরীর সাথে মিলিত হয়েছে। মেজর রেনেল তদীয় মানচিত্রে যেভাবে এ নদীকে অঙ্কিত করেছেন, তাহাতে স্পষ্টই প্রতীয়মান হয় যে, ঢাকার ইছামতী ও দিনাজপুরের ইছামতী অভিন্ন। করতোয়ার একটা শাখানদীই দিনাজপুরের মধ্য দিয়ে জাফরগঞ্জ হয়ে ব্রহ্মপুত্রের সাথে মিলিত হয়েছে। ধলেশ্বরী নদী পরে উদ্ভুত হয়ে ইছামতীর মধ্য দিয়ে প্রাবহিত হয়ে উৎপত্তিস্থান হতে একে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। কার্তিকী পৌর্ণামাসিতে হিন্দুগণ করতোয়া নদীতে তীর্থস্থান করে থাকেন ঠিক ঐদিনেই পূর্ববঙ্গের নর-নারী ইছামতীর পঞ্চতীর্থঘাটে স্নান করিয়া পবিত্রতা লাভ করিয়া থাকেন। ইহা হতেও হৃদঙ্গম হয় যে, ঢাকার ইছামতী নদী পূন্যতোয়া-করতোয়া নদীরই একটা শাখা নদী।“
– ইছামতী, যতীন্দ্রমোহন রায়

অন্য খবর  মানুষের ঘরে ঘরে আমার উন্নয়নবার্তা পৌঁছে দিনঃ সালমা ইসলাম

ইছামতির দুটো উৎসমুখ ছিল, একটি কাশিয়াখালি/সোনাবাজুতে, অপরটি কার্তিকপুর বাজারের পাশে। দুটো মুখ এসে মিলিত হয়েছে বান্দুরায়, সেখানে একটি ত্রিমোহনী সৃষ্টি করেছে। এর মধ্যে কার্তিকপুর শাখাটি কৃত্তিম। গত শতকের শুরুতে বিশেষ প্রয়োজনে খাল কেটে পদ্মার সাথে সংযোগ করা হয়েছিল, পরে আবার কার্তিকপুর বাজারের ভেতর দিয়ে যাওয়া রাস্তা সেই মুখটি বন্ধ করে দেয়। এরপর ১৯৯৯ সালের দিকে পদ্মার প্রবল ভাঙনে নবাবগঞ্জের পশ্চিমাঞ্চ বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশংকায় ১৪ কিলোমিটার বাঁধ দেয়া হয়, যেটি সোনাবাজু বেরিবাধ বা কাশিয়াখালি বেরিবাধ নামে পরিচিত। বাধটি ইছামতির এই মুখটিও একেবারে বন্ধ করে দেয়। ইছামতি উৎস হারিয়ে হ্রদে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে নদীতে পানি আসে সাবখালি-হযরতপুর খাল সহ আরও কিছু খালের মাধ্যমে।

আপনার মতামত দিন